গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মাত্র তিন বছরের মধ্যেই পয়লা নম্বর থেকে তৃতীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে জোট। অন্য দিকে, প্রায় ৩ গুণ ভোট বাড়িয়ে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে বিজেপি। ২০১৬-র বিধানসভা এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের এই তুলনামূলক পরিসংখ্যান নিয়েই নীলবাড়ির লড়াইয়ের সোমবার সপ্তম দফায় রাজ্যের ৫ জেলার ৩৪টি আসনে ভোট।
সপ্তম দফায় মোট ৩৬টি আসনে ভোটের কথা থাকলেও দুই প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে ভোট স্থগিত হয়েছে। ওই দুই কেন্দ্রে ভোট হবে আগামী ১৬ মে। সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬ এবং পশ্চিম বর্ধমানের ৯টি বিধানসভা আসনে ভোট হবে। এ ছাড়া মালদহের ১২টির মধ্যে ৬, মুর্শিদাবাদ জেলার ২২টির মধ্যে ৯ (সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর বাদে) এবং কলকাতার ১১টি আসনের মধ্যে ৪টি রয়েছে এই তালিকায়।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ৫ জেলার এই ৩৬ আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ১৪টিতে (সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর-সহ)। জোট বেঁধে লড়ে কংগ্রেস ১২ এবং বামেরা ১০টি আসনে জেতে। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এই আসনগুলির একটিতেও জিততে পারেনি। ৩ বছর পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফলের হিসাব বলছে তৃণমূল ৫ জেলার ওই ৩৬টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে (জঙ্গিপুর-সহ) এগিয়ে রয়েছে। তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসা বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ১৬টিতে। অন্য দিকে, কংগ্রেস ৪টি (সামশেরগঞ্জ-সহ) আসনে এগিয়ে থাকলেও বামেদের ঝুলি শূন্য। তবে ২০১৯-এ কংগ্রেসের এগিয়ে থাকা ৪টি আসনের মধ্যে মালদহের চাঁচোল এবং মালতিপুরে (দু’টি কেন্দ্রই মালদহ-উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত) বামেদের প্রার্থী থাকলেও মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা এবং সামশেরগঞ্জে (কেন্দ্র দু’টি মালদহ-দক্ষিণ লোকসভার অন্তর্গত) বামেরা সমর্থন করেছিল কংগ্রেসকে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১৬-র বিধানসভা ভোটে এই ৩৬টি আসন মিলিয়ে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৬.৮২ শতাংশ ভোট। বিজেপি ১৩.০৮ এবং বাম-কংগ্রেস জোট ৪৪.০৩ (২১.৫৯+২২.৪৪) শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের ভোট কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩৮.৫৪ শতাংশ। বিজেপি-র ভোট প্রায় ৩ গুণ বেড়ে হয়েছে ৩৬.৫৭ শতাংশ। অন্য দিকে, বামেরা ৬.৮৪ এবং কংগ্রেস ১৩.৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, লোকসভা ভোটের দু’বছর বাদে এ বার ফের জোট করার পরে একদা রাজনৈতিক গড়ে ধস রোখাই কংগ্রেস এবং বামেদের মূল চ্যালেঞ্জ।
সপ্তম দফায় দক্ষিণ কলকাতার ৪টি কেন্দ্রে ভোট হবে সোমবার— ভবানীপুর, রাসবিহারী, কলকাতা বন্দর এবং বালিগঞ্জ। ২০১৬-য় চারটি আসনই ছিল তৃণমূলের দখলে। ভবানীপুরে জিতেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল বলছে, অন্য ৩ আসনে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও রাসবিহারীতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ভোটে এগিয়ে বিজেপি।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০১৬-য় তৃণমূল জিতেছিল ২টিতে। বাম-কংগ্রেস জোট ৪টি আসনে জিতেছিল। এর মধ্যে আরএসপি ২, কংগ্রেস এবং সিপিএম ১টি করে আসন দখল করেছিল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল জানাচ্ছে, তৃণমূল এবং বিজেপি ৩টি করে আসনে এগিয়ে। আরএসপি-র জেতা কুশমুণ্ডি এবং সিপিএমের জেতা হরিরামপুরে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। অন্য দিকে, কংগ্রেসের জেতা আসন গঙ্গারামপুর এবং আরএসপি-র দখলে থাকা বালুরঘাট আসনে এগিয়ে গিয়েছে ৩ বছর আগে জেলার খাতা খুলতে না পারা বিজেপি।
সপ্তম দফায় ভোট হতে যাওয়া মালদহের ৬টি আসনই ২০১৬-য় জোটের দখলে গিয়েছিল। এর মধ্যে কংগ্রেস ৪ এবং সিপিএম ২টি জেতে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসাব বলছে, তৃণমূল, বিজেপি এবং কংগ্রেস ২টি করে আসনে এগিয়ে রয়েছে। সিপিএমের দখলে থাকা তফসিলি প্রভাবিত আসন হবিবপুর এবং গাজোলে এগিয়ে বিজেপি। অন্য দিকে, ২০১৬-য় কংগ্রেসের জেতা হরিশ্চন্দ্রপুর এবং রতুয়ায় এগিয়ে তৃণমূল।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মুর্শিদাবাদের ১১টি (সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর-সহ) আসনের মধ্যে ২০১৬-য় জোট ৮টি আসন পেয়েছিল। এর মধ্যে কংগ্রেস ৬ এবং সিপিএম ২টি। তৃণমূল ৩টিতে জিতেছিল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসাব বলছে, তৃণমূল ৮, কংগ্রেস ২ এবং বিজেপি ১টি আসনে এগিয়ে। তৃণমূলের জেতা সামশেরগঞ্জে কংগ্রেস এগোলেও অধীর চৌধুরীর জেলার সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, লালগোলা, রানিনগর আসনে ৩ বছরের মধ্যেই ‘হাত’কে পিছনে ফেলেছে জোড়াফুল। সিপিএমের জেতা ভগবানগোলা এবং নবগ্রামেও এগিয়ে তৃণমূল। অন্য দিকে, ২০১৬-য় কংগ্রেসের জেতা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে এগিয়ে রয়েছে পদ্ম।
পশ্চিম বর্ধমানের ৯টি আসনে ৩ বছরের ব্যবধানে চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন ঘটেছে বিজেপি-র। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে এই আসনগুলির মধ্যে ৫টিতে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও ২০১৬-য় একটিতেও জিততে পারেনি। ৫টিতে তৃণমূল জিতেছিল। সিপিএম ৩ এবং তার সহযোগী কংগ্রেস ১টিতে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল বলছে, ৯টি কেন্দ্রেই এগিয়ে বিজেপি।