হাওড়ায় কাল মরিয়া লড়াই। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে ভোট শুরু হতে দু’মাস বাকি থাকতে দল ছেড়েছিলেন ওঁরা। তিন জন একসঙ্গে দিল্লি গিয়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি-তে। শনিবার চতুর্থ দফায় একসঙ্গেই ভাগ্যপরীক্ষায় নামছেন তৃণমূল ত্যাগী তিন নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রথীন চক্রবর্তী এবং বৈশালী ডালমিয়া। অন্য শিবিরে গিয়ে তাঁরা কতটা সুবিধা করতে পারেন, সে দিকে নজর রাখছে তৃণমূল। একই রকম ভাবে পদ্মশিবিরে গিয়ে নিজেদের কতটা প্রমাণ করতে পারেন তাঁরা, সে দিকে তাকিয়ে বিজেপি-ও।
তৃণমূল ত্যাগের পর বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ওঠবসের নিরিখে এই মুহূর্তে এগিয়ে রয়েছেন রাজীব। ডোমজুড়ে তাঁর হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন স্মৃতি ইরানি। তবে নিজের কেন্দ্রে যত বারই প্রচারে গিয়েছেন, বেশির ভাগ সময়েই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে রাজীবকে। সে সব ঘটনাকে ‘তৃণমূলের কারসাজি’ বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি। ডোমজু়ড়ে তাঁর বিরুদ্ধে কল্যাণ ঘোষকে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল। প্রার্থিতালিকায় নাম ওঠার পর থেকেই রাজীবের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানাচ্ছেন তিনি। রাজীব সেচমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের কোষাগারে রাজস্ব সবচেয়ে কমে যায়, বালি মাফিয়াদের সঙ্গে রাজীবের যোগ ছিল বলেও দাবি করেন কল্যাণ। এমনকি নিজের আত্মীয়দের রাজীব সরকারি চাকরি করে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন। ডোমজুড়ে তৃণমূল বনাম বিজেপি-র এই লড়াইয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে রয়েছেন সিপিএম-এর উত্তম বেরা।
রাজীবের মতোই বালিতে এ বার ‘মরণবাঁচন’ লড়াই বৈশালী ডালমিয়ার। তৃণমূল ছাড়ার আগে থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়তে শুরু করেছিল সেখানে। ‘বহিরাগত’ বৈশালীর পরিবর্তে ভূমিপুত্র চাই বলে জোড়াফুল শিবিরের অন্দরেই দাবি উঠছিল। সেই পরিস্থিতিতেই দলত্যাগী রাজীবের পক্ষে প্রকাশ্যেই সওয়াল করতে দেখা যায় তাঁকে। তৃণমূলের নানা সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বৈশালী। যার জেরে ২২ জানুয়ারি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। তার কয়েক দিন পরেই পদ্ম-পতাকা হাতে তুলে নেন বৈশালী। বিজেপি-র হয়ে ফের বালিতেই দাঁড়িয়েছেন বৈশালী। তাঁকে টক্কর দিতে দলের দাবি মেনেই বালির ‘ভূমিপুত্র’ রানা চট্টোপাধ্যায়কে নামিয়েছে তৃণমূল। চিকিৎসক হিসেবেও সুনাম রয়েছে রানার। তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আবার তরুণ মুখ দীপ্সিতা ধরকে নামিয়েছে সিপিএম। তাঁর হয়ে সম্প্রতি প্রচার সেরে গিয়েছেন সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য বৃন্দা কারাট।
হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী তৃণমূল ছাড়ার পর থেকে তাঁকে বেনামি সম্পত্তির মালিক, সুযোগসন্ধানী বলে কটাক্ষ করে আসছিল জোড়াফুল শিবির। যে শিবপুরে তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি, সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়ে এই সব অভিযোগ নিয়ে। তবে সেখানে প্রাক্তন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারির মতো তারকা প্রার্থীকে নামিয়ে চমক দিয়েছে তৃণমূল। প্রচারে কোনও খামতি রাখছেন না মনোজ। তবে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ রথীনকে সবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া মনোজ কতটা টক্কর দিতে পারবেন, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। এই কেন্দ্রে সংযুক্ত জনতা মোর্চার সমর্থনে ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে প্রার্থী হয়েছেন জগন্নাথ ভট্টাচার্য।
মধ্য হাওড়াতে তৃণমূলের প্রার্থী অরূপ রায়। তাঁর ‘খবরদারি’তে অতিষ্ঠ হয়েই লক্ষ্মীরতন শুক্ল, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বৈশালী ডালমিয়ার মতো নেতারা দল ছেড়েছিলেন বলে অভিযোগ সামনে এসেছিল। অরূপ নিজেও বিজেপি-র দিকে পা বাড়িয়েছিলেন, এমন খবরও সামনে এসেছিল।
তবে জেতা-হারা পরের বিষয়, এই মুহূর্তে মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি সারা হাওড়ায়। শনিবার এই জেলার মোট ৯টি কেন্দ্রে ভোট। হাওড়া কমিশনারেট এলাকার বালি, উত্তর হাওড়া, মধ্য হাওড়া, দক্ষিণ হাওড়া, শিবপুর, ডোমজুড়, সাঁকরাইল এবং হাওড়া গ্রামীণ এলাকার অন্তর্গত পাঁচলা এবং উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রে নির্বাচন। ভোট নিয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে প্রস্তুতি সারা। শুক্রবারই বিভিন্ন বুথে ইভিএম নিয়ে যাওয়ার কাজ সেরে ফেলা হয়েছে। বুথগুলিতে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। সব মিলিয়ে হাওড়া জেলার ৯টি কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৩,১২৪। প্রার্থী ৯৩ জন। ভোটার সংখ্যা ২২ লক্ষ ৬২ হাজার ০১৭। এর মধ্যে হাওড়া শহরেই মোট বুথের সংখ্যা ২ হাজার ৪৩৫, যার মধ্যে ১ হাজার ৪০০ বুথকেই স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশও মোতায়েন থাকবে। শুধুমাত্র শহর এলাকার জন্যই ১০৩ কোম্পানি এবং গ্রামীণ এলাকাগুলির জন্য ৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৫ হাজার রাজ্য পুলিশ থাকছে। গ্রামীণ এলাকার জন্য আরও ১ হাজার ৫০০ পুলিশ দায়িত্বে থাকবে। শহরে ৯৯টি কুইক রেসপন্স টিম, ১৬টি রেডিয়ো ফ্লাইং স্কোয়াড এবং ৪০টি মোবাইল ভ্যানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। অতি স্পর্শকাতর বুথগুলিতে নজরদারি চালাতে শহরে ৩টি এবং গ্রামে ১টি ড্রোন ব্যবহার করা হবে। গ্রামীণ এলাকার জন্য ৩৫ টি কুইক রেসপন্স টিম এবং ১৫ টি রেসপন্স টিম থাকবে।