সচেতন: পিপিই পরে ভোটারদের লাইনে হাতে জীবাণুনাশক দিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। শনিবার, মেটিয়াবুরুজের একটি বুথে। ছবি: সুমন বল্লভ।
প্রতিটি বুথেই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা। কোথাও কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে রয়েছেন রাস্তার দিকে। মাঝেমধ্যেই চক্কর মারছে পুলিশের গাড়ি। মোড়ে মোড়ে চলছে নাকা-তল্লাশি। সন্দেহজনক গাড়ি দেখলেই দাঁড় করিয়ে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।
শনিবার মেটিয়াবুরুজে ভোট কেমন হল? এলাকার মানুষকে এ কথা জিজ্ঞাসা করতে তাঁরা যা বললেন, তার নিরিখে বলাই যায়, ‘চাপা ক্ষোভ নিয়ে শান্তিপূর্ণ’।
গোটা এলাকা তৃণমূলের দেওয়াল লিখন, পোস্টার, ব্যানার আর পতাকায় ছয়লাপ। অন্য কোনও দলের অস্তিত্ব সে ভাবে চোখে পড়ে না। কারবালা রোডের একটি বুথে ভোট দিতে আসা এক যুবক বললেন, ‘‘এখানে বিরোধীদের খুঁজেও পাবেন না। বিরোধী সে ভাবে না থাকলে ঝামেলাটা করবে কারা?’’
বিজেপি বা আইএসএফ প্রার্থী নন, সেখানে বরং দেখা গেল, বুথে বুথে ছুটে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী আব্দুল খালেক মোল্লা। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ একটি বুথে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন তিনি। খানিক পরেই বেরিয়ে বললেন, ‘‘এজেন্টদের একটা গন্ডগোল চলছে বলে শুনেছিলাম। ভোট কিছু ক্ষণ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন ঠিক হয়ে গিয়েছে।’’
কিন্তু বিজেপি প্রার্থী রামজিৎ প্রসাদ কোথায়?
অনেক খুঁজে তাঁর দেখা মিলল। একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন বলে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি ঘুরছেন কেন্দ্রে? রামজিৎ বললেন, ‘‘আমি ঘুরছি। বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি। রাজ্যে যে ভাবে মোদী-হওয়া বইছে, তাতেই আমি জিতে যাব।’’ আইএসএফ প্রার্থী নুরুজ্জামান মোল্লাকেও রাস্তায় সে ভাবে দেখা যায়নি।
সকাল থেকেই বুথে বুথে দেখা যায় ভোটারদের লম্বা লাইন। আক্রা রোডের একটি ভোটকেন্দ্রে দল বেঁধে ভোট দিতে এসেছিলেন আশিয়ানা পরভিন, আফসারি বেগম, আকবরি বেগমরা। ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা বললেন, ‘‘আমাদের এলাকায় জলের খুব কষ্ট। নিকাশির হালও খুব খারাপ।’’ এক প্রবীণ ভোটারের কথায়, ‘‘এখানে সংখ্যালঘু ভোট এখন এককাট্টা। তাই গন্ডগোল হয় না।’’ গন্ডগোল না থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ দিন অবশ্য বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রেই কোভিড-বিধি মানা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ঢোকার মুখে থার্মাল গান দিয়ে দেহের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। ভোটকর্মীদের প্রায় সকলের হাতেই ছিল প্লাস্টিকের গ্লাভস। মাস্কও পরেছিলেন সকলে।
মহেশতলা ও বজবজ বিধানসভা কেন্দ্রেও ভোট মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে এ দিন বজবজের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচ নম্বর বুথে ভোটযন্ত্রে সেলোটেপ লাগিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। বজবজের সারাঙ্গাবাদের উত্তর রায়পুরের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, রোদের মধ্যেও লাইন পড়েছে। মহেশতলার আক্রা কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে প্ৰথম ভোট দিতে এসেছিলেন বঙ্গবাসী কলেজের সাইকোলজি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অনন্যা রায়। তিনি বললেন, ‘‘ভোটে হিংসার ঘটনার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু ভোট দিতে আসতে ভয় করেনি।’’ মেটিয়াবুরুজের রবীন্দ্র বালিকা বিদ্যাপীঠে ভোট দিতে এসে নিজস্বী তুললেন কয়েক জন মহিলা। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘এই ছবি দেখে আমাদের বন্ধুরাও ভোট দিতে উৎসাহিত হবে।’’