দু’টি জঙ্গলমহল উৎসব, এলাকায় বিতর্কে তৃণমূল

একই এলাকায় দু’টি ‘জঙ্গলমহল উৎসব’। একটি তৃণমূল পরিচালিত সরকারের। অন্যটি ব্লক তৃণমূলের। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে বৃহস্পতিবার প্রশাসনের সমান্তরালে শাসক দলের একাংশ একই নামে অনুষ্ঠান করায় অস্বস্তিতে পড়েন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

সমীর দত্ত

বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৩
Share:

একই এলাকায় দু’টি ‘জঙ্গলমহল উৎসব’। একটি তৃণমূল পরিচালিত সরকারের। অন্যটি ব্লক তৃণমূলের। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে বৃহস্পতিবার প্রশাসনের সমান্তরালে শাসক দলের একাংশ একই নামে অনুষ্ঠান করায় অস্বস্তিতে পড়েন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বিষয়টি বিশদে খোঁজ নিয়ে দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য নব্যেন্দু মাহালির মন্তব্য, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ২০১৪ থেকে ‘জঙ্গলমহল উৎসব’ শুরু হয়। আদিবাসীদের সংস্কৃতির বিকাশ এই প্রতিযোগিতামূলক উৎসব লক্ষ্যে হয়ে আসছে। এ বার পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের ন’টি থানা এলাকায় এক দিন করে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। এ পর্যন্ত আটটি হয়েছে। সমস্যা হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, তাদের তরফে ঠিক হয় ব্লক অফিস লাগোয়া মুক্ত-মঞ্চে ওই উৎসব হবে। বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দারের দাবি, ‘‘আগেই প্রতিযোগীদের নামের তালিকা তৈরি হয়েছিল। পরে কয়েকজন ব্লক স্তরের নেতা তালিকায় নতুন নাম ঢোকাতে চেয়েছিলেন। তাতে এক দিনে উৎসব শেষ করা যেত না।’’ সেখানেই বিরোধের সূত্রপাত।

তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্বের পাল্টা দাবি, উৎসবের জন্য তাঁদের পছন্দ ছিল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সভা করে যাওয়া ডব্লুডি-র মাঠ। আয়তনে বড় ওই মাঠে আরও অনেক শিল্পী অনুষ্ঠান করতে পারতেন। কিন্তু ব্লক প্রশাসন জানায়, ব্লক অফিস চত্বর ছাড়া অন্যত্র উৎসব করা যাবে না।

Advertisement

এই বিরোধের মীমাংসা হয়নি। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, তাদের অনুমোদন ছাড়াই দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ব্লক প্রশাসনকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রঘুনাথ মাঝির দাবি, ‘‘আমাদের উৎসবে বহু শিল্পী এসেছেন। কিন্তু ব্লক প্রশাসনের অনুষ্ঠানে অত শিল্পী ছোট জায়গার জন্য সে সুযোগ পাননি। উৎসব ঘিরে মানুষের আবেগের কথা ব্লক প্রশাসন বুঝল না।’’

শুধু কি সেটাই আলাদা অনুষ্ঠানের একমাত্র কারণ? অন্য কথা শুনিয়েছেন দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি বঙ্কিম সিংহ, ব্লক যুব সভাপতি জগদীশ মাহাতো। তাঁরা দাবি করেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে এক কেজি আলু কিনতে গেলেও বিডিও নিজে কিনে তার জোগান দেবেন। তা হলে আমাদের ভূমিকা কী?’’ বিরোধীরা শাসক দলকে কটাক্ষ করছেন ঠিক এই জায়গায়। তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলকে সরকারি অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করতে না দেওয়াটা প্রশাসনের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির উদাহরণ। বান্দোয়ানের সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত বেসরার টিপ্পনী, ‘‘মনে হচ্ছে, সরকারি অনুষ্ঠানকে নিয়ে বান্দোয়ান ব্লক তৃণমূলের অন্য আশা ছিল।’’

ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে শাসকদলের বিরোধ অবশ্য পুরুলিয়ায় নতুন নয়। গত এক বছরের মধ্যে আড়শা, পুরুলিয়া ২ ও মানবাজার ২ ব্লকের বিডিও-র সঙ্গে তাদের সংঘাত বড় আকার নিয়েছিল। কোথাও বিডিওকে অফিসে ঘেরাও করে, কোথাও বিডিও-র বিরুদ্ধে ব্লক অফিসের কাছে সভা করে হুঙ্কার দিতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতাদের।

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো এ দিন বান্দোয়ানে সরকারি অনুষ্ঠানেই যান। প্রথমে তিনি দাবি করেন, ‘‘ব্লক অফিসেই জঙ্গলমহল উৎসব হচ্ছে। ব্লক তৃণমূল অন্যত্র যা করছে, তা দলের কর্মিসভা।’’ পরে তিনি দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য নব্যেন্দু মাহালিকে দলের অনুষ্ঠান দেখে আসতে বলেন। ওই অনুষ্ঠানে বান্দোয়ান ব্লক নেতারা ছাড়াও বান্দোয়ান পঞ্চায়েত সমিতির কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ ও জেলা পরিষদ সদস্যকে দেখা যায়। নব্যেন্দুবাবু পরে বলেন, ‘‘বিডিও-র সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’’ বিডিও দাবি করেছেন, ‘‘আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিই। কেউ আমাকে ভুল বুঝলে, কিছু করার নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement