চলবলপুরে মীনাক্ষীর বাড়িতে টেলিভিশনে নজর তাঁর বাবা-মা ও অন্য পরিজনদের। ছবি: পাপন চৌধুরী।
সংবাদমাধ্যম থেকে মঙ্গলবার নিকটজনেরা জেনেছিলেন, বাড়ির মেয়ে ‘আক্রান্ত’। মেয়ের খোঁজ নিতে তড়িঘড়ি এসএমএস করেন কুলটির সাগর মুখোপাধ্যায়। দিনভর চিন্তার পরে ওই দিন রাত ১টায় পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের সিপিএম প্রার্থী, মেয়ে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত হন মা পারুলদেবী, বাবা সাগরবাবু। পাশাপাশি, ভাইঝিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন মীনাক্ষীর কাকা, তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সহ-সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও।
কুলটির চলবলপুরের মেয়ে, সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী মীনাক্ষী। পরিবার সূত্রে জানা গেল, বাড়ির আত্মীয়-স্বজনেরা বারবার ফোন করে মীনাক্ষীর খোঁজ নিচ্ছেন। জানাচ্ছেন শুভেচ্ছাও। বুধবারও বার কয়েক কথা হয়েছে মেয়ের সঙ্গে, জানান মা পারুলদেবী ও বাবা সাগরবাবু।
ভোট-পর্বে মেয়ের জন্য কী পরামর্শ? বাম-রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত মুখোপাধ্যায় দম্পতি বলছেন, ‘‘ওকে একটাই কথা বলছি, শরীর আর মন, দু’টোই যেন ঠিক থাকে। এই দু’টোই লড়াইয়ের রসদ।’’ এই গোটা পর্বে অবশ্য নন্দীগ্রামে গিয়ে মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর সময় পাননি সাগরবাবু। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক সাগরবাবু কারণটিও খোলসা করেন: ‘‘আমাদের এলাকা, কুলটিতে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত। কী ভাবে যাব মেয়ের কাছে?’’
তবে মেয়ের উপরে ‘হামলার’ খবর সামনে আসতেই চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেন মা পারুলদেবী। পারিবারিক সূত্রে জানা গেল, মাসখানেক আগেই মীনাক্ষীর ভাইয়ের অপমৃত্যু হয়েছে। এই অবস্থায় বাড়িতে শোকের আবহ রয়েছে। পারুলদেবী বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে ভিডিয়ো কলে মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ও ঠিক আছে জেনে, আর চিন্তা হচ্ছে না। বরং, গর্ব হচ্ছে, এত বড় ময়দানে লড়ছে বলে।’’ ঘটনাচক্রে, বুধবারই নির্বাচন কমিশন মীনাক্ষীর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। আগে তাঁর এক জন রক্ষী ছিল। এখন থেকে চার জন রক্ষী তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর মীনাক্ষীকে নিয়ে একই রকম গর্ব হচ্ছে পড়শি গোরাচাঁদ রায়েরও। তাঁর কথায়, ‘‘পাশের বাড়ির মেয়েটা যে ভাবে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মাঝে দাঁড়িয়েও আলাদা ভাবে নজর কেড়েছে, এটা অভিনন্দনযোগ্য। ও বরাবরই লড়াকু।’’ যেখান থেকে মীনাক্ষীর রাজনৈতিক-জীবনের সূত্রপাত, সেই কুলটিতে তাঁর সতীর্থদের মধ্যে ধরা পড়েছে উচ্ছ্বাস। তেমনই এক জন সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লড়াই কাকে বলে, দেখিয়ে দিল মীনাক্ষী।’’
রাজনৈতিক মতাদর্শে ভাইঝির শত-যোজন দূরে অবস্থান মীনাক্ষীর কাকা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের। তবে তিনিও দ্বিতীয় দফার ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে বুধবার বলেছেন, ‘‘ওর জয় চাইতে পারব না। কিন্তু ওর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।’’
প্রচার-পর্ব শেষ, ভোটও শেষ হবে— এর পরে কী? নন্দীগ্রাম থেকে ফোনে মীনাক্ষী জানান, এখনও অনেক কাজ বাকি। বলেন, ‘‘এর পরে জামুড়িয়া-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে সতীর্থদের জন্য প্রচারে নামব।’’ নন্দীগ্রামের মানুষ তাঁর পাশে আছেন— প্রত্যয়ী শোনায় মীনাক্ষীর গলা। কী করে বুঝলেন? জবাব আসে, ‘‘খাওয়াদাওয়া থেকে থাকার ব্যবস্থা, সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় নন্দীগ্রামের মা-কাকিমারাই করে দিয়েছেন। নীতির লড়াইয়ে নন্দীগ্রামকেও পাশে পাচ্ছি।’’