রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ’ও ব্রায়েন এবং সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার।
নন্দীগ্রামে দুষ্কৃতীদের জড়ো করেছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। প্রথম দফার ভোটগ্রহণের আগের দিন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এই অভিযোগ জানাল তৃণমূল। যদিও নন্দীগ্রামে ভোট গ্রহণ দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল। তৃণমূলের অভিযোগ, অশান্তি পাকাতেই দুষ্কৃতীদের জড়ো করেছেন বিজেপি প্রার্থী। শুক্রবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ’ও ব্রায়েন ও সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার কমিশনে গিয়ে এই অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কাঁথি উত্তর ও দক্ষিণ, ভগবানপুর, খেজুরি, এগরা, রামনগর ও পটাশপুরে ভোটের আগে ও ভোট গ্রহণের দিন অশান্তি পাকাতে চাইছে বিজেপি। চিঠির দ্বিতীয় ধাপে শুভেন্দু অধিকারীর নাম করে উল্লেখ করা হয়েছে ৯টি স্থানের। সেই তালিকায় রয়েছে বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পবিত্র কয়ালের বাড়ি, বোয়ালের একটি ইটভাটা, সামশাবাদ, গোকুলনগর, নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক আস্তানার কথা। তৃণমূল দাবি করেছে, স্থানীয় পুলিশকে জানিয়ে কাজ হয়নি, তাই কমিশনকে বলা হচ্ছে, এই স্থানগুলিতে সশস্ত্র বহিরাগতরা জড়ো হয়েছে। জড়ো করেছেন শুভেন্দু। তাই শান্তিতে নির্বাচন করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিক কমিশন। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, পূর্ব মেদিনীপুরের ৭টি কেন্দ্রে নিরাপত্তার স্বার্থে আরও বেশি বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ রাখা হোক। কারণ এই কেন্দ্রগুলিতেও বিজেপি অশান্তি ছড়াতে চাইছে।
শনিবার রাজ্যে প্রথম দফার নির্বাচন। ৫ জেলার মোট ৩০টি আসনে প্রার্থী ভাগ্য বাক্সবন্দি হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটপ্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য কমিশন ৬৫৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে। তাও নন্দীগ্রাম ও আশেপাশে কয়েকটি কেন্দ্রে অশান্তির মেঘ দেখছে তৃণমূল। কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে এসে সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নির্বাচনের দিন অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে। পটাশপুর, এগরা, বলরামপুর, খেজুরি-সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র রয়েছে সেই তালিকায়। খেজুরিতে বৃহস্পতিবারও প্রার্থীর উপরে হামলা হয়েছে। এ ছাড়াও নন্দীগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় বিরোধী প্রার্থী দুষ্কৃতীদের এনে রেখেছেন। আমাদের মনে হয়, এর ফলে রাজ্যের ভোটাররা শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে পারবেন না। আমাদের এই আশঙ্কার কথা নির্বাচন কমিশনকে প্রমাণ-সহ জানিয়েছি।’’
বৃহস্পতিবারই খেজুরির তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম দাসের গাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। পার্থ অভিযোগ করেন, বিজেপি তাঁর গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। খেজুরির বীরবন্দর এলাকায় গাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ করেন তিনি। কমিশনে অভিযোগ জানানোর পর বেরিয়ে এসে কাকলি সে ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, ‘‘প্রার্থীর উপর হামলা হওয়া ভারতের নির্বাচনী আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। একজন প্রার্থীকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ ছাড়া নন্দীগ্রামে বেশ কয়েকটি বাড়িতে দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়েছে। স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে সেই খবর আমরা পেয়েছি। কারও বাড়ির ছাদে, কোনও বাড়ির দোতলায় ২০-৩০ জনকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’’
বহিরাগত ইস্যু নিয়ে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি প্রায় প্রতিটি সভার কর্মী সমর্থকদের সতর্ক করে বলেছেন, বহিরাগতরা ঢুকতে এলে প্রশাসনকে খবর দিতে। সেই অভিযোগের সুর টেনেই কমিশনে তৃণমূলের বক্তব্য, নন্দীগ্রামে যারা জড়ো হয়েছে, তারা কেউ পার্শ্ববর্তী মহিষাদল থেকে এসেছে, কেউ কলকাতা থেকে গিয়েছে। এরা কেউ ওখানকার ভোটার নয়। একটি কেন্দ্র থেকে বহিরাগতদের ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে বেরিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। উল্টে দুষ্কৃতীদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কাকলি বলেছেন, ‘‘আমরা চাই দুষ্কৃতীমুক্ত নির্বাচন করুক কমিশন।’’