প্রতীকী চিত্র।
পুলিশকর্মীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করছেন পোস্টাল ব্যালট। সেই সংগ্রহ করা থেকে পুরো প্রক্রিয়া রেকর্ড করে রাখা হচ্ছে ভিডিয়ো ক্যামেরায়। পোস্টাল ব্যালট নিয়ে যাতে কোনও রকম অনিয়ম না হয়, তার জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর বা এসওপি ব্যবস্থা চালু করেছে লালবাজার।
পুলিশ সূত্রের খবর, থানা থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে যাঁরা পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের আবেদন করেছিলেন, তাঁদের ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট অফিস থেকে নির্ধারিত দিনে তুলতে হচ্ছে ব্যালট পেপার। শুধু তা-ই নয়, কত আবেদন করা হয়েছে এবং কত জন সেটি তুলেছেন, তা পৃথক ভাবে নথিবদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর সব কিছুই করতে হবে ভিডিয়ো ক্যামেরার সামনে। এমনকি ওই রেকর্ডিং যাতে সংরক্ষণ করে পৃথক ভাবে রাখা হয়, তার নির্দেশও দিয়েছে লালবাজার। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষকের নির্দেশে তৈরি ওই এসওপির চারটি নিয়ম মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে কলকাতা পুলিশের নির্দেশিকায়।
ভোট শুরুর আগেই কলকাতা পুলিশ কমিশনার-সহ নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন বিরোধী দলগুলি অভিযোগ জানিয়েছিল, কলকাতা পুলিশের পোস্টাল ব্যালট নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে। এমনকি, পুলিশকর্মীদের ভোটার আইডি ও আধার কার্ড নিয়ে ব্যালট তুলে প্রক্সি ভোট দেওয়া হতে পারে বলে অভিযোগ ছিল কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের কল্যাণ পর্ষদের (পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ড) বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ কমিশনারের কাছে নির্দিষ্ট ভাবে পুলিশের কল্যাণ পর্ষদের তিন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধেও শাসক দলের পক্ষে ভোট দানে প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছিল বিরোধী দলগুলি। তার পরেই মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতা পুলিশের ন’টি ডিভিশনে থাকা পুলিশের কল্যাণ পর্ষদের প্রতিনিধিদের থানা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়। এমনকি, কল্যাণ পর্ষদের বাকি সদস্যদের ভোটের কাজ দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা। এর পরেই প্রতিদিনের পুলিশি কাজ-সহ ভোটের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। পুলিশের কল্যাণ পর্ষদের নোডাল অফিসার, এক ওসিকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ওসি পদ থেকে রাজ্য পুলিশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখায় বদলি করা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে।
লালবাজার সূত্রের খবর, একের পর এক অভিযোগ আসার পরেই নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকেরা কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ওই এসওপি বানানোর জন্য বলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে কলকাতা পুলিশের কর্মী-অফিসারদের ব্যালট এসে পৌঁছেছে। তার পরেই সংশ্লিষ্ট অফিসার বা কর্মীকে ডেকে ওই এসওপি মেনে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছে, কয়েক হাজার পুলিশকর্মী ওই ব্যালটের আবেদন করেছিলেন। সেই মতো বিভিন্ন থানা বা ইউনিটের পুলিশকর্মী বা অফিসারকে সংশ্লিষ্ট রিজ়ার্ভ অফিসে ডেকে পাঠানো হচ্ছে সেটি সংগ্রহের জন্য। সংগ্রহ করার সময়ে ওই সব নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে। ব্যালট সংগ্রহের পরে সেটি নির্দিষ্ট পোস্ট অফিসে জমা দিতে হচ্ছে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের রির্টানিং অফিসারের কাছে পৌঁছে যাওয়ার কথা ওই ব্যালটের। ওই নিয়ম চালু হলেও প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশকর্মীদের একাংশের মধ্যেই। তাঁদের মতে, ব্যালট তুলে নিয়ে আসার পরে জোর করে সে সব কেউ দখল করে নেবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই কোথাও।
এক পুলিশকর্তা জানান, কমিশনারের জারি করা ওই নির্দেশিকা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউনিটের ডিসিদের। ব্যালট সংগ্রহ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখার জন্যই ওই ব্যবস্থা।