West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ‘বিশ্বাস’ই অরূপ-রতন, তবু লড়াই আগলে রাখার

এখানকার লড়াইয়ে বাবুলের গেরুয়া পতাকার চেয়ে দেবদূত ঘোষের লাল পতাকার উপস্থিতিও কোনও অংশে কম নয়।

Advertisement

রবিশঙ্কর দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫১
Share:

প্রচারে: (বাঁ দিক থেকে) অরূপ বিশ্বাস, বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবদূত ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

স্বরূপে তো বটেই, আরও বহু রূপে টালিগঞ্জে প্রকাশ তাঁর।

Advertisement

তিনি একাধারে এখানে তিন বারের বিধায়ক, রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূলের উপরতলার নেতা এবং স্টুডিয়ো পাড়ার ‘ব্যাকসিট ড্রাইভার’। এলাকাবাসী যে তাঁকে আপদে-বিপদে পাশে পান না, তা-ও নয়।

এ হেন অরূপ বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে টালিগঞ্জ কেন্দ্রে নবাগত বিজেপি প্রার্থী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলছেন, ‘‘৪০ হাজার ভোটে জিতব।’’

Advertisement

কী উত্তর দেবেন অরূপ?

তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কিছু বলব না। আমার হয়ে জবাব দেবেন টালিগঞ্জের মানুষ। ফল বেরোলে মিলিয়ে নেবেন।’’

এই প্রেক্ষাপটে টালিগঞ্জের লড়াই সম্পর্কে একটা ধারণা স্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু এখানকার ভোট যে সেই পথে এগোচ্ছে না, টালিগঞ্জের যে কোনও প্রান্তে পা রাখলেই তা বোঝা যায়।

এই কেন্দ্রের বিন্যাস বিচিত্র। সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাপকাঠির বিচারে এ যেন এক সব পেয়েছির দেশ। অভিজাত এলাকা, বড় বড় আবাসন, অজস্র কলোনি, বস্তি, মন্দির, মসজিদ— সব কিছু দিয়ে ঘেরা এই কেন্দ্র। স্টুডিয়ো পাড়া তো আছেই। যেখানে অরূপের স্বরূপে ‘বিশ্বাস’ রাখা যেন অলিখিত ‘কানুন’।

তবে এ সব ভেদ বিচারের আলোচনায় আদৌ আগ্রহী নন তৃণমূল প্রার্থী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কলোনির ছেলে। সে দিনের কলোনি থেকে আজকের টালিগঞ্জ হওয়ার পথে আমি এখানকার মানুষের সঙ্গে হেঁটেছি।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গায়ক বাবুলকে লড়াইয়ে আনার ফলে এ বার কি চাপ বাড়ল? অরূপের জবাব, ‘‘আমি ব্যক্তি-রাজনীতি করি না। মানুষের সঙ্গে থাকি। এটাই আমার রাজনীতি। তাই আমার নতুন করে কিছু বলার নেই। ১২ মাস ধরে ৩৬৫ দিন কে তাঁদের পাশে থাকে, টালিগঞ্জবাসী তা বোঝেন। তাঁদের সেই বিশ্বাসের উপরে দাঁড়িয়েই আমি ভোটে লড়ার শক্তি পাই।’’

এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে অনেকের মুখেই শোনা যায়, করোনাকালে অরূপ ও তাঁর লোকজনের ‘সহায়ক’ ভূমিকার কথা। সেটা বাড়ি বাড়ি চাল-আলু পৌঁছে দেওয়াই হোক বা অসুস্থকে হাসপাতালে পাঠানো। সিপিএম কর্মী গৌতম দাস অবশ্য এ কথা মানেন না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রেশনের জিনিস তো তৃণমূলের লোকেরাই মেরে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ তো সরকারের সেই সাহায্য পাননি। একই ঘটনা ঘটেছে আমপানের ক্ষয়ক্ষতির সাহায্য নিয়েও।’’

এখানকার লড়াইয়ে বাবুলের গেরুয়া পতাকার চেয়ে দেবদূত ঘোষের লাল পতাকার উপস্থিতিও কোনও অংশে কম নয়। সংযুক্ত মোর্চার নবাগত প্রার্থী, সিপিএমের দেবদূত নিজে অভিনেতা। তার চেয়েও বড় কথা, ২০১৬ সালের বিধানসভা এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের অনেকটা পিছনে থেকেও দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম-ই। বস্তুত, এক সময়ের ‘সিপিএম দুর্গ’ টালিগঞ্জে টানা জিতে আসা প্রশান্ত শূর এখানে কিছুটা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা তৈরি করতে পেরেছিলেন। নাকতলায় রাস্তার উপরে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকলে এখনও চোখে পড়বে দেওয়ালের এক দিকে বাঁধানো মার্ক্স, এঙ্গেলস এবং অন্য নেতাদের ছবি। আর এক দিকে কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো প্রশান্তবাবুর ছবি। টালিগঞ্জের ভোটের আলোচনায় তাঁর কথাও উঠবে অনিবার্য ভাবেই।

হয়তো সেই কারণেই ‘রাম ও বামের’ যৌথ উদ্যোগে ভরসা রাখতে চান বাবুলও। প্রচারের পথে সিপিএমের কর্মী-সমর্থক দেখলে বাবুল বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন, তৃণমূল আমাদের ‘কমন এনিমি’।’’ কিন্তু ভোট-পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ‘কমন’ মিলবে কি? রানিকুঠির বাসিন্দা এক তরুণের কথায়, ‘‘কারা জিতবে, বলতে পারব না। তবে লড়াই জোরদার।’’ বিক্রমগড়ে একটি চায়ের দোকানের আড্ডায় আর এক তরুণের টিপ্পনী, ‘‘লড়াই সত্যিই হাড্ডাহাড্ডি। তবে সেটা দ্বিতীয় হওয়ার। এর বেশি জানতে চাইবেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement