West Bengal Assembly Election 2021

Bengal polls: দিদির ‘খেলা হবে’-র পাল্টা ‘শিক্ষা হবে’, ‘স্বাস্থ্য হবে’ দিয়ে সপাট প্রতি আক্রমণ মোদীর

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘দিদি বলছেন খেলা হবে। আমি বলছি, শিক্ষা হবে। স্বাস্থ্য হবে। হাসপাতাল হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২১ ১২:২৪
Share:

বাংলার ভোটে দিদি-মোদী টক্কর।

বাংলার ভোটে বৃহস্পতিবারের বারবেলায় শুরু হয়ে গেল দিদি-মোদী টক্কর। ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধ বারবার ব্যবহার করে তাকে ভোটের ‘থিমলাইন’ করে তুলেছেন, মাঠে নেমেই সরাসরি তার মোকাবিলা শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার জনসভায় মোদী বলে গিয়েছেন, ‘‘দিদি বলছেন খেলা হবে। আমি বলছি, শিক্ষা হবে। স্বাস্থ্য হবে। হাসপাতাল হবে।’’ আরও বলেছেন, ‘‘দিদির খেলা শেষ! এবার পালা উন্নয়নের।’’

Advertisement

এটা বড় কথা নয় যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা তার পরেও তিনটি নির্বাচনী প্রচারসভায় ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধই ব্যবহার করেছেন। তাতে তাঁর জনতা সাড়াও দিয়েছে। বস্তুত, সাগর থেকে পাহাড়— তৃণমূলের সমস্ত প্রার্থী এবং নেতার মুখে ‘খেলা হবে’ শোনা যাচ্ছে। এতদিন বিজেপি-র কোনও নেতা, রাজ্য বা কেন্দ্রে, তার যুতসই মোকাবিলা করতে পারেননি। কিন্তু সহজাত সুবক্তা মোদী তার পাল্টা স্লোগান চালু করে দিয়ে গিয়েছেন। শনিবারও মোদীর খড়্গপুরে সভা করার কথা। সম্ভবত সেখানেও তিনি তাঁর পাল্টা রাজনৈতিক আক্রমণ জারি রাখবেন।

তৃণমূল প্রত্যাশিত ভাবেই মনে করছে, দিদির পাল্টা মোদীর ওই স্লোগান ভারে কাটলেও ধারে কাটবে না। অন্যদিকে, বিজেপি মনে করছে, এতদিনে একটা লাগসই প্রতি আক্রমণের রাস্তা পাওয়া গিয়েছে। এতদিন নীচুতলার কর্মীরা ‘খেলা হবে’ বলে প্রতি আক্রমণ করছিলেন। কিন্তু মোদী অনেক উচ্চ স্তরের রাজনৈতিক প্রতি আক্রমণ করলেন। যেমন বিজেপি-র বোলপুরের প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এটাই তো আমাদের লক্ষ্য। গণতন্ত্র, শাসন, ভোটপ্রক্রিয়া এবং মানুষের আশা পূর্ণ করাটা আমাদের কাছে খেলা নয়। এগুলো আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাঁরা খেলা হবে বলছেন, তাঁরা বিষয়টাকে খাটো করছেন। মানুষের আবেগ, আশা নিয়ে খেলছেন। তাঁদের কোনও ইতিবাচক বক্তব্য বা লক্ষ্য নেই। আমাদের যে ইতিবাচক লক্ষ্য আছে, তা স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি-র সঙ্কল্প বুঝিয়ে দিলেন। যা ক্ষমতায় এলে আমরা করব। এটা অনেকদিন আগেই দরকার ছিল।’’

Advertisement

রাজ্য রাজনীতির আলোচকদের মধ্যে যাঁরা মোদীর পুরুলিয়ার বক্তৃতা শুনেছেন, তাঁরা মনে করছেন মাঠে নেমেই মোদী ৩০০ ব্যাটিং! এক আলোচকের বক্তব্য, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল বলছেন— ভয়ঙ্কর খেলা হবে! মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর দল এবং তাঁর ভাইপো সবাই বলছেন খেলা হবে। এর উদ্দেশ্য মানুষকে সন্ত্রস্ত করা, ভীত করা। যাতে মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ না করতে পারেন। এটা বদলার কথা, উন্নয়নের কথা নয়। অনুন্নয়নের গহ্বরে পড়ে-থাকা রাজ্যকে কী ভাবে বার করা যা, তার জন্য একটা ইতিবাচক রাস্তা দেখতে চাইছেন মানুষ। সেই রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছেন মোদী।’’

তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য মনে করছেন, মোদীর পাল্টা আক্রমণে তাঁদের কিছু যাবে-আসবে না। তাঁর কথায়, ‘‘মোদী আসলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। উনি বুঝে গিয়েছেন, অসম জিততে পারবেন না। তাই বাংলাকে পাখির চোখ করেছেন। কিন্তু মমতা যে স্লোগান দিয়েছেন, তার মোকাবিলায় ওঁর স্লোগান ধোপে টিকবে না। প্রথমত, উনি বলছেন হিন্দিতে। দ্বিতীয়ত, উনি তো মমতার স্লোগান ধার করেই তাঁর স্লোগান আবিষ্কার করেছেন। এটা প্রতি আক্রমণ নয়। এটা অনুকরণ। যেমন উনি মমতার ‘পরিবর্তন’-এর স্লোগান অনুকরণ করে ‘আসল পরিবর্তন’-এর কথা বলছেন। এতে বাং লার মানুষ ভুলবেন না।’’

আবার বিজেপি-র প্রার্থী তথা রাজ্য দলের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘উনি তৃণমূলের স্লোগান অনুকরণ করেননি। বরং তৃণমূলের অস্ত্রেই তৃণমূলকে ঘায়েল করে গিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর রাজনীতিই হল উন্নয়নের রাজনীতি। সেই ব্যাখ্যাই তিনি দিয়েছেন। দেশের উন্নযনই যে তাঁর রাজনীতি, সেটাই যে তাঁর লক্ষ্য, তা বোঝাতেই তিনি কাজ করছেন। তাঁর লক্ষ্য জিডিপি বৃদ্ধি। বাংলায় এসে তাঁর লক্ষ্য, তাঁর ভাবাবেগ থেকেই তৃণমূলের রং তৃণমূলকে মাখিয়ে দিয়ে গেলেন।’’

মোদী ভাল বক্তৃতা করেছেন মেনে নিয়েও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘সবই ঠিক আছে। কিন্তু খেলা হবে স্লোগানের মধ্যে একটা নুইসেন্স ভ্যালু আছে। সেটা অনেক সহজে অনেক বেশি লোককে আকর্ষণ করে। এর মধ্যে একটা ফ্যাতাড়ু এলিমেন্ট আছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা স্লোগান একটু বেশিই পরিশীলিত। এটা হচ্ছে বর্ষশেষের উদ্দাম পার্টির মধ্যে অতুলপ্রসাদী গান গাওয়ার মতো। ওই জগঝম্পের মধ্যে কি আর অতুলপ্রসাদের গান কল্কে পাবে?’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘মানুষ জানেন, নরেন্দ্র মোদী মানেই উন্নয়ন। তাঁর কাছে এটা মানুষের জন্য কাজ করা। ‘খেলা’ নয়। সেটা একটা পবিত্র কর্তব্য। সেটাই তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। তিনি যে ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এর কথা বলেন, সেটাই বাংলার ভোটারদের বুঝিয়েছেন। এটাই বিজেপি-র মন্ত্র। এটাই বিজেপি-র ইস্তাহার। এটাই আমরা বলতে চেয়েছি। বলতে চাইছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement