পারিবারিক সম্পত্তি, নাম সবই ছিল তাঁর কাছে। ধর্মেন্দ্র, সানি দেওলের মতো বড়ো অভিনেতাদের সঙ্গে নিত্য ওঠাবসাও ছিল। তিনি নিজেও ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান। তা সত্ত্বেও বলিউডে তেমন প্রভাব ফেলতে পারলেন না।
তাঁর অভিনীত ‘দেব ডি’ ছবির মতো বাস্তবেও এক অভিনেত্রীর প্রেমে পড়ে ‘দেবদাস’ হয়েই রয়ে গেলেন।
তিনি দেওল পরিবারের ছোট ছেলে অভয়। ধর্মেন্দ্র, সানি, ববির মতো অভিনয়ে অভয়ও অত্যন্ত পারদর্শী। বক্স অফিসে হাতেগোনা কয়েকটি সফল ছবি দিয়ে তাঁর দক্ষতা পরিমাপ করাটা ঠিক নয় বলেই মনে করেন সিনেবোদ্ধারা।
অভয় আসলে সব সময়ই ভিন্ন ঘরানার ছবি করতে চেয়েছিলেন। তিনি যে সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন সেই সময়ে ওই ধরনের ছবি সে ভাবে পছন্দ করতেন না দর্শক।
‘এক চালিশ কি লাস্ট লোকাল’, ‘দেব ডি’, ‘রঞ্জনা’ -তারই কয়েকটি উদাহরণ। এখনও পর্যন্ত তাঁর অভিনয় নিয়ে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলতে পারেননি।
আবার উল্টো দিকে এটাও ঠিক যে, তাঁর জীবনে ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’-র মতো সুপারহিট ছবিও হাতেগোনা।
২০১০ সালে সোনম কপূরের সঙ্গে ‘আয়শা’ ছবি করেছিলেন তিনি। সেই ছবির পর স্পষ্টবক্তা অভয়ের কেরিয়ার আরও তলানিতে যেতে শুরু করেছিল। কারণ ওই ছবির পর তিনি এমন কিছু কথা বলেছিলেন যার ফলে অনিল কপূরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।
অভয়ের অভিযোগ ছিল, অনিল কপূর তাঁর মেয়ের পোশাক এবং মেক আপের পিছনে সিংহভাগ বাজেট নষ্ট করেছিলেন। তাঁর মতে, ছবিটি যেন সোনমের ফ্যাশন শো হয়ে গিয়েছিল। ছবির জন্য অভয় মাত্র ২০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। অভয়ের দাবি, তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়েছিল সোনমকে সাজাতে।
এর পর আর কোনও দিন সোনমের সঙ্গে ছবি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে ২০১৩-র ছবি ‘রঞ্জনা’-তে ফের একসঙ্গে দু’জনকে দেখা গিয়েছিল।
বহু দিন পর অভয়ের কোনও ছবি বক্স অফিসে সফল হয়। ‘রঞ্জনা’ সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু তত দিনে ইন্ডাস্ট্রি আরও অনেক ভাল অভিনেতাও পেয়ে গিয়েছিল। ফলে এই সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি অভয়।
অভিনয় ছেড়ে এ বার প্রযোজনার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন অভয়। নিজের একটি প্রযোজনা সংস্থাও খুলে ফেলেন তিনি। অভয় জানতেন না কেরিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময় আসা তখনও বাকি ছিল।
ওই সময়ে অভয়ের জীবনে অভিনেত্রী প্রীতি দেসাইয়ের প্রবেশ ঘটে। প্রীতি তখনও অভিনেত্রী হয়ে ওঠেননি। কাজ পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করছিলেন।
পরিচয়ের পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অভয়ের ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন প্রীতি। প্রীতিকে প্রথম ছবি অভয়ই দিয়েছিলেন। তাঁর প্রযোজনা সংস্থার ‘ওয়ান বাই টু’ ছবি দিয়ে ২০১৪ সালে প্রীতির অভিষেক হয়।
এই ছবির বাজেট ছিল আট কোটি টাকা। প্রেমিকার অভিষেকের জন্য মুম্বইয়ের জুহুর ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে চার কোটি টাকা ছবির জন্য দিয়েছিলেন অভয়।
বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ছবিটি। নিজের সমস্ত সঞ্চয় এই ছবি করতে গিয়েই খুইয়ে ফেলেছিলেন অভয়।
অথচ যাঁকে লঞ্চ করার জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলেন, সেই সম্পর্কও টিকিয়ে রাখতে পারেননি। এর দু’বছরের মাথায় অভয়-প্রীতির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাঁরা লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন।
কেরিয়ারে চোট পেয়েছেন বার বার। কিন্তু অভয় হাল ছাড়ার পাত্র নন। তাই কোনও বড় ব্যানারের ছাতার তলায় না থাকা সত্ত্বেও তিনি কিন্তু নিজেকে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকিয়ে রেখেছেন। ‘হোয়াট আর দ্য অডস’, ‘লাইন অব ডিসেন্ট’, ‘হিরো’ তাঁর সাম্প্রতিক কালের কিছু ছবি।