সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
জন্মদিন উপলক্ষে সাক্ষাৎকারে তিনি রাজি। ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বার করলেন। সাক্ষাৎকার দিতে বসে টেবিলে ফোন ছাড়াও রাখলেন দু’টি ডায়েরি আর পেন। জিজ্ঞাসা করতেই হেসে বললেন, ‘‘সারা দিনে কী কী কাজ করব, এখন সব লিখে রাখি।’’ জন্মদিনের প্রাক্কালে মধ্য কলকাতার এক হোটেলের কফি শপে আনন্দবাজার অনলাইনের রেকর্ডারের সামনে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: এখন তো কাজের ব্যস্ততা রয়েছে। জন্মদিনগুলো কী ভাবে কাটে?
সায়ন্তিকা: বছরের অন্যান্য দিনের মতোই কাটে। কলকাতায় থাকলে আগের দিন রাতে মা-বাবা এবং আমার টিমের সদস্যেরা কেক নিয়ে হাজির হয়। পরের দিন জিম করি, পুজো দিই। আসলে জন্মদিনে কাজ থাকলে আমি বেশি খুশি হই। অনেক বার শুটিংয়ের মধ্যেই জন্মদিন কেটেছে। যেমন মনে পড়ছে ‘অভিমান’ ছবির শুটিংয়ে আমরা তখন ইটালিতে। সেটেই রাজদা (পরিচালক রাজ চক্রবর্তী) এবং শুভশ্রী আমার জন্মদিন পালন করেছিল।
প্রশ্ন: ছেলেবেলায় তো নিশ্চয়ই বাড়িতে আপনার জন্মদিনে ধুমধাম হত?
সায়ন্তিকা: বাবা-মা বন্ধুদের ডাকতেন। একটা ছোট্ট পার্টি রাখা হত। সোনু নিগমের গান চালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নাচ! জন্মদিনে মোড়ক খুলে উপহার বার করা। এখন ওই দিনগুলো খুব মনে পড়ে।
প্রশ্ন: জন্মদিনে অনেকেই তো শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু টলিউড এবং বলিউড থেকে দু’জন ব্যক্তিত্বের নাম করুন , যাঁরা আপনাকে উপহার পাঠালে খুশি হবেন।
সায়ন্তিকা: টলিউড থেকে বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) এবং জিৎদা। আর বলিউডে তো এক জনই আছেন— শাহরুখ খান। (হাসতে হাসতে) ছোটবেলাতেই ওঁকে মনে মনে বিয়ে করে ফেলেছি।
প্রশ্ন: এই বছর জন্মদিনে কী পরিকল্পনা?
সায়ন্তিকা: এখনও কোনও পরিকল্পনা নেই। মনে হচ্ছে, বাঁকুড়ায় থাকব। এখনও পর্যন্ত কোনও বছর জন্মদিনে বাঁকুড়ায় থাকিনি। তাই নতুন অভিজ্ঞতা হবে।
প্রশ্ন: গত কয়েক বছরে টলিপাড়ার সঙ্গে আপনার একটা ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এর নেপথ্যে কি কোনও ক্ষোভ কাজ করছে?
সায়ন্তিকা: এই ‘অনেকে’টা কারা? মানুষ ভাবতেই পারেন। কিন্তু ভাবনা আর বাস্তবের মধ্যে তো পার্থক্য আছে। কোনও দিনই বছরে চারটে-পাঁচটা ছবি করার লক্ষ্য ছিল না। আবার রাজি হইনি, এ রকম ছবির সংখ্যাও প্রচুর। কারণ, আমি জীবনে সমতা বজায় রেখে চলায় বিশ্বাসী।
প্রশ্ন: তার মানে ইন্ডাস্ট্রির প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করেন না?
সায়ন্তিকা: একদম নয়। কে বেশি প্রচার পাচ্ছে বা কার ছবির সংখ্যা বাড়ল, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে আমি অন্তত রাজি নই। আমি নিজের গতিতেই স্বচ্ছন্দ। তাতে কেউ যদি মনে করেন যে আমার আর জনপ্রিয়তা নেই বা আমার হাতে কাজ নেই, তা হলে নেই!
প্রশ্ন: আপনি টলিউডে আরও এগিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ‘লবি’ নাকি সেটা হতে দেয়নি। তাই কি?
