Ratua

Bengal Election: গঙ্গা-ফুলহারের ‘চোরাস্রোত’ রতুয়ায়, তৃণমূল-মোর্চা-বিজেপি ছাড়াও নজর কাড়ছেন নির্দল প্রার্থী

রতুয়ায় লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূল, সংযুক্ত মোর্চা, বিজেপি-র প্রার্থীরা। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভূমিকা পারেন এক নির্দল প্রার্থীও।

Advertisement

জয়শ্রী সিংহ

মালদহ শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৪৩
Share:

সমর মুখোপাধ্যায়, অভিষেক সিংহানিয়া, নাজেমা খাতুন ও পায়েল খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।

মালদহ জেলার মোট ১২টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নির্বাচন হতে চলেছে রতুয়ায়। মালদহ জেলার ওই বিধানসভা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সমীকরণ দেখে এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

রতুয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূল, সংযুক্ত মোর্চা, বিজেপি-র প্রার্থীরা। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস সমর্থিত মোর্চার প্রার্থী নাজেমা খাতুন এবং বিজেপি-র প্রার্থী অভিষেক সিংহানিয়া। তবে এই তিন প্রধানের মধ্যেই কেন্দ্রের রাজনৈতিক লড়াইটা ঘোরাফেরা করছে না। অনেকের ধারণা, রতুয়ার যুদ্ধে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভূমিকা নিতে চলেছেন ওই কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী তথা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া দাপুটে নেতা মহম্মদ ইয়াসিন শেখের স্ত্রী পায়েল খাতুন। পায়েল আবার তৃণমূলের দখলে থাকা মালদহ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও বটে। ফলে তৃণমূলের দখলে থাকা ওই কেন্দ্রে রাজনীতির স্রোত শেষ পর্যন্ত কোন খাতে বইবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কোনও দলেরই একচ্ছত্র আধিপত্য নেই এই কেন্দ্রে। ফলে ভোট কাটাকাটির অঙ্কে রতুয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ স্থির হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

রতুয়া কেন্দ্রের চার বারের বিধায়ক সমর। ১৯৮২, ১৯৯৬, ২০১১ এবং ২০১৬ সালের ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জয় পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল যোগ দেন সমর। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের তিরও শাণিত। অনেকের বক্তব্য, বিধায়ক হলেও এলাকার উন্নয়নে গুরুত্ব দেননি সমর। রতুয়ায় গঙ্গা এবং ফুলহারের ভাঙন ও বন্যা রোধে বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তবে প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন, ২০১২ সালে ফুলহার নদীর উপর সেতু নির্মাণে সমর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

Advertisement

জনতার দাঁড়িপাল্লায় বিধায়কের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ওঠানামা রয়েছে। কিন্তু রতুয়ার রাজনৈতিক বাঁক যেন গঙ্গা বা ফুলহারের মতোই বিসর্পিল। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে রতুয়ায় এগিয়ে তৃণমূল। কিন্তু রতুয়া দখলের পথ কি জোড়াফুল শিবিরের কাছে মসৃণ হবে? অনেকে মনে করছেন, ভোটের যুদ্ধে সমরের পথের ‘কাঁটা’ জেলার রাজনীতিতে তাঁর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসাবে পরিচিত সৌমিত্র রায়। কংগ্রেসি রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা সেই সৌমিত্র তৃণমূল হয়ে এখন পৌঁছেছেন বিজেপি-র তাঁবুতে। রতুয়া কেন্দ্রের সৌমিত্রর ‘প্রভাব’ রয়েছে বলেও মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। আবার ওই একই যুক্তিতে সমরকে ‘ধাক্কা’ দিতে পারেন সৌমিত্রের মতোই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া ইয়াসিন শেখও। বিশেষ করে ইয়াসিন-জায়া নির্দল প্রার্থী হওয়ায় সংখ্যালঘু ভোট তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে বলেই মত বিশ্লেষকদের একাংশের। যদিও রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভরসায় নির্বাচনী বৈতরণী পেরনোর আশা করছেন সমর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোনও বিশ্লেষণ কাজ করবে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের জোরে এলাকায় জোড়াফুলই ফুটবে।’’

প্রয়াত গনি খান চৌধুরী আবেগে ভর করে রতুয়া জয়ের আশা করছে সংযুক্ত মোর্চাও। জোট প্রার্থী নাজেমা বলছেন, ‘‘স্থানীয় বাসিন্দারা ভুল করবেন না। তাঁরা কোতোয়ালি বাড়ির উপর ভরসা রাখবেন।’’ আবার বিজেপি-র প্রার্থী অভিষেকের মতে, ‘‘বিধায়ক হিসাবে সমর মুখোপাধ্যায় ব্যর্থ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সামান্য পরিষেবাটুকুও তিনি দিতে পারেননি। তাই কংগ্রেস বা তৃণমূল নয়, রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও তাই আমাকে সমর্থন করবেন।’’

আগামী ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায় ভোট রতুয়ায়। গঙ্গা এবং ফুলহারের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত ওই বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ঘোলা জল’ থিতিয়ে কী ছবি দেখা যাবে তা স্পষ্ট হবে ২ মে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement