বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে থাকা দুটি কেন্দ্র ছিনিয়ে নিতে চমক দিতে গিয়ে কি বিপাকে পড়ল তৃণমূল? কর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, সেই চমক কি কাজে আসবে ভোটের লড়াইয়ে?
ফরাক্কা ও ভগবানগোলা আসন দুটি দীর্ঘদিন কংগ্রেস ও বামেদের কব্জায়। ফরাক্কায় ২৫ বছর বিধায়ক রয়েছেন কংগ্রেসের মইনুল হক। ভগবানগোলাকে গত ৪৭ বছর ধরে একবার ছাড়া কখনও বামেদের দখল থেকে মুক্ত করতে পারেনি কেউই। শাসক দল তৃণমূলে দুটি জায়গাতেই রয়েছে প্রবল গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের কারণে ব্লক সভাপতির বদলে ফরাক্কায় দল চালাতে হচ্ছে ১১ জনের কমিটি দিয়ে। দুটি কেন্দ্রেই প্রার্থী পদের দাবিদার ছিলেন অন্তত ১১ জন। দুটি কেন্দ্রেই দাবি উঠেছিল স্থানীয়দের কাউকে প্রার্থী করার। শেষ পর্যন্ত এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ধামাচাপা দিতেই সম্ভবত ফরাক্কায় দলের স্থানীয় নেতাদের বাদ দিয়ে শমসেরগঞ্জ থেকে মনিরুল ইসলামকে প্রার্থী করা হয়েছে।
দলনেত্রীর মুখ থেকে তাঁর নাম শুনেই ফরাক্কার দলীয় নেতাদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রার্থীর খোঁজ। ঘণ্টা খানেক কাটতেই জানা যায় শমসেরগঞ্জের ঘনশ্যামপুরের বাসিন্দা বিড়ির পাতার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম প্রার্থী ফরাক্কায় তৃণমূলের। এক সময় দুটি পঞ্চায়েতের পর্যবেক্ষকও ছিলেন তিনি তৃণমূলের। দলের সঙ্গে সেভাবে জড়িত না থাকলেও তৃণমূল পরিবারের লোক তিনি।
ফরাক্কার তৃণমূল নেতারাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কোন খুঁটির জোরে ফরাক্কায় উড়ে এসে জুড়ে বসলেন তিনি।
তবে ফরাক্কার তৃণমূল নেতা অরুণময় দাস বলছেন, “প্রার্থী বাইরে থেকে আসাতে ভালই হয়েছে। ভাল লড়াই হবে ফরাক্কায়।”
তৃণমূলের বিদায়ী ব্লক সভাপতি এজারত আলি বলছেন, “এ ব্যাপারে কিছুই বলব না এখন। ২ মে গণনার পর ফলাফলই আমার প্রতিক্রিয়া।”
ফরাক্কায় দলের নির্বাচক কমিটির এক নেতা বলছেন, “ফরাক্কায় ৫ বছরের ছেলে থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ এক নামে চেনেন কংগ্রেস প্রার্থী মানুদাকে। তার বিরুদ্ধে এমন অজানা অচেনা প্রার্থী কি চমক দেবে, যাকে মানুষের কাছে চেনাতেই সময় লাগবে? দল যখন তাকে প্রার্থী করেছে জেতাবার দায়িত্বও নিশ্চয় দলের।”
মনিরুল অবশ্য বলছেন, “৮০ শতাংশ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমি। দলনেত্রীর ছবি সামনে রেখে ভোট করব উন্নয়নের কথা বলে।”
ভগবানগোলায় অবশ্য প্রথম থেকে দাবি উঠেছিল ভূমিপূত্র প্রার্থী চায়। এমনকি তৃণমূল নেতা রাজীব হোসেন প্রার্থী হতে পারেন আশঙ্কায় বহিরাগত প্রার্থী হটাও বলে পোস্টারও পড়ে ভগবানগোলায়। কাজেই হুগলি থেকে ৭০ বছরের আইনজীবী ইদ্রিশ আলিকে প্রার্থী করার ঘটনায় দলের কর্মী ও নেতারাও চমকে উঠেছেন।
দলের ব্লক সভাপতি আব্দুর রউফ বলছেন, “এ ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করব না। দল প্রার্থী করেছে, আমি তার হয়ে ভোট করব।কোনও সমস্যা হলে দল বুঝবে,আমার কোনও দায় নেই। ” ভগবানগোলায় তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে থাকা জেলা কমিটির সহ সভাপতি সাগির হোসেন বলছেন, “আমি ভগবানগোলাকে হাতের তালুর মত চিনি। তবু বলতে পারব না ইদ্রিশ আলি প্রার্থী হওয়ায় ফল কি হবে। ৭০ বছরের ইদ্রিশ আলিকে বাইরে থেকে এনে প্রার্থী করা কেন ? এখানে কী দলের যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যেত না – এই প্রশ্নই তো তুলছেন ভগবানগোলার মানুষ।”