প্রতীকী ছবি।
‘সমস্যা’র যেন শেষ নেই শাসক দলে!
‘বহিরাগত’ নতুন প্রার্থী নিয়ে হুগলির দুই কেন্দ্রে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশের ক্ষোভ প্রশমিত হতে না-হতেই আর এক বিপত্তি! প্রার্থী কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে থাকবেন? কে চেনাবেন পথ? ভোটের মুখেও নানা কেন্দ্রে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ইতি পড়েনি।
এ বার জেলায় তৃণমূলের নতুন ‘বহিরাগত’ প্রার্থী তিন জন। আরামবাগের সুজাতা মণ্ডল খাঁ, বলাগড়ের মনোরঞ্জন ব্যাপারী এবং উত্তরপাড়ার কাঞ্চন মল্লিক। এঁদের মধ্যে কাঞ্চন তারকা প্রার্থী। তাঁকে নিয়ে টানাপড়েন সামনে আসেনি। তবে, আরামবাগ এবং বলাগড়ে তা চলছে পুরোমাত্রায়। প্রার্থীরা অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত বুধবারের কথাই ধরা যাক। আরামবাগের ব্লকপাড়ার দলীয় কার্যালয়ে আসার কথা থাকলেও সুজাতা আসেননি। দুপুর থেকে ওই কার্যালয়ে হত্যে দিয়েছিলেন দলের শ’চারেক নেতাকর্মী। পরে তাঁরা খবর পান, দলের ‘অপর পক্ষ’ প্রার্থীকে ‘হাইজ্যাক’ করে অন্যত্র নিয়ে গিয়েছেন। শোরগোল পড়ে যায়। ‘বহিরাগত’ প্রার্থীকে পথ চেনাবেন কে, টানাপড়েন শুরু হয় তা নিয়ে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সে দিন সুজাতা কার্যালয়ে না-গিয়ে দলের নেতা তথা আরামবাগের পুর-প্রশাসক স্বপন নন্দীর সঙ্গে ভেলিয়া কালীতলায় পুজো দিতে যান। সেখান থেকে বলুন্ডিতে বিদায়ী বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার বাড়িতে। বিকেলে যান মহেশপুর কালীমন্দিরে। ব্লকপাড়ার কার্যালয়ে অপেক্ষমাণ দলীয় কর্মীদের একাংশ সেখানে গিয়ে সুজাতার কাছে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মাদ্রা গ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ রেজাউল এ নিয়ে বলেন, ‘‘নানা গোষ্ঠী দলটাকে প্রায় শেষ করেছে। প্রার্থী কোনও গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ে পরিচালিত হবেন, এটা চাইছি না। প্রার্থীকে তা জানিয়েছি।’’
রেজাউলের খেদ, যাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ, তাঁদের সঙ্গে প্রার্থীকে দেখে প্রচারের কাজ গতি হারিয়েছে। বিরক্ত হয়ে তাঁরা দেওয়াল লেখা বন্ধ করেছেন। একই বক্তব্য সালেপুরের নেতা অর্ণব মণ্ডলেরও। তিরোল পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুস সুকুর বলেন, ‘‘প্রার্থী আসবেন শুনে দলীয় কার্যালয়ে দু’ঘণ্টা বসেছিলাম। পরে শুনি স্বপন নন্দী হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়েছেন।’’ দলের ব্লক সভাপতি পলাশ রায়ের বক্তব্য, সুজাতার দলীয় কার্যালয়ে আসার কথা ছিল। কর্মসূচি বদলের কথা তিনি পরে জেনেছেন। দলীয় কর্মীদের বক্তব্য তিনি সুজাতাকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্বপনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘হাইজ্যাক করব কেন! প্রার্থীই বিদায়ী বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।’’
সুজাতা বলেন, ‘‘মহেশপুরে সব স্তরের নেতাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কোনও সমস্যা নেই। সবার ভালবাসা নিয়েই আরামবাগে দলকে জেতাব।’’
সোনারপুরের বাসিন্দা মনোরঞ্জনবাবুকে দল বলাগড়ে প্রার্থী করার পরে বিদায়ী বিধায়ক অসীম মাঝির অনুগামীরা দাবি করেছিলেন, অসীমকে টিকিট দিতে হবে। পরে সেই দাবি থেকে সরে এলেও তাঁরা জানান, দলের অপর অংশের ‘খপ্পরে’ মনোরঞ্জন যেন না পড়েন!
এই নিয়ে অসীম-অনুগামীদের কারও কারও ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসছে। দলের নেতা তপন দাসের কথায়, ‘‘বলাগড়ে আমাদের দলের সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রেখেছেন অসীমদা এবং ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়। কর্মীরা কী চাইছেন, প্রার্থীকেও বুঝতে হবে।’’ অনেকের বক্তব্যই এক। বিষয়টি নিয়ে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন কেউ কেউ। তবে সকলে সহমত নন। জিরাট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অশোক পোদ্দার বলেন, ‘‘আমরা চাই, সবাই এককাট্টা হয়েই প্রার্থীর হয়ে নামুন।’’
তৃণমূল শিবিরের খবর, অসীম-শিবিরের বিপরীতে রয়েছে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোষ্ঠী। শ্যামাপ্রসাদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের প্রচার তুঙ্গে। দলের সব নেতা-কর্মীরাই মিছিল-মিটিং করছেন। তবে কিছু লোক আছেন, যাঁরা নানা কথা বলে প্রার্থীকে ‘ড্যামেজ’ করার চেষ্টা করেন।’’
মনোরঞ্জনবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘দলের নির্দেশ মেনে চলছি। আমি এলাকা চিনি না। বুথকর্মীদের উপরে নির্ভর করে চলছি।’’
তথ্য সহায়তা: সুশান্ত সরকার।