West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: মেয়েরা নিজের বাংলাকে চায়

পশ্চিমবঙ্গে একুশের ভোট ইঙ্গিত দিচ্ছে, মেয়েরা নিজেদের চিহ্ন রাখতে পারে ভোটের ফলে।

Advertisement

স্বাতী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২১ ০৬:৪৮
Share:

ছবি পিটিআই।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই মেয়েরা ভোটাধিকার পেয়েছে, কিন্তু স্বাধীন ভাবে ভোট দিতে পেরেছে কি? রাজনৈতিক দলগুলো এখনও স্লোগান দেয়, “মা-বোনেদের বলে দিন, অমুক চিহ্নে ভোট দিন।” পশ্চিমবঙ্গে একুশের ভোট ইঙ্গিত দিচ্ছে, মেয়েরা নিজেদের চিহ্ন রাখতে পারে ভোটের ফলে।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েদের ভোটে জিতেছেন — এ কথাটা হাওয়ায় ভাসলেও প্রমাণ এখনও মেলেনি। মিলেছে আভাস। যেমন, মমতার জনসভায় মেয়েদের, বিশেষত দরিদ্র মেয়েদের, বিপুল উপস্থিতি। পোড়-খাওয়া নেতাদের পর্যবেক্ষণ। “তৃণমূলের ভোটের অন্তত ৫০ শতাংশ গরিব মেয়েদের,” বললেন বামপন্থী শ্রমিক নেতা অশোক ঘোষ। আর আছে ভোটার মতামতের সমীক্ষা। অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানালেন, অগস্ট ২০২০ থেকে ছ’টা রাউন্ডে মতামত সমীক্ষা করেছেন, প্রতিবারই দেখেছেন, তৃণমূল সমর্থন পুরুষদের চাইতে মেয়েদের মধ্যে বেশি। মোট হিসেব, পুরুষদের ৪৩ শতাংশ, মেয়েদের ৫২ শতাংশ তৃণমূলের পক্ষে। “যারা কন্যাশ্রী, বিশেষত কন্যাশ্রী-৩ অবধি পেয়েছে, সেই মেয়েদের মধ্যে সমর্থন খুব জোরালো।” কিন্তু বিজেপি তো ১৮ বছর বয়স হলে দু’লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল। তা হলে? “বাসে সিট পেয়ে গিয়েছেন, সেটা ছেড়ে কি আপনি আরও ভাল সিটের আশায় লাইন দেবেন?” সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের আশ্বাসও সে ভাবে টানেনি মেয়েদের— চাকরি কই? চাকরিপ্রার্থী মেয়েদের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অনিয়মিত পরীক্ষা, নিয়োগে ঘুষের কারবার নিয়ে ভয়ানক ক্ষোভ তৃণমূলের বিরুদ্ধে, দেখেছেন বিশ্বনাথবাবু। টেট-উত্তীর্ণ বা প্যারাটিচারদের আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন মেয়েরা, মনে করালেন বাম নেত্রী মালিনী ভট্টাচার্যও। “আজ মেয়েদের সর্বাধিক চাহিদা হবে কাজ, এটাই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের ফল দেখে বোঝা মুশকিল, মেয়েরা কী চায়।”

সম্ভবত চাকরির আশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে অনুদান হারানোর ভয়। লকডাউনের বাজারে বিনা পয়সার চাল, বিনা খরচে চিকিৎসাই ভরসা। তৃণমূল কর্মীরা এ বার ঘরে ঘরে গিয়ে বুঝিয়েছে, তৃণমূল না থাকলে বন্ধ হবে স্বাস্থ্যসাথী থেকে খাদ্যসাথী, সব সহায়তা। বিজেপি পালটা আশ্বাস পৌঁছতে পারেনি, মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে অনুদানের গুরুত্ব কেবল টাকার অঙ্কে নয়। গরিব গৃহস্থের খুঁটিনাটি চাহিদার খবর রাখে সরকার, এটা কম ভরসার কথা নয়। ব্যাগ, জুতো, সাইকেলের মতো ছোট জিনিসও রাজনীতিতে বড়। কোচবিহারের সাজিদা পাভিন বলেন, “বাচ্চা নেই, বিধবা নেই, এমন সংসার নেই। আর থাকলে দিদির স্কিমও আছে।” স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিবারের প্রধান রূপে মেয়েদের নাম রাখাও মমতার একটা ‘মাস্টারস্ট্রোক।’ মেয়েদের অস্মিতা জাগিয়েছে এই সরকারি স্বীকৃতি। যে অস্মিতার অন্য দিক নাগরিকত্ব। বিজেপি-র নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় পুরোভাগে ছিল মেয়েরাই। তারা মনে করেছে, মমতাই সিএএ-এনআরসি রুখতে পারে। বামফ্রন্টের সমর্থন করত যে শ্রমিক সংগঠন-করা যে মেয়েরা, তারাও এ বার তৃণমূলে ভোট দিয়েছে, মনে করেন তহমিনা মণ্ডল। তিনি খেতমজুর, বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন।

Advertisement

শহুরে, শিক্ষিত বাঙালিনির কাছেও বিজেপি আমল পায়নি, এটা বৃহত্তর কলকাতার ছবি দেখলে বোঝা যায়। “বিয়েতে মেহেন্দি-সঙ্গীত কিংবা ধনতেরসে গয়না বিলাসে মাতলেও, বাঙালি মেয়ে কলকাতার রাস্তায় অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড দেখতে চায় না, ‘লাভ জিহাদ’ আইনের শাসন চায় না,” বলেন সাহিত্যিক তন্বী হালদার। মমতার রাজনীতিও অতটা সক্ষমতার নয়, যতটা সহায়তার। তবু প্রবল পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে মমতা নাছোড়বান্দা লড়াই করছেন, দেখছে মেয়েরা। বিজেপি তাঁকে নেতার প্রাপ্য সম্মান দেয়নি। “যে রাজনীতি ‘দিদি’ সম্বোধনকে মশকরা করে তুলতে চায়, ‘বেগম’ বলে বিঁধতে চায়, এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে বারমুডা পরতে বলে, তার কেন্দ্রের নারীবিদ্বেষ মেয়েরা বেশ অনুভব করেছে,” বলেন সমাজতত্ত্বের অধ্যাপিকা রুচিরা গোস্বামী। মমতাকে যে মেয়েরা চায় না, তারাও মমতার অপমান চায় না — বিজেপি এটা বোঝেনি, মনে করেন তিনি। মেয়েরা নিজের বাংলাকে চায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement