বুলেটরাজা: রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট তাঁর চিরসঙ্গী। প্রচারে বাহন হিসেবে সেটি অহরহ ব্যবহার করে থাকেন। পয়মন্তও বোধহয়। নইলে কি আর আসানসোল থেকে ট্রেনে চাপিয়ে টালিগঞ্জে নিয়ে আসেন! প্রচারের শেষ দিনে কর্মীদের ছেড়ে চুপিচুপি বাইক সারাই করতে চলে গিয়েছিলেন একাই। টলি ক্লাবে রাখা বাইকে দিনের শেষে বউকে বসিয়ে হাওড়ার বাড়ি ফেরেন। মাঝপথে রাসবিহারীর মোড়ে দাঁড়ান। স্ত্রী রচনা চুপিচুপি গিয়ে পান কিনে আনেন।
কহো না পেয়ার হ্যায়: আসানসোলের সাংসদ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। টালিগঞ্জের প্রার্থী। দুই মেয়ে, বাবা এবং স্ত্রী-কে সঙ্গে রাখছেন। বড় মেয়ের বাস মুম্বইয়ে। মাঝেমধ্যেই চলে আসছেন। বাবুল বলেন, এটা তাঁর কাছে বড় শক্তি। ওঁরাই তাঁর কাছে কাছে থাকতে চান। বাবুলও রাজি। কারণ, পরিবার বড্ড প্রিয়। কয়েকমাস আগে মা-কে কেড়ে নিয়েছে কোভিড। এখন বাবাই সব। এখন গান গাওয়া কমেছে মন্ত্রিমশাইয়ের। তবে গানের প্রতি ভালবাসা কমেনি। ইদানীং একটা নতুন আনন্দ পাচ্ছেন। রাতে বাড়ি ফিরে দেখেন, বাবা গান গাইছেন। বাবুলও হারমোনিয়ামটা টেনে নিয়ে বসে পড়েন।
হৃদমাঝারে: মায়ের ব্যাপারে খুব আবেগপ্রবণ। এখনও টুইটারে পিন-টু-টপ করা আছে ১০ ডিসেম্বর মায়ের প্রয়াণের খবর। মা-কে নিয়ে কথা উঠলেই চোখে জল, গলা ভারী। মায়ের রান্না মিস্ করেন বলে এখন পোলাও, ছানার ডালনা-সহ অনেক খাবার ছেড়ে দিয়েছেন। কৈলাস বোস স্ট্রিটের বাড়ি তালাবন্দি। মায়ের এত স্মৃতি যে যাওয়ার কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়। যাওয়া হয় না আর।
কন্যাশ্রী: এখন রুটিন করে রাতে ছোট মেয়ের সঙ্গে ল্যাপটপে ভিডিয়ো গেম। বড় কন্যা মুম্বইযে থাকলে রোজ ফোন করেন। সেখানে আবার খেলা নয়, গান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে বাবার সঙ্গে খাটে বসে আড্ডা মাস্ট। বাড়িতে টিভি চালান না। অবসরের আড্ডায় গান, খাওয়াদাওয়া চললেও বোকাবাক্সের প্রবেশ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
ড্যাডি বনাম বাবা: বড় মেয়ে ‘ড্যাডি’ বলে। কিন্তু ছোটটি এক্কেবার বাঙালি ডাকে ‘বাবা’। এটা তার ঠাকুমার দেওয়া শিক্ষা। বাবুলের মা-ই ‘বাবা’ ডাকতে শিখিয়েছিলেন ছোট নাতনিকে।
খেলার বেলা: নিজে খেলতে ভালবাসেন। সুযোগ পেলেই ফুটবলে শট মারেন। দিল্লির বাড়িতে ক্যারামবোর্ড আছে। মাঝেমধ্যে খেলাও হয়। যদি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান ? তখনও কি খেলবেন? পাবেন? বাবুল বলেন, ফুটবলের জন্য সময় ঠিক বার করে নেবেন। ওটা তো নেশা! আর মুখ্যমন্ত্রী হলে কি শুধুই গল্ফ খেলতে হবে নাকি!
