BJP

WB election 2021: প্রার্থী তালিকায় সঙ্ঘনীতি, পার্টিগণিতের ফর্মুলা মেলাবেন পদ্মের মহাদেব

এই প্রথম ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে গেরুয়া শিবির। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে অনেক আবেগ এবং অঙ্কের কথাও মাথায় রাখতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ১১:৫৪
Share:

বিজেপি-র প্রার্থী নির্বাচন করবেন স্বয়ং অমিত শাহ ।

নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে বাংলার ২৯৪ কেন্দ্রেই বিজেপি-র প্রার্থী নিজের হাতে বাছবেন অমিত শাহ। এমন বার্তা অনেক আগে থেকেই দিয়ে রেখেছেন খোদ অমিত। রাজ্যনেতারাও তা জানেন। কিন্তু এত বড় কাজ করা হবে কী ভাবে? কারণ, শুধু তালিকা বানানোই নয়, এর পিছনে রয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের ফর্মুলা। অমিত বলেছেন কার, কোথায় জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, সেটাই হবে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রধান মানদণ্ড। মুখে একথা বললেও এ বার প্রার্থী বাছাই অনেকটাই জটিল। কারণ, এই প্রথম ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে গেরুয়া শিবির। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে অনেক আবেগ এবং অঙ্কের কথাও মাথায় রাখতে হবে। আদি-নব্য ভারসাম্য রক্ষাই শুধু নয়, সঙ্ঘ পরিবারের অন্য সংগঠন এবং বিজেপি— দুইয়ের মধ্যেও চাই গুরুত্বের সমঝোতা। কারণ, প্রতীক এক ‘পদ্ম’হলেও এ-ও সংগঠনের অন্দরে একটি জোট। সেই শ্যাম ও কূল— দুই’ই রক্ষার কঠিন দায়িত্বে শিবপ্রকাশ। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংগঠকই রাজ্য বিজেপি-র ঠান্ডামাথার ‘মহাদেব’।

Advertisement

প্রকাশ্য রাজনীতিতে প্রায় দেখাই যায় না বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশকে। ইদানীংকালে তাঁর দু’'টি ছবি সামনে এসেছে। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার দিন শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিষ্টিমুখ করানোর। তা-ও আড়ালেই। কিন্তু নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে অন্যতম সেনাপতি তিনি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহর ‘আস্থাভাজন’ শিবপ্রকাশ ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠন বিস্তারে ভাল কাজ করেছিলেন বলে মনে করে বিজেপি। এখন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তবে বাংলায় ভরসা তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভায় ১৮ আসনে জয়ের পর। বিজেপি মনে করে মোদী-হাওয়া, দিলীপ ঘোষের পরিশ্রমী প্রচার-ঝড়, মুকুল রায়ের চাণক্য-নীতি দেখা গেলেও সেই সময় সংগঠন মজবুত করার মূল দায়িত্ব ছিল শিবপ্রকাশের উপরে। এবং প্রার্থী অনুযায়ী আসন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তাঁর উপরেই ভরসা করেছিলেন অমিত। কেন্দ্রে প্রথম মোদী সরকার গঠনে তৈরি বিজেপি-র ‘লুক ইস্ট পলিসি’অনুযায়ী আগরা থেকে বাংলায় আসেন শিবপ্রকাশ। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, এখন তিনিই সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপি-র মধ্যে ভারসাম্য রাখার কাজ করছেন।

বিজেপিতে যোগদানের পর শুভেন্দু অধিকারীকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সাধারণ (সংগঠন) সম্পাদক শিবপ্রকাশ

বিজেপি-র সম্ভাব্য কোনও প্রার্থীকে প্রশ্ন করলেই প্রকাশ্যে তিনি বলছেন, ‘‘দল যা ঠিক করবে।’’ এই উত্তরটাও আসলে দলেরই ঠিক করে দেওয়া। কিন্তু আড়ালে কেউ কেউ স্বীকার করছেন, ‘‘আমি কিছু জানি না। শিবপ্রকাশ’জিকে পছন্দটা বলে রেখেছি। দেখি উনি কী করেন।’’শিবপ্রকাশের কাছেই সকলের ‘বায়োডেটা’জমা পড়েছে। এমনও নয় যে, সকলেই তাঁর হাতে সেটা দিয়েছেন। কেউ কেউ জমা দিয়েছেন দিলীপ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিতাভ চক্রবর্তীদের কাছেও। মুকুল, শুভেন্দু, রাজীবদেরও পছন্দের তালিকা রয়েছে। কিন্তু সব তালিকারই একমাত্র গন্তব্য শিবপ্রকাশের টেবিল। কারণ, সেই টেবিলে আছে আরও একটি তালিকা। যেটা বানিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার।

