পাশাপাশি: খাতড়া স্টেডিয়ামের সভার মঞ্চে বিজেপির নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার দুপুরে। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভা বলে কথা। কিন্তু বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের খাতড়া স্টেডিয়ামের মাঠের অর্ধেকের বেশি অংশ সোমবার ফাঁকা থাকল কেন— প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ওই সভায় রোদ থেকে বাঁচতে দর্শকদের জন্য গড়া হয়েছিল তিনটি শামিয়ানা। তার মধ্যে একটি ভরলেও, বাকি দু’টি কার্যত ফাঁকা থাকতে দেখা গিয়েছে এ দিন। গত নভেম্বরে জেলা সফরে আসা শাহের সঙ্গে দলীয় কর্মীদের কার্যত স্রোত দেখা গিয়েছিল। তার চার মাসের মধ্যে কী এমন হল তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
পুলিশের হিসেবে, এ দিন ওই মাঠে বড়জোর ছ’হাজার মানুষ এসেছিলেন। যদিও বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, “অমিতজির সভায় ৩০ হাজার মানুষের ভিড় জমানোর লক্ষমাত্রা নিয়েছিলাম। কিন্তু এ দিন ৬০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। তিনটি শামিয়ানাই ভরে যায়। বাইরেও অনেকে ছিলেন।” বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরার কটাক্ষ, “আসলে ৬০ হাজার মানুষের জমায়েত কেমন হয়, তা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের ধারণাই নেই।”
এ দিন জেলার জঙ্গলমহলের তিন বিধানসভা কেন্দ্র রানিবাঁধ, রাইপুর ও তালড্যাংরার বিজেপি প্রার্থীদের প্রচারে সভা করেন শাহ। গত লোকসভা নির্বাচনে রানিবাঁধ কেন্দ্রে ১৫,৮১৪ ভোটে, রাইপুরে ৩,৩৫১ ভোটে এবং তালড্যাংরায় ১৭,২৬৮ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। তা হলে এ দিন মাঠের বাকি দুই শামিয়ানা ভরল না কেন? তবে কি জঙ্গলমহলে বিজেপির সমর্থন কমছে? যদিও জেলা বিজেপি নেতৃত্ব তা মানছেন না। জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরাও জানাচ্ছেন, এ দিনের সভার ভিড় ধরে সমগ্র জঙ্গলমহলের মানুষের মন পড়ার চেষ্টা করা উচিত হবে না।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বিভিন্ন ‘তত্ত্ব’ খাড়া করছেন। প্রথমত, নভেম্বরে বাঁকুড়ায় বিজেপির আয়োজিত বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়ান শাহ। সে বিতর্ক নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে। এ দিনও লাগোয়া জেলা পুরুলিয়ার ঝালদায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে সে বিতর্কের কথা শোনা গিয়েছে। ওই বিতর্কের রেশ আদিবাসী সমাজের মনে রেখাপাত করেছে কি না, তা নিয়ে এ দিনের সভার পরে, নানা মহল চর্চা শুরু করেছে।
দ্বিতীয়ত, তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া রানিবাঁধ বিধানসভার কিছু নেতাকে নিয়ে দলের পুরনো কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। তার জের সভায় পড়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। শাহের সভা শেষে বিজেপির রানিবাঁধের এক মণ্ডল কার্যকর্তা বলেন, “তৃণমূলে থাকাকালীন যে নেতারা আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা চালানোয় অভিযুক্ত, এখন তাঁদের অনেকে বিজেপিতে। দলের প্রার্থী ওই নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায়, অনেকের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। বহু কর্মী তাই সভায় আসেননি।” রানিবাঁধ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ক্ষুদিরাম টুডুর অবশ্য দাবি, “সমস্ত স্তরের কর্মীরা সক্রিয় ভাবে সভায় যোগ দিয়েছিলেন।” বিজেপি জেলা সভাপতি বিবেকানন্দবাবুরও দাবি, “দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে একজোট হয়ে সবাই লড়ছেন। জঙ্গলমহলের মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।