লালগড়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছত্রধর। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
নেত্রী কাবু পায়ের ব্যথায়। তাঁর ব্যথা দাঁতে।
সোমবার কলকাতায় টানা ছ’ঘন্টা তাঁকে জেরা করেছিল এনআইএ। মঙ্গলবারও জেরার জন্য তলব করা হলেও দাঁতের ব্যথায় কাবু হয়ে পড়ায় এনআইএ-র কলকাতা কার্যালয়ে যেতে পারেননি। বুধবার দুপুরে অবশ্য লালগড়ে ভিলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী জনসভায় আগাগোড়া স্বমহিমায় দেখা গেল তাঁকে! তিনি ছত্রধর মাহাতো। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। জঙ্গলমহলে দলের প্রচারের মুখ।
মমতা ফিরে যাওয়ার পরে অবশ্য সভামঞ্চে চেয়ারে বসে পড়ে বাম গাল চেপে ছত্রধর বলেন, ‘‘দাঁতের ব্যথাটা ফের চাগাড় দিয়েছে।’’ সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটিতে দন্ত চিকিৎসককে দেখাতে যান ছত্রধর। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারও ছত্রধরকে জেরার জন্য ডেকেছে এনআইএ। রাতে ছত্রধর বলেন, ‘‘দাঁত নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। বৃহস্পতিবার কলকাতায় যেতে পারব না।’’ ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ বলেন, ‘‘ছত্রধরের বাম পাটির উপরের দাঁতে ভয়াবহ সংক্রমণ হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করা হতে পারে। বিষয়টি লিখিতভাবে এনআইএকে জানিয়ে দিয়েছি।’’ ২০০৯ সালে লালগড়ের এক সিপিএম কর্মী খুনের মামলা নতুন করে তদন্ত করছে এনআইএ। সেই সূত্রেই ওই মামলায় অভিযুক্ত ছত্রধরকে বার বার জেরার জন্য ডাকছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এ দিন লালগড়ের ভিলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারসভায় ছত্রধর হাজির থাকবেন কি-না তা নিয়ে জল্পনা ছিল রাজনৈতিক মহলে। তবে এ দিন সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির ছিলেন ছত্রধর। গোপীবল্লভপুরের সভা সেরে মমতার কপ্টার দুপুর দু’টো নাগাদ লালগড় ভিলেজ মাঠের হেলিপ্যাডের মাটি ছোঁয়। কপ্টার থেকে হুইল চেয়ারে মমতা নামতেই তাঁকে প্রণাম করেন ছত্রধর। জঙ্গলমহলে ‘দলের ছাতা’ যে ছত্রধরই সেটা বুঝিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রীও। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধরকে নিয়ে দলের অন্দরে একাংশের আপত্তি থাকলেও এদিন লালগড়ে মমতা জানিয়ে দিলেন, জেলার চার আসনের প্রার্থীদের জেতাতে দলের সবাইকে ‘ঐক্যবদ্ধ ভাবে’ কাজ করতে হবে। তাঁর স্ত্রী নিয়তিকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। দলের কাজে ছত্রধরের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কয়েকদিন আগে কলকাতায় ছত্রধর ও নিয়তিকে ডেকে পাঠিয়ে পাঞ্জাবি ও শাড়ি উপহার দেন মমতা। দাঁতের যন্ত্রণায় ‘কাবু’ ছত্রধর এ দিন নেত্রীর দেওয়া ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি পরে লালগড়ের সভায় এসেছিলেন। ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তিও পরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ঘিয়ে রঙের তাঁতের শাড়ি। মঞ্চে মমতার উপস্থিতিতে ছত্রধর বলেন, ‘‘আমার নেত্রী যিনি বসে আছেন, যাঁর একটা পা চলে গিয়েছে, কিন্তু তিনি বারে বারে বলছেন আমি খেলাটা দেব। একটা পায়ে নেত্রী সেই খেলাটা খেলবেন। জঙ্গলমহলের উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ২০১১ সালের মতো এ বারও তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করুন।’’
মমতার বক্তৃতার সময়ে তাঁর পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ছত্রধর। মমতাও ছত্রধরের সম্পর্কে বলেন, সিপিএমের আমল থেকে দশ বছর জেল খেটেছেন ছত্রধর। বাম আমলে ছত্রধরের সঙ্গে লালগড়ের গ্রামে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করেন মমতা। এ দিন ছত্রধরকে মাঝে মাঝে নেত্রীর কানের কাছে কথা বলতে দেখা যায়। সূত্রের খবর, এনআইএ তাঁকে বার বার তলব করে হয়রান করছে বলে মমতাকে জানান ছত্রধর। মমতা তাঁকে আইনজীবীর মাধ্যমে ভোট পর্যন্ত জেরায় না ডাকার জন্য আবেদনের আর্জি জানানোর পরামর্শ দেন।