Advertisement

সঙ্ঘ অনুগামী বিজেপি নেতাদের কথায়, পরিবার এমনিতে রাজনীতি থেকে প্রকাশ্য দূরত্ব বজায় রাখলেও অনেক সহযোগী সংগঠনই প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রাখে। নির্বাচনের সময় অন্য কোনও সংগঠনের নামে সঙ্ঘকর্তারাও সাংগঠনিক কাজ করে থাকেন। ১৯২৫ সালে নাগপুরে আরএসএসের সূচনা হলেও বাংলায় সংগঠনের শুরু ১৯৩৯ সালে। কলকাতার মানিকতলায়। ৮২ বছর শুধুই সংগঠন শক্তিশালী করায় রত আরএসএস-ও চাইছে নীলবাড়ি দখল হলে সেখানে ‘সঙ্ঘের প্রভাব’ থাকুক। সঙ্ঘের প্রচারককে দেশের প্রধানমন্ত্রী করতে পারার পর এখন সেই স্বপ্ন বাংলাতেও দেখছে তারা। তার সবচেয়ে বড় নজির বেনজির ভাবে সঙ্ঘের প্রচারক দিলীপকে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি করা। এর আগে শুধু সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদেই প্রচারকদের বসানোর রেওয়াজ ছিল। যা এখনও বজায় আছে।

দলীয় কর্মশালায় বক্তব্য রাখছেন শিবপ্রকাশ।

এই কাহিনি যে বিজেপি নেতারা শোনাচ্ছেন তাঁদের বক্তব্য, এবার ২৯৪টি আসন সমানভাবে ভাগ হতে পারে। দু'টি ভাগে ১৩০টি করে আসন রেখে একটা অংশ সঙ্ঘের পছন্দ এবং বাকিটা বিজেপি-র। এতে নব্য বিজেপিদের আশঙ্কার কারণ নেই কারণ, সঙ্ঘের যে তালিকা তাতে আদি বিজেপি-র অনেকেই ঢুকে আছেন। সুতরাং, মুকুল, শুভেন্দু, রাজীবদের পছন্দের নাম প্রার্থী তালিকায় থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। ১৩০ যোগ ১৩০ হল ২৬০। বাকি রইল ৩৪টি আসন। এগুলিতে প্রার্থী করা হতে পারে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বা না দেওয়া বিশিষ্টদের জন্য। এর মধ্যে অধ্যাপক, খেলোয়াড়, সঙ্গীতজ্ঞ, সমাজসেবী— অনেকেই থাকতে পারেন। এটাই হতে পারে মূল ফর্মুলা। সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি-র মধ্যে ভারসাম্যের এই কাজটাই করতে হবে শিবপ্রকাশকে। বিজেপি সূত্রে খবর, যা ইতিমধ্যে অনেকটাই করে ফেলেছেন তিনি। সবই বাংলায় দলের পক্ষে করা নানা সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে এবং অমিতের নির্দেশে। শেষ পরীক্ষার শেষে প্রয়োজনীয় অদলবদল করে তাতে সিলমোহরটি দেবেন অমিত।

বিজেপি-র এই ভারসাম্য ফর্মুলা নতুন নয়। যখন দল সে ভাবে শক্তিশালী ছিল না, তখনও এই ‘পার্টিগণিত’ মাথায় রেখেই প্রার্থিতালিকা হত। গত লোকসভা নির্বাচনের তালিকা দেখলে তা স্পষ্ট হবে। সেখান মুকুলের হাত ধরে দলে-আসা রাজনীতিকরা যেমন ছিলেন, তেমনই পরিবারের পছন্দের লোকেরাও ছিলেন সমানভাবে। জয়ী ১৮ জনকে ধরলেও সেটাও দু’ ভাগে প্রায় সমান সমান। সরাসরি সঙ্ঘের তালিকা থেকে জয় পান ৮ জন। বাকি ১০-এর মধ্যে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও আরএসএসের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন। আবার কেন্দ্রে মন্ত্রীও করা হয় দুই অংশের দু’জনকে। বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয় এবং সঙ্ঘ পরিবারের দেবশ্রী চৌধুরী। একজন আসানসোল থেকে ও অন্যজন রায়গঞ্জ থেকে জয়ী হয়েছিলেন।

বিজেপি বাংলায় সরকার গড়ার মতো শক্তি পেলে মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা বাছার ক্ষেত্রেওকি এই ফর্মুলাই মেনে চলা হবে? এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ। অমিতের ঠিক করে দেওয়া ‘ভূমিপুত্র’শব্দ ছাড়াকেউ অন্য কিছু বলার দিকেও যাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে দিলীপের পক্ষে ‘ব্যক্তিগত মত’ জানিয়ে দলের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে যুব বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁকে। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের পরম্পরা বলছে, থাকবে সেই ‘পার্টিগণিত’ই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement