প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটে রাজ্যপাটের ক্ষমতার দৌড়ে বামজোট তথা সংযুক্ত মোর্চাকে অনেকেই তৃতীয় স্থানে রাখছেন। সেই আবহেই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে সমবায়ের ক্ষমতা ধরে রাখল বামেরা। হাইকোর্টের নির্দেশে ভগবানপুরের ওই সমবায়ের নির্বাচনে ৯-০ আসনে নিরঙ্কুশ জয়ী হয়েছেন বাম সমর্থিতরা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামেদের সমর্থন দিতেই কোনও প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীনই এই অঙ্ক রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের মেয়াদ উত্তীর্ণ বহু সমবায়ে এক তরফা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তৃণমূল মনোনীত বোর্ড গঠন করেছে বলে অভিযোগ। এই প্রক্রিয়া সমবায় আইনের পরিপন্থী বলে মনে করা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-১ ব্লক দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। তবে সেখানকার কাজলাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেঠিবাড়ি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি গত ৪৪ বছর ধরে বাম সমর্থিত বোর্ড দ্বারা পরিচালিত। গত বছর ২৮ জুলাই এই সমবায়ের পরিচালক বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ শেষে ফের নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পুরনো সদস্য ও সমবায় মনোনীত আধিকারিক দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু অভিযোগ, গত জানুয়ারিতে তৃণমূল বেআইনিভাবে গোপনে তাদের মনোনীত সদস্য নিয়ে এক তরফা বোর্ড গঠন করে। তৃণমূলের এই ‘চক্রান্তে’র বিরুদ্ধে প্রাক্তন বোর্ডের তরফে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। তারই রায়ে হাইকোর্ট তৃণমূল মনোনীত বোর্ড বেআইনি বলে বাতিল করে। সেই সঙ্গে সমবায় কমিশনারকে দ্রুত নির্বাচন করার নির্দেশও
দেন বিচারক।
সেই মতো সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তেঠিবাড়ি কৃষি সমবায়ে ভোট গ্রহণ হয়। তৃণমূল ও বাম সমর্থিত প্রার্থীরাই ছিলেন যুযুধান। বিজেপি প্রার্থী না দিয়ে বামেদের সমর্থন করে। টানটান উত্তেজনায় রাতের দিকে ভোট গণনা শেষ হয়। ফল বেরোলে দেখা যায়, ৯-০ আসনে বামেদের কাছে হার মেনেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন কাঁথির সমবায় সহ-আধিকারিক (এআরসিএস)।
প্রথম দফা বিধানসভা নির্বাচনে ভগবানপুর কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। এখনও রাজ্যে চার দফা নির্বাচন বাকি। ভগবানপুরে তেঠিবাড়ি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির এই ফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সমবায় দখলে উজ্জীবিত বাম শিবির। সমবায় সমিতি প্রক্তন সম্পাদক ও এ বারের জয়ী সদস্য তাপস ঘোড়াই বলেন, ‘‘তৃণমূলের চক্রান্তের বিরুদ্ধে মানুষের জয় হল। সমবায় এলাকায় কৃষিজীবী ও সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। বিগত দিনের মতো সত্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবে এই বোর্ড। মানুষের সুবিধার্থে আরও একাধিক শাখায় পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
বাম-বিজেপি বোঝাপড়ার কাছেই যে তাঁদের হার মানতে হয়েছে তা মানছেন ভগবানপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘একা বামেরা প্রার্থী দিলে আমরা জয়ী হতাম। বিজেপি সরাসরি বামেদের সহযোগিতা করায় আমরা পরাজিত হয়েছি।’’ ভগবানপুর বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মাইতির অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘সবাই বিজেপি মনোনীত প্রার্থী। কোনও সদস্য যদি নিজেকে বাম সমর্থিত বলেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এখানে বামেদের কোনও অস্তিত্ব নেই।’’