যোগী আদিত্যনাথ।
মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আসছেন বাংলায়। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে যে সব জেলাকে রাজ্য বিজেপি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তার অন্যতম মালদহ। সেখানেই জনসভা যোগীর। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শেষ হবে যোগীর হাতেই। বিজেপি সূত্রে খবর, শুধুমাত্র একটি জনসভা ছাড়া তেমন কোনও কর্মসূচি নেই যোগীর। উত্তরবঙ্গে ইতিমধ্যেই কোচবিহারে সফর হয়েছে অমিত শাহর। মালদহে গিয়েছেন জেপি নড্ডা। মার্চেই জলপাইগুড়িতে সমাবেশ হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তবে যোগীকে বড় হিসাব কষেই আনা হচ্ছে বলে দাবি রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের। সেই হিসাবের অঙ্গ হিসেবেই যোগীর সভার জন্য বাছা হয়েছে গাজোল কলেজ ময়দান।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে মালদহ উত্তর কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন বিজেপি-র খগেন মুর্মু। তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ৮৪,২৮৮ ভোট। অন্য দিকে, মালদহ দক্ষিণে কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরির কাছে বিজেপি-র শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী হারলেও ব্যবধান ছিল ৮,২২২ ভোট। লোকসভা নির্বাচনের বিচারে যে ব্যবধান লক্ষ্যণীয় ভাবে কম। এই কারণেই এ বার মালদহ জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই মালদহের সাহাপুরে কৃষকদের নিয়ে ‘সহভোজ’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন দলের সভাপতি নড্ডা। একই দিনে ইংরেজবাজারে একটি রোড-শো করেন নড্ডা। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে এ বার মালদহে আসছেন যোগী। গাজোলে হবে সমাবেশ।
গাজোলে সভা কেন? গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে গাজোল বিধানসভা এলাকায় ভাল ফল করেছিল বিজেপি। কিন্তু শুধু সেই কারণেই গাজোলকে যোগীর সভার জন্য নির্বাচন করা হয়নি। কেন, পরিসংখ্যান দিয়ে সোমবার তা ব্যাখ্যা করেছেন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ওই এলাকায় ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা। তাঁর দাবি, গাজোলের যেখানে যোগীর সভা হবে, সেখানে তিনটি জেলার কর্মী-সমর্থকদের আনা যাবে। রাজ্য বিজেপি প্রতিটি লোকসভা এলাকাকে একটি করে ‘সাংগঠনিক জেলা’ হিসাবে দেখে। সেই হিসাবে যোগীর সভায় বিজেপি-র টার্গেট মালদহ উত্তর, বালুরঘাট ও রায়গঞ্জের ভোটারদের বার্তা দেওয়া। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে ওই তিনটি আসনেই ভাল ব্যবধানে জয় পেয়েছিল বিজেপি।
মালদহ উত্তরে ৮৪,২৮৮ ভোটে জয় পেয়েছিলেন বিজেপি-র খগেন। বিধানসভা কেন্দ্রের হিসাব করলে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ওই লোকসভার অন্তর্গত হবিবপুর, গাজল, মালদহ আসনে। অন্য দিকে, তৃণমূল বিজেপি-র তুলনায় এগিয়ে রয়েছে চারটি আসনে— চাঁচল, হরিশচন্দ্রপুর, মালতিপুর এবং রতুয়া। প্রসঙ্গত ওই চারটি আসনে মুসলিম ভোট যথাক্রমে ৭০, ৭২, ৭২ এবং ৬৬ শতাংশের আশপাশে। একই চিত্র দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট লোকসভা এলাকায়। সেখানে বিজেপি-র সুকান্ত মজুমদার জয় পান ৩৩,২৯৩ ভোটের ব্যবধানে। সেই হিসাবমতো বিজেপি ওই এলাকার তিনটি বিধানসভা আসন বালুরঘাট, তপন ও গঙ্গারামপুরে এগিয়ে রয়েছে। পক্ষান্তরে, ওই লোকসভা আসনে তৃণমূল এগিয়ে চারটি বিধানসভা এলাকায়— ইটাহার, কুশমুন্ডি, হরিরামপুর এবং কুমারগঞ্জ। ওই চারটি আসনের মধ্য প্রথম তিনটিতে মুসলিম ভোটার যথাক্রমে ৫০, ৪০ এবং ৪৯ শতাংশের আশপাশে। রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে বিজেপি-র দেবশ্রী চৌধুরী জেতেন ৬০,৫৭৪ ভোটের ব্যবধানে। শেখানেও বিজেপি এগিয়ে চারটি বিধানসভা এলাকায়। করণদিঘি, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ এবং রায়গঞ্জ। তৃণমূল এগিয়ে ইসলামপুর, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া বিধানসভা এলাকায়। ওই তিনটি আসনে মুসলিম ভোটার যথাক্রমে ৭২, ৭০, ৭১ শতাংশ। বাকি আসনগুলিতে মোটামুটি ৫০ শতাংশ।
ওই তিন লোকসভা এলাকার বিধানসভাগুলি জিততে যোগী কেন? ওই বিজেপি নেতার দাবি, ওই সব এলাকায় হিন্দু ভোটকে আরও সংগঠিত না করলে জয় সম্ভব নয়। বিজেপি-র দলীয় হিসেবে ওই তিন লোকসভা এলাকার যে বিধানসভা আসনগুলিতে দল এগিয়ে রয়েছে, সেগুলিতেও হিন্দু ভোট একমুখী করা জরুরি। তার জন্য গেরুয়াধারী নেতা যোগীই উপযুক্ত বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। তাই তাঁকে এনে মেরুকরণের অঙ্ক মেলাতে চাইছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগীকে বাছার মধ্য দিয়েই বিজেপি হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়েছিল ২০১৭ সালে। এর পর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের সময়ও হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে যোগীকে ব্যবহার করেছিল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়েও মেরুকরণ যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে, তার নজির ইতিমধ্যেই মিলেছে। এ বার সেটাকেই কাজে লাগাতে যোগীর আগমন।