ফাইল চিত্র।
এপ্রিলের শুরুতে প্রখর তপনতাপে এমনিতেই অতিষ্ঠ মানুষ। দিনযাপনের পাশাপাশি সেই ভয়ঙ্কর গরমের প্রভাব পড়ছে বিধানসভার ভোটেও। ভোট দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ঘামতে ঘামতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ক্ষণ। আর সেখানেই মার খেয়েছে করোনা বিধি।
পড়ন্ত বিকেলে ভোট দিয়ে ডেবরার গোলগ্রামে হেঁটে যাচ্ছিলেন সন্ধ্যা হাঁসদা। কোলে বছর দেড়েকের অনুশ্রী। এত দেরি? ‘‘সকালে বাড়িতে কাজ ছিল। আর দুপুরে যা চড়া রোদ,’’ বললেন সন্ধ্যাদেবী। তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে শেষ বেলায় ভোট দিয়েছেন অনেকেই। পরিসংখ্যান বলছে, সকাল সকাল ভোট দেন অধিকাংশ বাসিন্দা। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ছবিটা কমবেশি একই। ১০-১১টার পরে ভোটকেন্দ্র প্রায় খালি। হাওয়া অফিস বলছে, বাঁকুড়ায় এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মেদিনীপুরে ৩৯.৪ এবং ডায়মন্ড হারবারে ৩৮ ডিগ্রি। সঙ্গে ছিল শুকনো, গরম হাওয়া।
বাঁকুড়ার কিছু জায়গায় ইভিএম খারাপ থাকায় সকালে ভোট দিতে গিয়েও বহু বুথ থেকে ফিরতে হয়েছে বাসিন্দাদের। দুপুরে তাঁদের কাউকে দেখা যায়নি। কিছু বুথে ছাউনি ছিল। বাকি জায়গায় ভোট দেওয়ার জন্য চড়া রোদেই অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেই জন্য কোতুলপুরের কিছু বুথে বিক্ষোভও হয়। তবে রোদের রক্তচক্ষুর সামনে হার মেনেছে দূরত্ব-বিধি।
কেশপুর, চন্দ্রকোনা, খড়্গপুর সদর, ডেবরা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশির ভাগ কেন্দ্রে বুথের লাইনে দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি। ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল রাজনৈতিক দলের বুথ ক্যাম্পেও। নারায়ণগড়ের খাকুড়দা প্রাথমিক স্কুলের বুথে ভোট দেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। বুথে ঢোকার আগে তাঁকে গ্লাভস পরিয়ে দেন এক পুলিশকর্মী। খড়্গপুর সদর কেন্দ্রের কয়েকটি বুথে আবার গ্লাভস ছাড়াই ভোট দিয়েছেন অনেকে। খড়্গপুর সদর, ডেবরার কিছু বুথে ভোটকর্মীদের মাস্ক ছিল না। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল স্যানিটাইজ়ার বিলির ছুতোয় ঘাটালের কিছু বুথে দলীয় কর্মীদের ঢুকিয়েছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। সবং, পিংলা-সহ ওই জেলার প্রায় সব কেন্দ্রেই মাস্কহীন ভোটারদের মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, সাগর— দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই চার কেন্দ্রের বুথগুলিতে পর্যাপ্ত মাস্ক ও হাতশুদ্ধির ব্যবস্থা ছিল। গ্লাভসও দেওয়া হয় ভোটারদের। তবে সেখানেও লাইনে পারস্পরিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি অনেক জায়গায়। ছিল রোদ ছেড়ে ছায়া খোঁজার তাগিদ।
বাঁকুড়াতেও অধিকাংশ বুথের লাইনে দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি। গোল দাগ দেওয়া সত্ত্বেও ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে ভোটারদের। যাঁরা মাস্ক পরে আসেননি, বুথ থেকে তাঁদের মাস্ক দেওয়া হয়েছে। হাতশুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হয়েছে গ্লাভসও। মাপা হয়েছে শরীরের তাপ। করোনা-বিধি মেনে কাজ করেছেন বুথকর্মীরা। দুপুরের পরে অনেক বুথেই টান পড়ে দস্তানার মজুতে।
ছ’দফা ভোট বাকি। গরমও বাড়বে। আশঙ্কা, রোদের দাপটে শিকেয় উঠতে পারে দূরত্ব-বিধি।