প্রতীকী ছবি।
দলের ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের প্রচারে নামানো থেকে ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত জেলায় কৃষক-মন জয়ে কর্মসূচি— ভোটের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই ময়দানে নেমে পড়েছিল বিজেপি। পূর্ব বর্ধমানের সেই ময়দান থেকে অবশ্য শূন্য হাতেই ফিরতে হল তাদের। রবিবার ফল বেরোতে দেখা গেল, জেলার ১৬টি আসনের সব ক’টিই তৃণমূলের দখলে। বিজেপি যেমন খাতা খুলতে পারল না, তেমনই হাত খালি সংযুক্ত মোর্চারও।
বর্ধমান শহর থেকে জেলার জঙ্গলমহল বলে পরিচিত আউশগ্রাম— সর্বত্রই ঘাসফুলের দাপট। ২০১৬ সালে ১৬টি আসনের মধ্যে পূর্বস্থলী উত্তর ও জামালপুর— এই দুই কেন্দ্রে জয়ী হন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে কাটোয়া ও গলসিতে বিজেপি এগিয়েছিল। এ ছাড়া বর্ধমান দক্ষিণ-সহ কয়েকটি এলাকায় তৃণমূল-বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এ বার বিধানসভা ভোটেও তেমনই লড়াই হবে, মনে করেছিল রাজনৈতিক মহলের বড় অংশ। কিন্তু রবিবার ইভিএম খোলার পর থেকেই ক্রমে এগিয়ে যেতে থাকেন তৃণমূল প্রার্থীরা। মন্তেশ্বরের মতো দু’একটি কেন্দ্রে বিজেপি গোড়ায় এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে যায়। কাটোয়ায় অবশ্য দীর্ঘক্ষণ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে। দিনের শেষে জেলার সব ক’টি আসনই জিতছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
তৃণমূল নেতারা নিজেদের সংগঠন পোক্ত করার বিষয়টির পাশাপাশি বিজেপির ‘কুৎসা’ মানুষ ভাল ভাবে না নেওয়ায় এই সাফল্য বলে দাবি করছেন। দলের জেলা সভাপতি তথা পূর্বস্থলী দক্ষিণের জয়ী প্রার্থী স্বপন দেবনাথের দাবি, ‘‘এ বার আমাদের যে পরিমাণ কুৎসার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি। বিজেপি ব্যক্তি-কুৎসা দিয়ে জিততে চেয়েছিল। আমরা শুধু উন্নয়নের কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতির কথা তুলে ধরেছিলাম। মানুষ উন্নয়নের নিরিখেই তৃণমূলকে একক ভাবে ক্ষমতায় এনেছে। জেলায় ১৬টি আসনেই জিতিয়েছে।’’ দলের অন্যতম রাজ্য মুখ্যপাত্র দেবু টুডু দাবি করেন, এই ফলের পিছনে আগে থেকে শক্ত ভাবে তৈরি করা সংগঠনও কাজ করেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি কেন্দ্র ধরে দলের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। সে ভাবেই বুথ থেকে সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মীরা পরিশ্রম করেছেন। বিজেপির আচার-আচরণ আমাদের কাজ অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।’’
বিজেপি অবশ্য ভোটের কয়েকমাস আগে থেকেই কর্মসূচিতে জোর দিয়েছিল। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা কৃষকের বাড়িতে ‘মুষ্টিভিক্ষা’ কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন এই জেলা থেকে। প্রচার-পর্বে জেলায় এসে সভা করে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের মতো নেতারা। তবে এরই মধ্যে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও’ সামনে আসে। বর্ধমানে দলের জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় শাস্তির মুখে পড়তে হয় কয়েকজন নেতা-কর্মীকে। প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভও সামনে আসে নানা এলাকায়। হারের পিছনে এ সব কারণ হয়েছে বলে অবশ্য এ দিন মানতে চাননি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা (বর্ধমান সদর) সভাপতি অভিজিৎ তায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই পরাজয় হতাশাজনক। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে জেলায় আমাদের ভোটের হার বেড়েছে। এই ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’’
ফলাফলে হতাশ বাম নেতৃত্বও। জেলার সব আসনেই তৃতীয় স্থান পেয়েছেন বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘ফল খারাপ হয়েছে ঠিকই। তবে সামগ্রিক মূল্যায়ন আমরা এখনও করতে পারিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, বিজেপিকে মানুষ হারাতে চেয়েছিলেন। ফলে, কিছু সমর্থন তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে।’’