বৈ-ভবশালী: সম্পন্ন পরিবারের সন্তান। নিজেও সম্পন্ন। কোটিপতি বৈশালী ৩৯ লক্ষ টাকা দামের একটি মার্সিডিজ বেন্জেরও মালকিন। তবে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে হলফনামায় জানিয়েছেন, প্রায় ১ কোটি টাকার ঋণও আছে ব্যবসায়ী-রাজনীতিক তথা প্রাক্তন বিধায়ক বৈশালীর।
বালির বাবলি: এখন বালির রামনবমীতলায় একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর। তাতেও অবশ্য ‘বহিরাগত’ তকমা থেকে মুক্তি পাননি। তাঁর প্রাক্তন দল তৃণমূলের কর্মীরাও বলতেন। এখন নতুন দল বিজেপি-র ভিতরেও সেই রব। বালির সঙ্গে মিল শুধু ছেলেবেলার নাম ‘বাবলি’। তবে মা ডাকতেন ‘বাবুয়া’। আর অধুনাপ্রয়াত ক্রিকেট প্রশাসক পিতা জগমোহন ডালমিয়া আদরের কন্যাকে ডাকতেন ‘গুড়িয়া’ বলে।
স্বপ্নে মেয়েবেলা: জীবনে কখনও যা চাইবেন তা-ই পাওয়ার সুযোগ পেলে ‘শৈশব’ ফিরে পেতে চান। বড় পরিবারে খুব মজায় কাটিয়েছেন জীবনের শুরুটা। সেই ছেলেবেলাটা এখনও মিস্ করেন। যা চাইলেও পাওয়া যাবে না, সেটাই পেতে চায় তাঁর মন।
পিতাশ্রী: দিদির হাত ধরে রাজনীতিতে। কিন্তু বাবাকেই গুরু মানেন। ক্রিকেট প্রশাসন চালানো কি কম রাজনীতি! মনে রাখেন ২০০৬ সালের সিএবি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রার্থী পুলিশকর্তা প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন জগমোহন। ফল প্রকাশের পর বুদ্ধদেব বলেছিলেন, ‘‘অশুভ শক্তির জয়।’’ ১০ বছর পরে ২০১৬ সালে বালিতে সিপিএম-কে হারিয়ে জেতার পর বৈশালী বলেছিলেন, ‘‘এটা বাবার হয়ে বদলা।’’
ঘোড়ফুলিশ: জীবনে একটা শখ অবশ্য পূরণ হয়নি বাবার জন্য। ঘোড়ায় চড়া। রাইডিং শিখবেন বলে ফোর্ট উইলিয়ামে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু বাবা শিখতে দেননি। ভয়ে। যদি ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে চোট লেগে যায়! এখনও আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। তবে পশুপ্রেমী বৈশালীর বাড়িতে একটা ঘোড়া আছে। দু’টি অসুস্থ ঘোড়াকে উদ্ধার করে বাড়িতে এনেছিলেন। আক্ষেপ, একটিকে বাঁচাতে পারেননি। অন্যটি রয়েছে। একটা সময়ে হাঁস, মুরগি, খরগোশ, গিনিপিগ এমনকি, ছাগলও পুষতেন। বাবা বলতেন, ‘‘গুড়িয়া, বাড়িটাকে কি চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলবি!’’
খেলা কিন্তু ধুলো নয়: অভিজাত পরিবারের মেয়ে। সেই হিসেবেই বড় হওয়া। খুব খেলাধুলো করতেন। তবে ধুলো নিয়ে খেলা নয়। ‘কিতকিত’ বা ‘বুড়ি বসন্ত’ কখনও সে ভাবে খেলেননি। ক্রিকেট, কবাডি, ব্যাডমিন্টন, টেবল টেনিসেই বরাবরের ঝোঁক তাঁর।
ফুলের চেয়ে ফল প্রিয়: তৃণমূলের জোড়াফুল প্রতীকে বিধায়ক হয়েছিলেন। দল বহিষ্কার করার পরে হাতে নিয়েছেন পদ্মফুল। তবে বেশি প্রিয় ফল। সারাদিন ফল খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারেন। প্রচারের ক্লান্তি মেটাতে আপেল, কমলালেবু, কলা, শশা, পেঁপেতেই ভরসা। ডাবের জলও আছে। সারা বছর অপেক্ষা করেন কবে গরম পড়বে আর বাজারে আম আসবে!
