মেদিনীপুরের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমদফা ভোটের প্রচার শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরের জনসভায় সুর চড়িয়ে বললেন, ‘‘সব্বাইকে ধমকে রেখে দিয়েছে। এ রকম প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীতে যেন আর না জন্মায়। গুন্ডাগিরি, দাঙ্গাগিরি।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘তুমি বড়জোর আমায় মেরে ফেলতে পার। তোমরা তো গাঁধীজিকেও মেরে ফেলেছিলে। তাই বলে কি দেশ চলে না?’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি যে হেতু লড়াই করি, তাই আমায় বলে ‘তোমায় দেখাব’। আমায় কাঁচকলা দেখাবে।’’ এরপরই সভায় আসা সমর্থকদের উদ্দেশে মমতার আর্জি, ‘‘আপনারা বহিরাগত গুন্ডাদের সঙ্গে কোনও আপস করবেন না।’’
দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া অধিকারীদের নিয়েও আক্রমণাত্মক ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। বিজেপিতে যোগদানের মঞ্চেই দুই মেদিনীপুরের সব বিধানসভা আসন জয়ের দাবি করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এ দিনের মেদিনীপুরের সভায় তাঁদের কারও নাম না করেও মমতা বলেন, ‘‘আমাদের দলে কিছু গদ্দার ছিল, কিছু মীরজাফর ছিল, যারা মেদিনীপুরকে দেখিয়ে খেয়ে বেড়াত, হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে, তারা আজকে হয়ে গিয়েছে বিজেপির বড় ওস্তাদ। টাকা লুকোতে হবে না? তাই নরেন্দ্র মোদীকে ভয় না পেলে কী করে চলবে? এখন গিয়ে পা ধরছে। পা ধরে বলছে, বাঁচাও বাবু বাঁচাও।’’ মমতার সংযোজন, ‘‘চোর চিরকালই চোর হয়, মীরজাফর চিরকালই মীরজাফর হয়।’’ প্রথম দফার ভোটের শেষ প্রচারসভা মেদিনীপুরেই করেছেন মমতা। সভা থেকে তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমাদের সরকারই আসবে।’’
তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির তোলা যাবতীয় দুর্নীতির অভিযোগ নস্যাৎ করে পাল্টা তাঁদের দিকেই আঙুল তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সবাইকে বলে চোর। আর নিজেরা সাধু? মিথ্যাবাদীর দল। মিথ্যা কথা বলার সব থেকে বড় ওস্তাদ।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘অনেকে বলে, আমি না কি দুয়ারে সরকার করেছি ভোটের আগে। কলকাতা আপনারা যান না, আমরা জেলায় আসি। প্রশাসনিক পর্যালোচনা করি। ৫০০-র উপর বৈঠক করেছি। আমাকে দেখাক কোনও সরকার প্রশাসনিক বৈঠক ৫০০-র উপর করেছে।’’
আমপান ও করোনার সময় সরকারি ত্রাণ ও খাদ্যবন্টন নিয়ে বারাবর অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘বড় কাজ করতে গেলে কোথাও একটু আধটু ভুল হতে পারে।’’ তবে এ নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘কোভিডে আমাদের কোনও পয়সা দেয়নি, আমপানেও এক পয়সা দেয়নি। আমরা নিজেদের আট হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি, রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের খুঁটি, চাষের জমি ভাল করেছি। বড় কাজ করতে গেলে কোথাও কোথাও একটু আধটু ভুল হয়।’’
প্রথম দফার প্রচার শেষে এ দিন মমতার মেদিনীপুরের সভাগুলির জমায়েতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলীয় নেতৃত্ব।