মুখে মাস্ক নেই। দূরত্ব-বিধিও শিকেয়। সুতির একটি বুথে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
লালগোলা জঙ্গিপুর রাজ্য সড়ক থেকে ভোটারদের লাইনটা এঁকেবেঁকে বুথের ভিতরে চলে গিয়েছে। অধিকাংশ ভোটারের মুখে মাস্ক থাকলে জায়গার অভাবে তাঁরা একে অপরের গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছেন। যার জেরে করোনা সুরক্ষাবিধি শিকেয় উঠেছে রঘুনাথগঞ্জের কাটাখালি পুঠিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অপরিসর ভবনে চারটি বুথ রয়েছে। আর এদিন সকালেই হাজার খানেক ভোটার লাইন দাঁড়িয়েছেন। ফলে ভোটারদের শারীরিক সুরক্ষাবিধি শিকেয় উঠেছে। এই বুথ উদাহরণ মাত্র।
রঘুনাথগঞ্জ থেকে শুরু করে লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, নবগ্রাম, সাগরদিঘি, রানিনগর সর্বত্রই শারীরিক দূরত্ববিধি মানা হয়নি। গায়ে গা ঘেঁষে তাঁরা লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিয়েছেন। রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভার ময়া পণ্ডিতপুরেও একই চিত্র। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি বুথে শ'পাঁচেক মহিলা ও পুরুষ ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অধিকাংশ মাস্ক পরে থাকলেও গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছেন। সেখানকার ভোটার জলিল মণ্ডল বলেন, ‘‘রোজার সময় বলে অনেকেই সকাল সকাল ভোট দিতে এসেছেন। তাই গা ঘেঁষে লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই।’’
জেলায় হুহু করে করোনা বাড়ছে। রবিবার জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা রুখতে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিল জেলা প্রশাসন। ভোটারদের মাস্ক পরা থেকে শুরু করে হাতে স্যানিটাইজ়ার, গ্লাভস দেওয়ার কথা যেমন বলা হয়েছিল, তেমনই শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলার জন্য গোলাকার দাগ কেটে দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের করোনা সুরক্ষাবিধি সংক্রান্ত অন্য সব নির্দেশ মানা হলেও শারীরিক দূরত্ববিধি মানা হয়নি। যার জেরে অনেকেই করোনার আতঙ্ক বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন।
যেমন রঘুনাথগঞ্জের কাঁটাখালি পুঠিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে নিযুক্ত এক কেন্দ্রীয় জওয়ান জানান, ছোট স্কুল ভবনে চারটি বুথ হয়েছে। বড় লাইনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ভিড় হয়েছে। আবার তেঘরি গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনের বুথে জনা পনেরো ভোটার লাইনের দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও দূরত্ববিধির বালা নেই। তবে অন্য ছবি দেখা গেল সেকেন্দ্রা হাইস্কুলের বুথে। সোমবার দুপুরে সেখানে অল্প কয়েকজন লোক ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্ত তাঁদের সকলকে দূরত্ববিধি মেনে লাইনে দাঁড়াতে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ভোটের লাইনে কেউ একে অপরের কাছাকাছি হলে লাঠি উজিয়ে তাঁদের দূরত্ববিধি বজায় রাখার ব্যবস্থা করেছেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অমিয় কুমার বেরা বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ রুখতে মাস্ক যেমন পরতে হবে, তেমনই ঘন ঘন হাত স্যানিটাইজ় করার পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখতে হবে। তবেই করোনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। দূরত্ববিধি না মানলে ভবিষ্যতে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।"