কোচবিহারের ‘মহারাজা’ অনন্ত রায়।
চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের দিন শীতলখুচিতে মৃত ৫ জনকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চান না কোচবিহারের ‘মহারাজা’ অনন্ত রায়। তাঁর স্পষ্ট দাবি, ‘‘আমি রাজ পরিবারের বংশধর। আমার কাছে এই রাজত্বের সকল প্রজাই রাজবংশী।’’
শীতলখুচির একটি বুথে শনিবার সকালে মৃত্যু হয় আনন্দ বর্মণের। আর তার পরে ওই আসনেরই অন্য এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় আরও ৪ জনের। এ নিয়ে স্পষ্ট বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। প্রথম থেকেই তৃণমূল সরব হয়েছে গুলি চালনার বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, বিজেপি-র প্রশ্ন, ‘রাজবংশী’ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল চুপ কেন? খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রবিবার এই প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মৃত ৫ জনের কথাই বলছেন সেই প্রমাণ-সহ জবাবও দিয়েছে তৃণমূল। রবিবার দলের পক্ষে ডেরেক ও’ব্রায়েন একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি রাজগঞ্জে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার যে ছবি পোস্ট করেন তাতে দেখা যায়, মমতা শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ জানাচ্ছেন সেখানে ‘পঞ্চশহিদ স্মরণে’ লেখা। আনন্দ বর্মণের নামও ছিল। মমতা নিজেও ‘আমার পাঁচ ভাই’ বলেই উল্লেখ করেন।
এই বিতর্কের মধ্যেই রাজবংশীদের মধ্যে ‘মহারাজা’ হিসেবে পরিচিত অনন্ত রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের পূর্ব পুরুষরা কখনও এই ভাবে ধর্মের বিভাজন করতেন না। মনে করা হত, রাজত্বের সব প্রজাই নিজের লোক। সবাই রাজবংশী।’’ অনেকগুলি রাষ্ট্রদোহিতার মামলা চলছে অনন্তের বিরুদ্ধে। সে জন্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চোখে ‘ফেরার’ কোচবিহারের ‘মহারাজা’কে থাকতে হয় অসমে। একটা সময় পর্যন্ত তাঁর রাজকীয় জীবনযাত্রা ছিল। কিন্তু ২০২০-র অগস্টের পর থেকে তিনি আর সেখানে থাকতে পারেন না। নানা অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারের জন্য সেই সময় পুলিশ রাজবাড়িতে হানা দিলে সপরিবার পালিয়ে যান অসমে। রাজবংশী ভোট পদ্মে টানতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি অমিত শাহ গিয়েছিলেন অনন্তর অসমের ডেরায়।
তবে নির্বাচনের সময় গোপনে হলেও কোচবিহারে ছিলেন অনন্ত। আবার ফিরে গিয়েছেন অসমে। টেলিফোনে আনন্দাবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথার সময় ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও স্পষ্ট মন্তব্য না করলেও তিনি বলেন, ‘‘সকলেই পরিবর্তনের কথা বলছে। এখন দেখা যাক কী হয়।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোট আসবে যাবে। কিন্তু তার জন্য নরসংহার ঠিক নয়।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়ে কি ভুল করেছে? না, তেমনটা মনে করেন না অনন্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আইন হাতে নিতে চাইলে গুলি তো চালাতেই হবে। আমার মনে হয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন বদল আনা উচিত, যাতে কোনও রকম হিংসার স্থান থাকবে না।’’ এর পাশাপাশি অনন্ত বলেন, ওই ঘটনার পরে ধর্মের ভিত্তিতে যে ভাগাভাগি হচ্ছে তা তিনি পছন্দ করছেন না। এটাকে ‘রাজনৈতিক ভাগাভাগি’ বলে উল্লেখ করে অনন্ত বলেন, ‘‘লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া ‘রাজবংশী’ শব্দের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তাতে কিন্তু হিন্দু-মুসলমান ভাগ নেই। আমি এ ভাবেই দেখছি। হিন্দুরাই শুধু রাজবংশী এমন কোনও কিছু আমি কোনও ইতিহাসে পড়িনি। আবার রাজবংশী মানে সবাই তফসিলি এমনটাও নয়। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র সকলকেই রাজবংশী বলা যেতে পারে।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, এখন রাজার শাসন নেই বলেই এমন ভাগাভাগি। যাঁরা রাজার শাসনে জীবনযাপন করেন তাঁরাই রাজবংশী এই ভাবনাটাই চলে গিয়েছে। আর তাতেই এমন ভাগাভাগি-র রাজনীতি তৈরি হয়েছে বলে মত অনন্তের।