সায়ন্তিকা: আংশিক ঠিক। আবার আংশিক ভুল। দেখুন, স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ভাল। কিন্তু কাউকে আঘাত করে বা অপমান করে এগোতে চাই না। পরিশ্রম করে রেস জেতা যায়। আবার কাউকে পিছনে টেনে নিয়েও নিজে এগিয়ে যাওয়া যায়। অনেকেই সেটা করে। কিন্তু আমি সেটায় বিশ্বাসী নই। দেখুন, আমিও তো এক জন মানুষ। অনেক ছবি বা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র দেখে আমারও মনে হয়েছে যে, এটা তো আমিও পেতে পারতাম। তার জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না।
প্রশ্ন: বাণিজ্যিক ছবির নায়িকাদের প্রতি অন্য ধারার ছবির পরিচালকেরা কি একটু বেশি উন্নাসিক?
সায়ন্তিকা: আমি কোনও ঘরানার কথা বলতে চাই না। তবে শুনেছি, ইন্ডাস্ট্রিতে এ রকম একটা মত রয়েছে যে, ‘‘বাণিজ্যিক ছবিতে আবার অভিনয় করতে হয় নাকি!’’ আমার মতে, সুযোগটা প্রত্যেককেই দেওয়া উচিত। অডিশন নেওয়া হোক। তার পর বিচার হোক সে পারবে, কি পারবে না। হয়তো অনেক সময় সেই সুযোগটাই অভিনেতাদের দেওয়া হয় না।
প্রশ্ন: এখন তো অনেকেই ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করছেন। আপনার ইচ্ছে নেই?
সায়ন্তিকা: প্রস্তাব তো আসতেই থাকে। কিন্তু চরিত্র পছন্দ হচ্ছে না। গোয়েন্দা সিরিজ় বা কোনও থ্রিলার করতে চাই। দেখা যাক কী হয়। এখনও সময় আছে। তাড়াহুড়ো করতে চাই না।
প্রশ্ন: যাঁরা বলেন যে হাতে কাজ নেই বলেই আপনি সক্রিয় রাজনীতিতে এলেন, তাঁদের কিছু বলতে চান?
সায়ন্তিকা: আমার তাতে কী লাভ? আমার বাড়ির বিদ্যুতের বিল, গাড়ির ঋণ, বাকি খরচ কি চলবে? প্যাশনকে পেশা বানিয়েছি। তাই উপার্জন না করলে পরিবারকে দেখব কী ভাবে? বরং নির্বাচিত বিধায়ক হলে অবশ্যই আমি একটা মাসিক বেতন পেতাম। কিন্তু আমি তো এখন দলের সাংগঠনিক কাজ করছি। তা হলে?
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনি আগেও বলেছেন যে, কোনও দিন রাজনীতিতে আসবেন ভাবেননি।
সায়ন্তিকা: সত্যিই কোনও দিন ভাবিনি। স্নাতক স্তরে আমার বিষয় ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। কিন্তু বইয়ের পাতায় রাজনীতি আর ময়দানে নামার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমি ভেবেছিলাম, আমাকে এক বেলায় উড়িয়ে দেবে। কারণ, আমি খুবই স্পষ্ট কথা বলি। কিন্তু কপালে লেখা ছিল।
প্রশ্ন: গত বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ায় মাত্র ৭৩৫ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। খারাপ লাগে?
সায়ন্তিকা: আমার জীবনের অন্যতম দুঃখের একটা দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। (কিছু ক্ষণ চুপ থাকার পর) এক ভোটে জেতা আর এক লক্ষ ভোটে জেতা— মানুষ জয়ীকেই মনে রাখেন। কে কত ভোটে হেরে গিয়েছিল, তাঁকে কেউ মনে রাখেন না। তাই খারাপ তো লাগেই।
প্রশ্ন: ভোটে জেতা বা হারার পর অনেক বিধায়কের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে, তাঁরা নিজের কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। কিন্তু সেখানে সমাজমাধ্যমে ‘পাশে আছি বাঁকুড়া’ হ্যাশট্যাগ তো চর্চায়।
সায়ন্তিকা: ধন্যবাদ (হাসি)। আসলে নতুন কিছু যদি আমার না জানা থাকে, তা হলে আমি সেটা পরিশ্রম করে জানার চেষ্টা করি। রাজনীতির প্রতি এখন আমার একটা ভাল লাগা তৈরি হয়েছে। উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: হেরে গিয়েছিলেন বলেই কি নিজের মধ্যে আরও জেদ চেপে বসেছে?
সায়ন্তিকা: আমার প্রশ্ন ছিল, আমি কেন হারব? আমি তো বাঁকুড়ার মানুষ নই। জনগণ দেখছেন নায়িকা এসেছে ভোট চাইতে। হাত নেড়ে চলে যাবে! আমি সেই ধারণাটাই ভাঙতে চাই। প্রথম দিন বাঁকুড়ার মানুষকে যা কথা দিয়েছি, নিজের কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করে মানুষের ধারণা বদলে দেবই।
প্রশ্ন: দু’বছর কেটেছে। কী মনে হচ্ছে, বাঁকুড়ার মানুষের ধারণা কতটা বদলাতে পেরেছেন?
সায়ন্তিকা: সেটা সংবাদমাধ্যমের কাজ। আমি নিজে কেন বলব! বাঁকুড়ার মানুষ নিশ্চয়ই উত্তর দেবেন।
প্রশ্ন: কী মনে হচ্ছে, পরের বার জয় নিশ্চিত?
সায়ন্তিকা: আমি যবে থেকে কাজ করছি, তার পর আগের বারের তুলনায় ভাল ফল না হলে সেটা আমার লোকসান। কারণ, রাজনীতি আমার কাছে ‘অ্যাসিড টেস্ট’-এর মতো। হেরে যাওয়া মানে তো আমি দু’বছর নষ্ট করলাম। বিধানসভার পর পুরসভা এবং পঞ্চায়েত, দুটো নির্বাচনেই কিন্তু বাঁকুড়ায় আমাদের ভোটের মার্জিন বেড়েছে।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, আগামী বছর লোকসভা ভোটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তারকা প্রার্থীদের চাইছেন না।
সায়ন্তিকা: আমি জানি না। আমি এখন দলের এক জন কর্মী। তারকা কি না জানি না! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আমাকে দলের কর্মী হিসাবেই দায়িত্ব দেন। আমার কাজ সেটা পালন করা।
প্রশ্ন: ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে এখন নুসরত জাহান বিতর্কে। ওঁর সঙ্গে এর মধ্যে কোনও কথা হয়েছে?
সায়ন্তিকা: আমরা দু’জনেই কাজে ব্যস্ত। কথা হয়নি।
প্রশ্ন: আপনার দলের একাধিক সতীর্থের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’-র অভিযোগ। এ দিকে আপনি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। খারাপ লাগে?
সায়ন্তিকা: খারাপ তো লাগেই। কিন্তু ওই যে বললাম, এগিয়ে থাকার জন্য কেউ কেউ প্রতিপক্ষেকে পিছনে টানার চেষ্টা করেন। যেটা সত্য, সেটাই সামনে আসবে। আর কেউ যদি অন্যায় করেন, তিনি ঠিক শাস্তি পাবেন। আমার টিমের কোনও সদস্য যদি অন্যায় করেন, আমি কিন্তু সকলের সামনে তাঁর দোষটা ধরিয়ে দিই। কিন্তু বাইরের কেউ খারাপ ভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বললে আমি সেটা মেনে নিই না।
প্রশ্ন: জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে অভিনয় এবং রাজনীতির মধ্যে কোনও একটিকে বেছে নিতে বললে কী করবেন?
সায়ন্তিকা: আমি তো একজন শিল্পী। আমার কাছে অভিনয় সব সময়ই প্রথম ভালবাসার মতো, ছাড়তে পারব না। তবে এখন রাজনীতিতেও আমার আসক্তি জন্মেছে।
প্রশ্ন: রাজনীতিকদের কাছে তো প্রতি দিন সাহায্য চেয়ে অজস্র ফোন আসে। সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন?
সায়ন্তিকা: মিথ্যা বলব না। সকলকে সাহায্য করতে পারি না। তবে চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: আপনি কি কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন?
সায়ন্তিকা: কোনও কিছু ভাল হলে তখন সেই জিনিসটা আরও বেশি করে বিশ্বাস করি। যেমন বাঁকুড়ায় গেলে যে বাংলোর ঘরে প্রথম থাকি, এখনও সেখানেই থাকার চেষ্টা করি। একদম ওই ক্রিকেট ম্যাচ দেখার সময় উইকেট পড়া বা ছয় মারার মতো। কারও সঙ্গে হয়তো কথা বলতে বলতে একটা ভাল ফোন এল। যত ক্ষণ না কাজটা হচ্ছে, তাঁকে হয়তো চেয়ার ছেড়ে উঠতেই দেব না (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনি নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্যে থাকেন। এই স্বভাবটা কি আপনার বাবার (গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়) থেকে পেয়েছেন?
সায়ন্তিকা: কিছুটা তো বটেই। ছোট থেকেই দেখতাম, শরীরচর্চা না করলে বাবার মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। আমি আবাক হয়ে যেতাম। পরবর্তী সময় নিজে শরীরচর্চার মধ্যে থেকে বিষয়টা বুঝতে পারি। কাজের পর ভোরে বাড়ি ফিরলেও আমি ঘুমোই না। সোজা জিমে চলে যাই। শরীরচর্চা আমাদের দু’জনের কাছেই একটা ‘মাদক’-এর মতো। এ রকম জিনিসে আসক্তি মন্দ নয়।
প্রশ্ন: এখন তো টলিউডে সৌন্দর্য বাড়াতে অভিনেত্রীদের বিভিন্ন অস্ত্রোপচার নিয়ে খুব কথা হয়। আপনি বিষয়টাকে সমর্থন করেন?
সায়ন্তিকা: কেউ যদি মনে করেন যে, এই পদ্ধতিতে তাঁকে আরও সুন্দর লাগবে, তা হলে করাতেই পারেন। আমার প্রশ্ন অন্যত্র। অস্ত্রোপচার তো তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। খরচও তাঁর নিজের। তা হলে বাকিদের অসুবিধা কোথায়!
প্রশ্ন: অভিনয়, রাজনীতির বাইরে বাড়িতে সময় কাটে কী ভাবে?
সায়ন্তিকা: বাড়িতে তিনটে বাচ্চা (পোষ্য) আছে। মা-বাবা রয়েছেন। শরীরচর্চা রয়েছে, গিটার বাজানো, নাচ, গান শোনা, বই পড়া। সময় ঠিকই কেটে যায়।
প্রশ্ন: সায়ন্তিকা কি এখন ‘সিঙ্গল’?
সায়ন্তিকা: (হেসে) ভাল প্রশ্ন। হ্যাঁ, আমি সিঙ্গল এবং সম্পর্কে জড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু কার সঙ্গে প্রেম করব, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না (হাসি)।
প্রশ্ন: পরিবারের তরফে বিয়ের জন্য চাপ আসে না?
সায়ন্তিকা: (হাসতে হাসতে) আমি তো মজা করে বাবা-মাকে বলি যে, বন্ধুদের শুনি বিয়ের পর সন্তানও হয়ে গিয়েছে। সেখানে কনে বিয়ে করতে চাইছে, কিন্তু তোমরা আমার বিয়ে দিতে চাইছ না!
প্রশ্ন: বিয়ে নিয়ে আপনার কী মত?
সায়ন্তিকা: আমি বিয়েতে সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বাসী। আমি বিয়ে করতে চাই, মা হতে চাই। নিজের পরিবার তৈরি করতে চাই। কেরিয়ার তো অন্য দিক। তার মানে এই নয় যে, আমি বিয়ে করব না।
প্রশ্ন: প্রেমের প্রস্তাব তো নিশ্চয়ই আসে?
সায়ন্তিকা: (হেসে) কী বলব জানি না। আসলে আমার নিজের উপরেই খুব একটা ভরসা নেই। সংবাদমাধ্যমের উপরেই ঘটকালির দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি। দেখুন, অতীতে আমি সম্পর্কে ছিলাম। কোনও দিন সেটা লুকোইনি। জীবন তখনও ভাল ছিল, এখনও ভাল। কিন্তু শুধু ভাবি, যার সঙ্গে প্রেম করব সে কি আমাকে বুঝতে পারবে?
প্রশ্ন: আপনার এই কেরিয়ারকে ফিরে দেখলে কী মনে হয়?
