প্রতীকী ছবি।
নির্বাচনের মুখে ভোট সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক জনের। তৃণমূলের দাবি, সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি তাদেরই এক কর্মী। বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার পূর্ব বেলেগাছি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, এই সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত ব্যক্তির নাম রুহুল আমিন মিদ্দে (৬২)।
রুহুল খুনের পরে এলাকা পরিদর্শন করে তৃণমূলের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, সিপিএম, আইএসএফ ও বিজেপি মিলে বাংলায় খুনের রাজনীতি শুরু করেছে। খুন করে এলাকা দখলের চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন সফল হবে না।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার বারুইপুর থানার বেলেগাছি এলাকায় সিপিএম-আইএসএফ জোটের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ, এক পক্ষ অপর পক্ষকে বাঁশ-লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। এই ঘটনায় আহত হন ১০ জন। তার মধ্যে রুহুল-কে বারুইপুর হাসপাতাল ঘুরে ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা নৌসার আলি মিদ্দের অভিযোগ, ‘‘মধ্য বেলেগাছিতে বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রের প্রার্থী বিভাস সর্দার-এর সমর্থনে প্রচার চালাচ্ছিলাম। তখন পঞ্চায়েত উপপ্রধান সইফুদ্দিন মোল্লাকে লক্ষ্য করে আপত্তিকর মন্তব্য করে জোটের সমর্থকেরা। দু'পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। লাঠি আর লোহার রড নিয়ে আক্রমণ চালায় সিপিএম-আইএসএফ ও বিজেপি কর্মীরা। আমাকেও মারতে যায়। এর মধ্যে পড়ে গুরুতর ভাবে জখম হয় আমার দাদা রুহুল। দাদার মাথায় লাঠি ও রড দিয়ে মারা হয়।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, রাতে মাঠে বসে মিটিং করছিলেন আইএসএফ ও সিপিএম কর্মীরা। ওই সময় নৌসার-সহ অন্যরা রাস্তায় হাজির হয়ে তাঁদের উপর টর্চ মারে। এর পরেই কে টর্চ মারলো তা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। মারামারি বেঁধে যায়. তার জেরেই এই ঘটনা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল এলাকায় আসেন। নিহতের বাড়িতেও যান। প্রতিনিধিদলে ছিলেন বারুইপুর পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী তথা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, বারুইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রের প্রার্থী বিভাস সর্দার।
বিমানবাবু বলেন, ‘‘এলাকা দখলের নামে খুনের রাজনীতি শুরু করেছে সিপিএম ও আইএসএফ। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভাবে দোষীদের গ্রেফতারের আবেদন জানিয়েছি।’’ বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম
প্রার্থী স্বপন নস্কর বলেন, ‘‘মাঠের মধ্যে বসে রাতে কেন তাঁরা মিটিং করছেন, তার জবাব চান তৃণমূল কর্মীরা। আমাদের তিন জন কর্মী এখনও নিখোঁজ।’’
অভিযোগ মানতে চাননি বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার সিপিএম প্রার্থী স্বপন মন্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এক কর্মীর বাড়িতে বৈঠক চলছিল। সেখানে তৃণমূল কর্মী ও কয়েক জন দুষ্কৃতী সংযুক্ত মোর্চার নেতাদের উপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন আমাদের কর্মীরা।’’ ঘটনার পর সেকুলার ফ্রন্টেরও চার কর্মী নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন স্বপনবাবু।
ঘটনার পরে এলাকায় শুরু হয়েছে তল্লাশি। এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ সিপিএম নেতা অনির্বাণ শর্মা-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। বারুইপুর জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘নিহতের পরিবারের তরফ থেকে ১৫ জনের নামে এফআইআর করা হয়েছে। একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ বারুইপুর পুলিশ জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, উভয় পক্ষের প্রায় ১০ জন গুরুতর জখম হয়েছেন।