মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন খড়্গপুর গ্রামীণের তৃণমূল প্রার্থী দীনেন রায় (বাঁ দিকে)। খড়্গপুরে দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়নের পথে দিলীপ ঘোষ।
কোথাও মনোনয়ন ঘিরে উচ্ছ্বাস, কোথাও উত্তেজনা। মঙ্গলবার এমনই ছবি দেখা গেল মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে।
এ দিন দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে মেদিনীপুরে মিছিল করে বিজেপি। সেখানে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ছাড়াও ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মেদিনীপুরের প্রার্থী শমিত দাশ, শালবনির প্রার্থী রাজীব কুণ্ডু, গড়বেতার প্রার্থী মদন রুইদাস। দুপুরে অরবিন্দনগরের মাঠ থেকে শুরু হয়ে ওই মিছিল কালেক্টরেট মোড়ে এসে পৌঁছয়। মিছিলে ছিল বাজনা। মহিলা কর্মীদের অনেকে পদ্মফুলের প্রতীক আঁকা শাড়ি পরেছিলেন। দিলীপ দাবি করেন, ‘‘ব্রিগেডের সভায় কোনও প্রচার ছাড়াই, কেবল সংগঠনের লোকেরা এসেছিল। তাতেই মাঠ উপচে পড়েছে, ঢুকতে পারেনি লোক। যে ধরনের ভিড় আর উৎসাহ দেখা যাচ্ছে তাতে নিশ্চিত সারা বাংলা আজকে তৈরি হয়ে আছে পরিবর্তনের জন্য।’’ কিন্তু বিজেপিতেও তো ‘বেনোজল’ ঢুকে পড়ছে? তাঁর উত্তর, ‘‘যাদের মধ্যে আদর্শ নেই, শৃঙ্খলা নেই, তারা ভয় করে। বিজেপি বিভিন্ন দলের যোগ্য লোকেদের নিয়ে সরকার চালাচ্ছে। সংগঠন বাড়াচ্ছে। সবাইকে নিয়েই বাংলার পরিবর্তন করব।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রামে আসা নিয়েও কটাক্ষ করেন দিলীপ। বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে পালিয়ে নন্দীগ্রামে এসেছেন। আবার কালীঘাটে চলে যাবেন!’’ কৈলাসেরও দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখান থেকেই লড়ুন, হারবেন, দু’শো শতাংশ হারবেন। উনি নন্দীগ্রামের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন। ওখানে চাষবাসও হয়নি, শিল্পও হয়নি।’’ এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক আসনে বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারা নির্দল হিসেবে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে কৈলাস বলেন, ‘‘আমরা বোঝালে ওঁরা নিশ্চয়ই বুঝবেন। বিজেপির সরকার তৈরির ক্ষেত্রে দলের সব কার্যকর্তারই সহযোগিতা থাকবে।’’ বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েনি তৃণমূলও। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির পাল্টা, ‘‘বিজয়বর্গীয়রা বাংলা চেনে না। বাংলার মানুষ ওদের জঙ্গলের দস্যু মনে করেন! ২ মে- র পর ওরা আর বাংলায় থাকবে না।’’
এ দিন খড়্গপুর মহকুমাশাসকের কার্যালয়েও মনোনয়ন জমা দেন প্রার্থীরা। দিলীপের নেতৃত্বে মিছিল করে সেখানে যান নারায়ণগড়ের প্রার্থী রমাপ্রসাদ গিরি, কেশিয়াড়ির প্রার্থী সোনালি মুর্মু, দাঁতনের প্রার্থী শক্তিপদ নায়েক ও খড়্গপুরের প্রার্থী তপন ভুঁইয়া। খড়্গপুর সদর বিধানসভায় দলীয় প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা করেনি বিজেপি। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, “খড়্গপুর সদরে নির্বাচন দ্বিতীয় দফায়। ঠিক সময়েই প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে যাবে।” প্রার্থীপদ না পেয়ে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরী বিজেপিতে যোগ দেবেন ও প্রার্থী হবেন বলে জল্পনা চলছে। এই প্রসঙ্গে দিলীপের উত্তর, “উনি কবে যোগ দেবেন বা প্রার্থী হবেন কি না সেটা আমার জানা নেই। আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।”
খড়্গপুর মহকুমাশাসকের কার্যালয় চত্বরে তৃণমূল ও বিজেপির মিছিল মুখোমুখি হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশ তাঁদের এক কর্মীকে লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ করেছে গেরুয়া শিবির। শেখ আবু কালাম নামে এক বিজেপি কর্মীর দাবি, “আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশ হঠাৎ এসে আমার উপরে লাঠিচার্জ করে।” পুলিশ অবশ্য লাঠিচার্জের কথা মানেনি। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই মিছিল থেকে এক মহিলাকে কটূক্তি করায় স্থানীয়রা মিছিলের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। আমাদের পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে ঠেলাঠেলি হয়েছে। লাঠিচার্জের ঘটনা আমার জানা নেই।”
খড়্গপুর (গ্রামীণ), ডেবরা ও কেশিয়াড়ির তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন ঘিরেও উচ্ছ্বাস দেখা যায় এ দিন। খড়্গপুরে দীনেন রায়, ডেবরায় প্রাক্তন আইপিএস অফিসার হুমায়ুন কবীর ও কেশিয়াড়িতে পরেশ মুর্মুকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁরা মনোনয়ন জমা দেন এ দিন। ডেবরার সত্যেশ্বর শিবমন্দিরে সস্ত্রীক পুজো দিয়ে খড়্গপুরে মনোনয়ন দিতে আসেন হুমায়ুন। সিপিএমের নারায়ণগড়ের প্রার্থী তাপস সিংহ ও ডেবরার প্রার্থী প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডলও এ দিন মনোনয়ন জমা দেন। সিপিএমের পক্ষ থেকেও শহরে মিছিল হয়।
উত্তেজনার মাঝে ছিল সৌজন্যও। সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের সঙ্গে খড়্গপুর সদরের বিদায়ী বিধায়ক প্রদীপ সরকারকে হাত মেলাতেও দেখা যায়। মেদিনীপুরে মনোনয়ন জমা দেন তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া।