বন্ধু অভিষেকের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না পল্লবী।
কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। রত্না চট্টোপাধ্যায়ের তিন ছেলে। বুম্বাদা তো নিজের দাদা। কৌশিকদাও বড়। সুতরাং, দাদা। তুলনায় বয়সে কাছাকাছি মিঠু অর্থাৎ অভিষেক। ব্যস, বন্ধুত্ব হতে বেশি সময় লাগেনি। চূড়ান্ত প্রাণবন্ত। সারা ক্ষণ হুল্লোড়, হা-হা, হি-হি। পারিবারিক সেই বন্ধুত্বের ছায়া স্বাভাবিক ভাবেই পর্দাতেও। আমারও অল্পবয়স, মিঠুরও। আমাদের নিয়ে জুটি তৈরি করছেন পরিচালকেরা। দর্শক ভাবছেন, আমাদের মধ্যে তুমুল প্রেম!
সেই সময় আনন্দলোক পত্রিকায় একটি গসিপ কলাম ছিল, গুঞ্জন। সেখানে আমার আর অভিষেকের বিয়েই দিয়ে ফেলল! কী বলব? আমরাও তো দুষ্টু ছিলাম! পরিচালকেরা আমাদের দুষ্টুমির চোটে তটস্থ হয়ে থাকতেন। প্রভাত রায় বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘আর তোদের জুটি করে ছবি বানাব না। তোদের ভয়ে সারা ক্ষণ কাঁটা হয়ে থাকি।’’ বাকি পরিচালকদেরও একই অবস্থা করে ছেড়েছিলাম আমরা। সেই মানুষটা নেই! আমার দুষ্টুমির সঙ্গী অসময়ে ছুটি নিয়ে নিল।
আদ্যন্ত ভাল মানুষ। মনে, মুখে, মাথায় এক। যা সাধারণত দেখা যায় না। খাওয়াতে খুবই ভালবাসত। নিজে কিন্তু মেপে খেত। সুন্দর দেখতে ছিল। তার উপরে নায়ক। শরীরটাকে তো ঠিক রাখতে হবে! অসংখ্য মহিলা অনুরাগী। মাচায় গেলেই তাঁরা প্রায় হামলে পড়তেন ওর উপরে। একটু ছোঁবেন তাঁরা। কাছ থেকে দেখবেন মিঠুদাকে। আর আমাদের একটাই প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন, ‘‘দু’জনের পদবিই চট্টোপাধ্যায়। আপনারা স্বামী-স্ত্রী?’’ বলে বোঝাতে পারতাম না কাউকে, মিঠুদা আমার মায়ের খুব প্রিয়। আমি প্রিয় ছিলাম মিঠুদার মা-বাবার কাছে। এই প্রজন্মের ভাষায়, দু’জনেই সিঙ্গল! ফলে, বিয়েতে কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু সেই ভাবনাটাই আমাদের আসেনি কোনও দিন।
এক জন পুরুষ আর এক জন নারী তথাকথিত বিয়ে, প্রেমের ঊর্ধ্বে উঠে খুব ভাল বন্ধুও হতে পারে। আমরা ছিলাম তাই। দুষ্টুমির সঙ্গী। আড্ডা দেওয়ার সঙ্গী। কফি খেতে যাওয়ার সঙ্গী। পার্টিতে একা একা না গিয়ে একসঙ্গে যাওয়ার সঙ্গী। আমার মা মিঠুদার উপরে খুব ভরসা করতেন। তাই মিঠুদা নিয়ে গেলে কোনও দিন আপত্তি করেননি। আপত্তি করার মতো কিছু খুঁজে পাননি বলেই। আমরা পরস্পরের খুব কাছাকাছি ছিলাম। সেই মিঠুদাকে নিয়ে আজ আমায় বলতে হচ্ছে!
শেষ মুহূর্তেও এ ভাবে আমার সঙ্গে দুষ্টুমি করে গেলে তুমি?