অমিত শাহ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রচণ্ড গরম। তার উপরে ভোট প্রচারের তাপে যেন ফুটছে নন্দীগ্রাম। প্রার্থী দুই তারকা, তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি-র শুভেন্দু অধিকারী। একজনের প্রচারে হাজির হলেন দুই তারকা প্রচারক। অন্য জনের মঞ্চে তারকা নেই। শুধু তিনিই আছেন। শুভেন্দুর হয়ে প্রচার করলেন অমিত শাহ, বিকেলে হাজির হবেন মিঠুন। কিন্তু তৃণমূলের চিত্রনাট্যের কেন্দ্রে শুধুই মমতা। তাই তারকা প্রচারক না, প্রার্থী ও নেত্রীতেই ভরসা দলের। এ ভাবেই এতদিনের টানটান প্রচারের শেষ দৃশ্যের চিত্রনাট্য রচিত হল ‘আন্দোলনভূমি’ নন্দীগ্রামে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার প্রচার কর্মসূচি শুরু করেন সকাল ১২টায়। নন্দীগ্রামের ভেটুরিয়া বাজার থেকে রায়পাড়া পর্যন্ত রোড শো করেন তিনি। অমিতের সঙ্গে ছিলেন নন্দীগ্রামে বিজেপি-র প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। দু’জনের সঙ্গেই মিছিলে হাজির ছিলেন অসংখ্যা বিজেপি সমর্থক। নন্দীগ্রামে রোড শো-এর পরে ডেবরায় একটি রোড শো করেন অমিত। রেয়াপাড়ার সাংবাদিক বৈঠকে এসেও অমিতের মুখে ছিল নন্দীগ্রামের কথা। মঙ্গলবার অভিযোগ ওঠে, নন্দীগ্রামে এক বিজেপি সমর্থকের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। অমিত সাংবাদিক বৈঠক থেকে বলেন, ‘‘মমতা যেখানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন, সেই অঞ্চল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নারী সুরক্ষার কথা বলা মুখ্যমন্ত্রী এত কাছে ছিলেন, তাও কেউ গ্রেফতার হল না। পশ্চিমবঙ্গে নারী সুরক্ষার অবস্থা সত্যিই কেমন?’’ নন্দীগ্রামে ভোটের ফল কী হতে পারে, সেই বিষয়েও বেশ আত্মবিশ্বাসী অমিত। তিনি দাবি করলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ সবই দেখছেন। তাঁরা ভোটের বাক্সে এর জবাব দেবেন। নন্দীগ্রামে বিজেপি প্রার্থী বিপুল ভোটে জয় পাবেন।’’
নন্দীগ্রামে শেষ কয়েকদিন ধরে ছোট ছোট অনেকগুলি সভা করছেন মমতা। মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম ব্লক ১, ভেকুটিয়ায় সভা করেছেন তিনি। একটি মিছিলও করেছেন। সেখানে অদিতি মুন্সি, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো স্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিতরা থেকেছেন। কিন্তু ধারে ভারে তাঁরা মিঠুন বা অমিত শাহের মতো নন। তাই ‘শো-স্টপার’ মমতাই। সোমবার নন্দীগ্রামের সভা থেকে অধিকারী পরিবারকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছিলেন, শুভেন্দু ইচ্ছা করে তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন। সোনাচুড়া, বাঁশুলি চক লক গেটের সভা থেকেও অধিকারীদের আক্রমণ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘হাজার হাজার টাকা চুরি করেছে গদ্দার। আজ আমি যখন একবার নন্দীগ্রামে ঢুকেছি, তখন আর বেরবো না।’’ নন্দীগ্রামে পরিস্থিতি যতই উত্তপ্ত হোক, দলীয় কর্মীদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বললেন, ‘‘৪৮ ঘণ্টা মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। ভাল করে ভোট দিন। ভোটের সময় কোনও অশান্তি, দাঙ্গায় যাবেন না।’’
একেবারে শেষ অর্ধে তৃতীয় সভাটি করবেন তিনি। প্রথম অর্ধেই প্রচার শেষ হচ্ছে না বিজেপি-রও। সকালে অমিত শাহের রোড শো-এর পর বিকেলে মিঠুন চক্রবর্তীর রোড শো রয়েছে নন্দীগ্রাম বাস স্ট্যান্ড থেকে টেঙ্গুয়া মোড় পর্যন্ত। প্রার্থী শুভেন্দুর সমর্থনে প্রচার করবেন মিঠুন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তাই প্রচারের ভিড় কমবে না নন্দীগ্রামে। অমিত-মমতার উপস্থিতিতে নন্দীগ্রামের ভোট মঞ্চে যে উচ্চগ্রামে সুর বেধে দিয়েছে, তা একই তালে বাজতে থাকবে। তারপর সব শান্ত। অপেক্ষা এপ্রিল পয়লার।