সায়ন্তিকা: এই রাজ্যের মানুষ আমার বাবাকে চেনেন এবং ভালবাসেন। এমন কিছু করিনি বা কোনও দিন করব না যাতে বাবার অসম্মান হয়। আমার কপালেই যেন ‘বাধা’ লেখা আছে। কোনও কাজ একবারে হয় না। কিন্তু সেটা করতে পরিশ্রমে ভয় পাই না। হয়তো দেরি করে হয়েছে, কিন্তু সেই কাজ করে তবে আমি দম নিয়েছি। বিধায়ক হয়ে গেলে হয়তো সাংগঠনিক রাজনীতির কাজ এত ভাল ভাবে শিখতে পারতাম না। আমি আমার কেরিয়ার নিয়ে গর্বিত।
প্রশ্ন: কোনও আক্ষেপ?
সায়ন্তিকা: নেই। হয়তো কোনও দোষ করেছি। ব্যর্থতা থেকে শিখেছি। চুটিয়ে জীবনটা উপভোগ করছি। কিন্তু আমার কোনও আক্ষেপ নেই।
প্রশ্ন: এমন কোনও স্বপ্ন, যেটা পূরণ করতে চান?
সায়ন্তিকা: অনেক রয়েছে। আমার জীবনে বাবা-মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। লকডাউনের সময় থেকে বাবার একটা জিম বন্ধ রয়েছে। আমি চাই বাবার জিমের ব্র্যান্ডকে বড় আকারে শহরে আবার লঞ্চ করতে। অতিমারির পর আর্থিক দিক থেকে আমার পক্ষে সেটা করা সম্ভব হয়নি। জানি না কবে পারব। তবে ইচ্ছা রয়েছে। বাঁকুড়াকে রাজ্যের জেলাগুলোর মধ্যে উপরের দিকে নিয়ে আসতে চাই।
প্রশ্ন: কখনও অবসাদ বা একাকিত্ব আপনাকে ভাবিয়েছে?
সায়ন্তিকা: অবসাদ নয়, তবে একাকিত্ব তো রয়েইছে। আমি যে পেশাতে রয়েছি, জানি, একাকিত্বই আমার সঙ্গী। এটা জেনেই তো সবাই এই পেশায় আসেন। সব কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করা যায় না। ইচ্ছে করলেও রাস্তার ধারে বসতে পারব না, একটু ফুচকা খেতে পারব না। তারকাদের জীবনে বন্ধুর সংখ্যা কম। আমি আবার সেটাতেই বিশ্বাসী। মানুষকে বিশ্বাস করে অনেক ঠকেছি। ঈশ্বরের আশীর্বাদে এখন যে ক’জন বন্ধু রয়েছে, ভাল-মন্দে তারা আমার পাশে থাকে।
প্রশ্ন: মনখারাপ হলে নিজেকে কী ভাবে সামলান?
সায়ন্তিকা: মন ভাল না থাকলে অনেকেই হয়তো সেই রাগ বা কষ্টটা নিকটজনের উপরে জাহির করতে চান। না চাইতেও কেউ হয়তো খারাপ ব্যবহার করে ফেলেন। আমি সোজা জিমে চলে যাই। আমার মতো স্পোর্টস পার্সনদের ক্ষেত্রে এটা খুব বড় সুবিধা। শরীরচর্চার মাধ্যমে খারাপ চিন্তাভাবনাগুলোকে দূর করে দিই।
প্রশ্ন: কেরিয়ারের কোনও স্মরণীয় ঘটনা যেটা মনে রখেছেন?
সায়ন্তিকা: যে কারণে আপনি আজকে আমরা সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, সেই প্রতিটা কারণ আমার কাছে স্মরণীয়। ভালগুলো এগিয়ে চলতে সাহায্য করে। খারাপ জিনিসগুলো মনে রাখি যাতে দ্বিতীয় বার একই ভুল না করি। রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চ থেকে অভিনয়ে এসেছিলাম। বুম্বাদা আমাকে পোর্টফোলিয়ো করতে পাঠালেন, প্রভাত রায়ের ফোন, ‘আওয়ারা’-র জন্য প্রথম অডিশনে রবিজি’র (পরিচালক রবি কিনাগি) আমাকে পছন্দ হওয়া, রাজনীতিতে যোগদান, বাঁকুড়ায় যে দিন হেরে গেলাম, মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে মহানায়ক সম্মান নেওয়া— প্রত্যেকটা ঘটনা আমার মনে আছে।