চিরসঙ্গী রাজপুত্র: ফুটবল-পাগল বাবুলের অন্যতম বিগ্রহ মারাদোনা। প্রয়াত ফুটবল-রাজপুত্র শক্তি দেন বাবুলকে। মন খারাপ লাগলে বা ক্লান্ত হলেই মারাদোনর খোলার পুরনো ভিডিয়ো দেখেন। শক্তি পান।
ভজহরি মান্না: ভোজনরসিক। কষা মাংস খুব প্রিয়। মাসে মাত্র দু’বার হতে পারে। কিন্তু সেটা জমিয়ে হওয়া চাই। কলকাতা থেকে কাঁচা মাংস কিনে নিয়ে যান মুম্বই, দিল্লি বা আসানসোলে। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা না কষিয়ে রান্না করেন না। পরিবার ও বন্ধুমহলে মধ্যে এর জন্য বিশেষ খ্যাতি এবং খাতিরও আছে। রান্নার ডাক্তারও বটে। বাড়িতে কোনও রান্নায় গোলমাল হলে মেরামত করে নতুন একটা আইটেম বানিয়ে ফেলেন। রান্না নিয়ে প্যাঁচে পড়লে মা ডাকতেন। এখন গিন্নিও ডাকেন।
জীবে প্রেম: পশুপ্রেমী। পক্ষীপ্রেমীও বটে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় পোষা পাখিদের নিয়ে গিয়েছিলেন আসানসোলে। এ বার অবশ্য দিল্লির বাড়িতে রেখে এসেছেন। তবে সারমেয়দের মধ্যে ‘টাইসন’, ‘হেনরি’রা সঙ্গে আছে। শুধু জার্মান শেফার্ড ‘অস্কার’ মুম্বইয়ের বাড়িতে। বড় মেয়ের সঙ্গে ফেসটাইমে কথা হলে সে-ও একবার মুখ দেখিয়ে যায়। তবে ভোটের মধ্যে একটা ধাক্কা খেয়েছেন। প্রিয় পাগ ‘এলি’ মাস খানেক আগে মারা গিয়েছে।
নমামী গঙ্গে: নরেন্দ্র মোদীর মতোই তাঁর সহকর্মী বাবুলেরও গঙ্গার প্রতি টান। জন্ম হুগলির ব্যান্ডেলে। বড় হওয়া উত্তরপাড়ায়। দু’টি শহরই গঙ্গাপাড়ে। এখন হাওড়ায় যে ফ্ল্যাট কিনেছেন, সেটাও গঙ্গাতীরে। জানলা দিয়ে গঙ্গা দেখা যায়। কথায় বলে, ‘গঙ্গার পশ্চিমকুল বারাণসী সমতুল’। বাবুল অবশ্য মোদীর মতো তত ধার্মিক নন। কিন্তু গঙ্গা নিয়ে ভালবাসাটা আছে।
কেবলই ছবি: অন্যের তোলা নিজের ছবি জমান। সেই ছবি মাঝেমধ্যে বার করে দেখেন, বিভিন্ন সময়ে চুল এবং দাড়ি কেমন ছিল। খুঁজেপেতে পুরোন দিনের কিছু ছবি বাঁধিয়েও রেখেছেন। তবে রাজনীতিক বাবুলকে নিয়ে অনেক কার্টুন হয়েছে। সে সবও সংগ্রহে রাখেন। সবক’টা বাড়ির সব শোওয়ার ঘরের দরজায় একটা করে নিজের কার্টুন ঝুলিয়ে রেখেছেন। মনে করেন, নিজেকে নিয়ে মজা উপভোগ করতে না পারলে অন্যের সঙ্গে মজা করার অধিকার জন্মায় না। আনন্দবাজার ডিজিটালের ‘তারাদের কথা’র কার্টুনটিও কি তাঁর কোনও একটি বাড়ির শোওয়ার ঘরের দরজায় শোভা পাবে? দেখা যাক!
সবার উপরে বাগান সত্য: মোহনবাগানের কড়া সমর্থক। রিয়েল মাদ্রিদ বনাম বার্সিলোনার খেলায় কে জিতবে? বাবুল জবাব দেন— মোহনবাগান। তবে তার চেয়েও বেশি টান কলকাতা শহরের প্রতি। তাই আইএসএল ফাইনালে বাইরের শহরের বিপক্ষে ইস্টবেঙ্গল খেললে লাল-হলুদের সমর্থক হবেন। কেন? কারণ, ফুটবল মানে কলকাতা। অন্য কোনও শহর ঠেক পাবে না।
রং দে তু মোহে: নাহ্, গেরুয়া নয়। প্রিয় রং সাদা আর কালো। রাজনীতি করেন বলে এখন প্রায় রোজই একই ধরনের পোশাক পরতে হয় দলীয় কর্মসূচিতে। তবে সব রকম পোশাকই তাঁর পছন্দের। বাইক চালানোর সময় ছেঁড়া জিন্স পরতেও আপত্তি নেই। মনে করেন, নিজের কাজটা ঠিকমতো করে সবকিছুই করা যায়। পরাও যায়।
গান-গাড়ি: আগে তিন বছর অন্তর অন্তর গাড়ি বদলাতেন। এখন রোজগার কম। গান গেয়ে অনেক আয় ছিল। এখন আর সেটা হয়ে ওঠে না। এখনও যে ক’টা গাড়ি আছে, সবই গান গেয়েই কেনা।
থাকে শুধু অন্ধকার: প্রতিদিন নিজের মুখোমুখি হন। নিয়ম করে ২০ মিনিট অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকেন। তখন মোবাইলও কাছে রাখেন না। বাড়ির সকলে জানেন, তখন তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না। কনিষ্ঠ কন্যাও পাশে এসে চুপটি করে শুয়ে থাকে। সেই কিশোর বয়স থেকে এই অভ্যাস। এক বোন বলতেন, বাড়িতে আগুন লাগলেও ওই সময় বাবুল কিছু বুঝতে পারবেন না!
তথ্য: পিনাকপাণি ঘোষ, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী