প্রতীকী ছবি।
কেবল মাত্র একবারই কংগ্রেস দখল করেছিল ডোমকল বিধানসভা। তাছাড়া বিধানসভার জন্মলগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত বামেরা দখল রেখেছে ডোমকল। ফলে রাজ্য জুড়ে ডোমকলকে লাল দুর্গ হিসেবেই চেনে সকলে। এমনকি রাজ্যে পালাবদল হয়ে গেলেও ডোমকল বিধানসভা দখলে রেখেছে বামেরা। কিন্তু তারপরে গত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ডোমকল পুরসভার প্রথম নির্বাচনে রক্তক্ষরণ হয়েছে বাম কংগ্রেসের। শাসকদলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। এমনকি গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে সক্ষম হয়নি বাম কংগ্রেস। ফলে এবার বিধানসভায় কি হবে তা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ দানা বেঁধেছে ডোমকলের মানুষের মনে। দীর্ঘদিনের বিধায়ক আনিসুর রহমানকে সরিয়ে একেবারে তরুণ মুখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রার্থী করেছে সংযুক্ত মোর্চা। আবার সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গী কংগ্রেসও এবার পাশে দাঁড়িয়েছে বামেদের। ফলে মোর্চার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এবারও তৃণমূল হারবে ডোমকল বিধানসভায়, যদিও তৃণমূল বলছে জয় কেবল
সময়ের অপেক্ষা।
মূলত কৃষি প্রধান এলাকা ডোমকল। কিন্তু কৃষিনির্ভর এলাকা হলেও এখানকার উৎপাদিত ফসল শহরে পৌঁছে দেওয়ার তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে আনাজ চাষ করে ভালো ফলন হলেও ভাল দাম পায় না বাজার না থাকায়। রেল যোগাযোগ না থাকায় শহরে মাল পৌঁছনোর ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা থাকে। ডোমকলের বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় খুব ভালো আনাজ চাষ হলেও তা শহরে পৌঁছনোর কোনও ব্যবস্থা নেই, ফলে অনেক সময় কম দামেই ফড়েদের হাতে তুলে দিতে হয় তা। চাষের পাশাপাশি কুটির শিল্প বলতে শাখা শিল্পের উপরে নির্ভর করে ব্লকের জিতপুর গ্রাম ও ডোমকল পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের একটি বড় এলাকা। লকডাউনের পর থেকে সেই ব্যবসাতেও ভাটার টান। ফলে নতুন করে এক সঙ্কটের মুখে পড়েছে শাঁখা শিল্প। কেবল অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও জেলার মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকার নাম ডোমকল। তবে বছর ১৫ থেকে এলাকার মানুষ কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে ভিন রাজ্যের হাত ধরে। মূলত পরিযায়ী শ্রমিক এর কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছলতা এসেছে ডোমকল এলাকার মানুষের। জেলার মধ্যে সবচাইতে বেশি ভিন রাজ্যে কাজ করে এই এলাকার মানুষ।
বাম আমল হোক বা ডান, রাজনীতির হিংসা আর খুন খুনি ডোমকলের নামের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। একটা সময় নির্বাচন মানেই রক্ত নিয়ে হোলি খেলা চলত ডোমকলে। উভয় রাজনৈতিক দলের নেতারাই তাতে পরোক্ষ ভাবে মদত দিয়ে যেতেন বলেই সাধারণ মানুষের দাবি। তাদের কথায়, একটা সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা অশিক্ষিত সাধারণ মানুষকে পুতুল নাচের মত করে নাচাত। নিজেদের দলের স্বার্থে তাদেরকে খুনোখুনির দিকে ঠেলে দিত। এমনকি এই হিংসা বন্ধের জন্য তেমন কোনও উদ্যোগও নেইনি তাঁরা। কেবলমাত্র ঘটনার পর লাশের দখলদারি নিতেই মাঠে নামত। তবে বিগত বছর দশেকের সেই খুনোখুনির সংখ্যা কমেছে, অন্যদিকে রাজনীতিতে দুর্নীতি পৌঁছে গিয়েছে চরমে।
বিশেষ করে পঞ্চায়েত স্তরে যেভাবে দুর্নীতি শুরু হয়েছে তাতে অতিষ্ঠ গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। কেবল গ্রামাঞ্চল নয়, নতুন তৈরি হওয়া পুরসভাতেও কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি, করছেন পুর নাগরিকেরা।
জেলার বড় থানার মধ্যে একটি ডোমকল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত থানা ভাগ দূরের কথা কোনও পুলিশ ফাঁড়িও তৈরি হয়নি ডোমকলে। ফলে প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানোর ক্ষেত্রে বড় সমস্যায় পড়তে হয় প্রশাসনকে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে একটি জিডি করার জন্য ছুটতে হয় ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে ডোমকলে। ডোমকল পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের জফিকুল ইসলাম বলছেন, "বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন যেটা হয়েছে তা আমাদের সরকারের আমলেই হয়েছে। প্রতিটা গ্রামের রাস্তা থেকে বিদ্যুৎ এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়িয়েছে আমাদের সরকার। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও সাইকেল থেকে জুতো পোশাক এমনকি আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে। ফলে আক্ষরিক অর্থে মানুষের যে উন্নয়ন হয়েছে তা গত দশ বছরই হয়েছে।"
অন্যদিকে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক ডোমকলের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, "উন্নয়ন বলতে ডোমকলের ডামাট বাহিনী তৈরি হয়েছে, আর পঞ্চায়েত ও পুরসভার অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সেই অর্থে কিছু মানুষের দামি কালো গাড়ি কেনা হয়েছে। তাছাড়া আর কোনও উন্নয়ন হয়নি ডোমকলের।