ফাইল চিত্র।
রাজ্যে স্বৈরতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিপদ রুখতে নতুন প্রজন্মের উপরেই ভরসা রাখছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ বারের বিধানসভা ভোটে এক ঝাঁক তরুণ মুখকে ময়দানে নামিয়েছে সিপিএম। বুদ্ধবাবুর মতে, বাংলার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই রাজ্য আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
এ বারের নির্বাচনকে বাংলার রাজনীতিতে একটি ‘সন্ধিক্ষণ’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই তাঁর আহ্বান, ‘আজ বাংলার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার যুবক-যুবতী ছোট, মাঝারি, বৃহৎ শিল্প ও কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে পথে নেমেছে। ওরাই পারবে এই বিপদকে রুখে দিতে। বর্তমান পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে নতুন সরকার তৈরি করে ওরা পারবে বাংলার হৃত গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে’।
পরবর্তী প্রজন্মের হাতে নেতৃত্বের ভার ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছায় অন্তরালে চলে গিয়েছেন বুদ্ধবাবু। শারীরিক অসুবিধার কারণে ভোটের প্রচারেও এ বার তিনি নেই। বিবৃতি দিয়ে সোমবার তিনি জনতার উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে (আইএসএফ) নিয়ে গড়ে ওঠা স্বৈরতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন করার জন্য। তার মধ্যেও বিশেষ ভাবে তিনি জোর দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের দাবি এবং লড়াইয়ের উপরেই। আশা রেখেছেন, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিষকে ব্যর্থ করে কাজের দাবিতে এগিয়ে রাজ্যকে অন্ধকার থেকে বার করে আনতে পারবে তরুণ প্রজন্মই।
কেন রাজ্যে অন্ধকার নেমে এসেছে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, দুর্নীতি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজ রাজ্যবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। মহিলাদের নিরাপত্তা, সম্ভ্রম, আত্মনির্ভরতা বিপন্ন সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যে। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় স্তর পর্যন্ত যে গণতন্ত্র প্রসারিত ছিল, তা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ১০ বছরে। তার উপরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে পরিবেশ পশ্চিমবঙ্গের গর্ব ছিল, তাকে বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। বুদ্ধবাবুর কথায়, ‘এক দিকে তৃণমূলের স্বৈরতান্ত্রিক দাপাদাপি, অন্য দিকে বিজেপির বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে সর্বনাশা আর্থিক নীতি, বিভেদের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ— যার পিছনে রয়েছে আরএসএসের ভয়ঙ্কর মতাদর্শ। এরই পরিণতি রাজ্যে আজকের এই ধ্বংসচিত্র’।
এর আগে ভোটের মুখে বুদ্ধবাবু আবেদন জানিয়েছিলেন, তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে বেছে নেওয়া ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার সমান! এ বার সেই ভাষায় না বললেও রাজ্যবাসীকে সরাসরি সংযুক্ত মোর্চার সরকার গড়ার জন্য এগিয়ে আসার আবেদন করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।