অভিষেককে নিয়ে লিখলেন চন্দন
আমার থেকে এক বছরের ছোট ছিল মিঠু (অভিষেক চট্টোপাধ্যায়)। ওর মতো প্রাণখোলা ছেলের সংখ্যা কম। মিঠুকে কখনও মুখ গোমড়া করতে দেখিনি। যা-ই হয়ে যাক না কেন। আসলে ওর সঙ্গে আমার আলাপ তো ‘খড়কুটো’-এ অভিনয় করতে এসে নয়। বহু বছর আগে থেকেই ওকে চিনি। প্রভাত রায়ের ‘লাঠি’ ছবির সেটে প্রথম অন্তরঙ্গতা বাড়ে। কিন্তু প্রতি দিনের দেখা সাক্ষাৎ শুরু হল ‘ইচ্ছেনদী’ ধারাবাহিকের সময়ে।
সেটে সবাইকে আনন্দে রাখত। সরস বাক্যের অভাব ছিল না ওর কাছে। আরও একটি বড় গুণ ছিল মিঠুর। নতুন ছেলেমেয়েরা অভিনয় করতে এলে তাদের কখনও জুনিয়র হিসেবে দেখত না। সবার সঙ্গে একই ভাবে মস্করা করত। যদিও প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গে কখনও ঠাট্টা করতে দেখিনি ওকে। পরিমিতি বোধ অসামান্য।
পরশু (মঙ্গলবার) দিন শ্যুটিংয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আমরা ফ্লোরে অপেক্ষা করছিলাম। সবাই ভাবছিল, মিঠু কই, মিঠু কই? মেকআপ রুম থেকে ডেকে আনতে যান দুলালদা (লাহিড়ি)। তখনই বলে যে, অসুস্থ লাগছে। বমি করে। ঘামতে থাকে। দুলালদা অনেক ক্ষণ ধরে সেবা করেন। আমরা ভাবলাম, ভীষণ অম্বল হয়েছে বোধ হয়। মিঠুকে তার পর বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এমনিতেই ট্রাই গ্লিসারিড বেড়ে যাওয়ার ফলে পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছিল ওর। তার উপরে খাবার থেকে বিষক্রিয়া হয়েছিল। এর মাঝেও নিজের অসুস্থতা নিয়ে ঠাট্টা মস্করায় ইতি টানেনি। এমনই ছিল আমাদের মিঠু।
আমার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আড্ডা হত। রাজনৈতিক, সামাজিক। তবে আমি যে ভাবে সব জায়গায় রাজনৈতিক আলোচনা করতে বসে যাই, ও সেটা করত না। মিঠুর মাথায় থাকত যে, সেটে তৃণা (গুনগুন) এবং কৌশিক (সৌজন্য) আছে। ওরা এক জন তৃণমূল, এক জন বিজেপি। তাই খুব বেশি কিছু বলত না সামনে। কিন্তু আমার কাছে দুঃখ করত, ‘‘আমার মেয়েটা এ কী সমাজে বড় হচ্ছে? হ্যাঁ, রাজনৈতিক টানাপড়েন আমাদের সময়ও ছিল। কিন্তু মানবিকতাটুকু ছিল। এখন কোথায় বাস করছি আমরা!’’ খুব বিরক্ত ছিল আশপাশের ঘটনা নিয়ে।
ফ্লোরে যেতে খুবই মন খারাপ লাগবে আমার। ওকে যে দেখতে পাব না আর!