পুত্রশ্রী: ব্যক্তিগত জীবনে পুত্র আদিত্যই সব। তিনি ডাকেন ‘ঋক’ বলে। এতটাই বন্ধু যে, যার কাছে কোনও কথা গোপন করেন না। স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের ছাত্র আদিত্য ফুটবল, ক্রিকেট দুই-ই খেলে। ছুটি পেলেই দু’জনে ঘুরতে চলে যান। দেশে বা বিদেশে ক্রিকেট দেখতে যাওয়াটা নেশা।
ভুলেও ভুল নয়: জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই গিয়েছে। পারিবারিক জীবন থেকে রাজনীতি— সর্বত্র। কিন্তু মনে করেন তাঁর জীবনে কোনও ভুল নেই। যা যা হয়েছে, সব ঠিক হয়েছে।
প্রেমে পড়া বারণ: সুন্দরী হিসেবে খুব নাম ছিল। অনেকেই কথায় কথায় প্রেমে পড়ে যেত। কিন্তু তিনি পড়তেন না। ফেলে আসা জীবনের প্রেমিকদের কথা এখন আর মনেও পড়ে না। তাঁর জীবনে চিরস্থায়ী ভালবাসা— দিদু। খুব মিস্ করেন। বৈশালীর জন্মের পরেই তাঁর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাথুরিয়াঘাটায় ২০০ ঘরের বাড়ি ছেড়ে দিদু চলে আসেন নাতনির কাছে। মা সুস্থ হয়ে গেলেও দিদু আর যাননি। পরে দাদুও চলে এসেছিলেন।
দিদুর পরেই দাদা: দিদুর পরেই ‘দাদা’ তাঁর পছন্দের মানুষ। বাংলার দাদা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর আবাল্য বন্ধু। এমনিতে ‘মহারাজ’ সম্বোধন করলেও প্রকাশ্যে ডাকেন ‘দাদা’ বলেই। ৪৫ বছরের বন্ধু। তিনিই জীবনের আদর্শ। সব কিছু করার আগে দাদাকে জানাতে ভোলেন না। ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে লড়াইয়ের সময় মহারাজকে প্রচারে পেয়েছিলেন। সরাসরি না হলেও ভোট প্রচারের মধ্যেই বালি বিধানসভা এলাকায় ক্রিকেটের একটি আসরে এসেছিলেন সৌরভ। কিন্তু এ বার সেটা আর হল না। আক্ষেপ রয়ে গেল।
সাজ আর কাজ: নির্বাচনী প্রচার হোক বা বিধায়কের কাজ— সাজ ছাড়া দেখা যায় না। অনেক বলেন, একটু বেশিই সাজেন। বৈশালী পাত্তা দেন না। সবচেয়ে প্রিয় রং লাল। কিন্তু পোশাক হিসেবে লাল রং বাছেন না। কারণ, কালো পোশাকে স্থূলকায়দের খানিক কৃশ দেখায়।
মোদী-দিদি ভক্তি: তৃণমূল ছেড়ে সদ্য এসেছেন বিজেপি-তে। তবে আগে থেকেই নরেন্দ্র মোদীর ভক্তি ছিলেন। ভারতবাসী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গর্বিত। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দিদির জায়গায় রয়েছেন। তাঁর প্রতি বৈশালীর শ্রদ্ধা এখনও অটুট।
বই-শালী নন: বইপত্রের প্রতি অত টান নেই। রাজনীতি ছাড়া ব্যবসা সামলাতেই দিন কেটে যায়। খুব একা লাগলে ফোন করেন বন্ধুদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বকবক করেন। ফেসবুক বা টুইটারের মতো নেটমাধ্যম না-পসন্দ। বলেন, ‘‘নিজের দুঃখ অন্যকে শোনাতে ভাল লাগে না। বরং নিজের আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে বেশি ভাল লাগে।’’
তথ্য: পিনাকপাণি ঘোষ, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী