Anirban Bhattacharya

‘আমার পরের অভিনয় রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান’, শাসককে অনির্বাণ-চ্যালেঞ্জ!

রাজনীতি শিল্পসৃষ্টির অন্তরায় হলে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছেন অনির্বাণ। ভোট-রাজনীতিতে কাজে আসে না এমন নাট্যশিল্পীদের গায়ে হাত তুলছে শাসকদল? তীব্র ভর্ৎসনা অভিনেতার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৩৬
Share:

নিজের নাটকের শোতেও এসে মেরে যাওয়ার খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিনেতা। ফাইল চিত্র

ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে শাহরুখ খান বা অমিতাভ বচ্চন না হলে অভিনেতাদের পাত্তা দেওয়া হবে না? সম্প্রতি নাট্যকর্মী তথা অভিনেতা অমিত সাহাকে প্রহারের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানালেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এই প্রথম সরাসরি শাসকদলের বিরুদ্ধে স্বর তুলতে দেখা গেল তাঁকে। সমাজমাধ্যমে এক সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, “ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে!”

Advertisement

অমিতকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। গত ২৩ ডিসেম্বর বেলেঘাটার পার্টি অফিসে নাট্যোৎসব করার আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন অভিনেতা তথা ‘বিদূষক নাট্যমণ্ডলী’র নাট্য পরিচালক অমিত এবং তাঁর দলের সহকর্মী। তখনই অমিতকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। সেই ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন একাধিক নাট্যব্যক্তিত্ব-সহ টলিউডের পরিচালক এবং অভিনেতারাও। ২৮ ডিসেম্বর প্রতিবাদী সভায় গিয়েও মুখ খুলেছেন অনেকে। অনির্বাণ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করলেন সমাজমাধ্যমেই। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’-র পরিচালক লিখেছেন, “আমি প্রতিবাদ করছি, আরও অনেকের সঙ্গে, এটা জেনেই, যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যার গায়ে হাত উঠেছে, তার গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তার সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন।”

‘লুটেরা’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘ভটভটি’-সহ বহু ছবিতে চেনা মুখ অমিত। পাশাপাশি নিজের নাট্যদলে মন-প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন তিনি। গত ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর একটি নাট্যমেলার আয়োজন করেছিলেন অমিত বেলেঘাটার একটি মাঠে। কিন্তু তার আগেই কিছু রাজনৈতিক নেতা তাঁকে মারধর করে নাট্যোৎসব বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনা জানাজানি হলে সমাজমাধ্যমে শোরগোল পড়ে। অমিতের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন সহকর্মী তথা টলিউডের অভিনেতা এবং পরিচালকরাও। ২৮ ডিসেম্বর বেলেঘাটার রাসমেলা মাঠে আয়োজিত সভাতেও গিয়েছিলেন অভিনয় জগতের অনেকেই। তবে শুটিং থাকায় আসতে না-পারা অনির্বাণ তাঁর বক্তব্য লিখে দেন ফেসবুকে।

Advertisement

তাঁর কথায়, “আমি আজ বেলেঘাটাতেই শুটিং করছি, কিন্তু খুবই টাইট শিডিউল থাকায় সভাতে উপস্থিত থাকতে পারছি না। কিন্তু আমি এই সভায় উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম, কারণ গায়ে হাত উঠেছে। নিশ্চয়ই আগেও উঠেছে, অভিনেতার গায়ে, নাট্যকর্মীর গায়ে। সুদূর বা অদূর ইতিহাসে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমার জানার মধ্যে এই প্রথম হাত উঠেছে।”

গত ২৩ ডিসেম্বর বেলেঘাটার পার্টি অফিসে নাট্যোৎসব করার আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন অভিনেতা তথা ‘বিদূষক নাট্যমণ্ডলী’র নাট্য পরিচালক অমিত। ফাইল চিত্র

শিল্পীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে অনির্বাণ আরও লেখেন, “কে জানে হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে এক দিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন (অভিযুক্ত), দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এ রকম কিছুই হয়তো হবে। আমি এই ঘটনাকে বুঝে নিতে চাইছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।”

এর পরই তিনি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রসঙ্গ তোলেন। কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে যে মঞ্চে কিছু দিন আগেই বক্তব্য রেখে গিয়েছেন শাহরুখ-অমিতাভরা। অনির্বাণ লেখেন, “আজ থেকে ১২ দিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাক্‌স্বাধীনতার সপক্ষে বক্তৃতা করে গিয়েছেন। শাহরুখ খান সোশ্যাল মিডিয়ার ঘৃণাবাহিনীকে এক হাত নিয়েছেন, সারা ভারতে মুক্তমনা মানুষ হাততালি দিয়ে উঠেছেন।

সে দিন যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন। তার কিছু দিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন? কারণ অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না। অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন।”

বাংলার রাজনীতিই যদি শিল্প সৃষ্টির অন্তরায় হয়, সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছেন অনির্বাণ। নিজেকে তিনি সবার আগে থিয়েটারকর্মী বলেই মনে করেন। তাই আর এক থিয়েটারকর্মীর প্রতি এই ‘অন্যায়’ মেনে নেবেন না বলে জানান। অনির্বাণের দাবি, “চলুন, আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই।’’

সকলকে আহ্বান জানিয়ে লিখলেন, “আসুন, প্রতিটি অঞ্চলের পার্টি অফিসে আমরা আবেদনপত্র জমা দিই আমাদের নাটক অভিনয়ের দিন ও স্থান সমেত, আমাদের যেন এসে বেদম মার দেওয়া হয়, যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাড়ে হাড়ে যে ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান না হলে বেশি লাফাতে নেই।”

নিজের নাটকের শোতেও এসে মেরে যাওয়ার খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিনেতা। লিখলেন, “অখ্যাত, বিখ্যাত, নামী, অনামী সব অভিনেতা চলুন একযোগে মার খাওয়ার আবেদন জানাই। আমি অনির্বাণ। আমার এর পরের অভিনয় ১৫ জানুয়ারি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement