অমিত শাহ।
সোমবার ছিল হোলি। রাজ্যে টানা প্রচারের মধ্যে দু’দিনের জন্য দিল্লিতে থাকার সময় পেয়েছিেলন। তারই ফাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কথা বললেন ঈশানী দত্ত রায়ের সঙ্গে।
প্রশ্ন: আপনারা ‘আসল পরিবর্তন’-এর কথা বলছেন। কিন্তু তৃণমূলের অভিযুক্ত নেতারাই তো বিজেপির ঝান্ডা ধরেছেন। তা হলে পরিবর্তন হবে কী ভাবে?
উত্তর: আমাদের সরকার সঙ্কল্পপত্র অনুযায়ী চলে। বিজেপি ২০১৪ থেকে এখনও পর্যন্ত অনেক রাজ্যে সরকার গঠন করেছে। অনেক রাজ্যে আমাদের জনভিত্তি কম ছিল। জনপ্রতিনিধিও কম ছিল। যেমন, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মণিপুরের মতো রাজ্য। উত্তরপ্রদেশে এসপি, বিএসপি, কংগ্রেস থেকে আমাদের দলে লোক এসেছে। কিন্তু এখন তাঁরা আমাদের কর্মসূচি মেনে চলছেন।
প্রশ্ন: যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সিন্ডিকেটের অভিযোগ, আগামী দিনে তাঁরা যে ফের একই কাজ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?
উত্তর: এরা চাইলেও আমাদের কর্মসূচি আটকাতে পারবেন না। আমাদের লোক দলের মধ্যে নজরদারি করবে। এখানে একটা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলতে পারেন। যখন সরকার ফেলার জন্য অন্য দলের লোক আসে, তখন তাকে অনৈতিক বলতে পারেন। কিন্তু কেউ ভোটের আগে, বিজেপির মতাদর্শ দেখে, পুরনো নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে দলে যোগ দিলে তাতে কী সমস্যা রয়েছে? মমতাদিদি এবং তাঁর ভাইপোর প্রতি বিক্ষুব্ধ হতেই পারেন কেউ। বাংলায় সরকার দুই ব্যক্তির হয়ে গিয়েছে। বাকিদের দোষ দেওয়া ঠিক নয়। মানুষ ঠিক করবেন এঁরা জিতবেন না হারবেন। আমরা তো প্রত্যেককে ভোটে দাঁড় করিয়েছি। মুকুলদা লড়তে চাননি। তাঁকে বলা হয়েছে, লড়তে হবে। জনতা রায় দেবে।
প্রশ্ন: আপনারা এক সময় ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ বলেছিলেন। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। এখন আপনারা কোনও জনসভায় সারদা-নারদ কেলেঙ্কারির কথা বলছেন না। শুধু ‘তোলাবাজ ভাইপোর’ কথা বলছেন।
উত্তর: আমরা বলছি, কিন্তু সারদা-নারদের পর অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। দু’টো লোকসভা, একটা বিধানসভা ভোট হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি ফিকে হয়ে গিয়েছে। নতুন ইস্যু এলে পুরনো ইস্যু পিছনে চলে যায়। কিন্তু আমার প্রশ্ন, মমতার ইচ্ছে না-থাকলে কি এই কেলেঙ্কারি হতে পারত? মুখ্যমন্ত্রী চাইলে মন্ত্রীর দফতর কেড়ে নিতে পারতেন। নেতৃত্বের সায় ছাড়া এটা হতে পারে না। মমতাদিদি কারও উপর অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু আনন্দবাজার অভিযোগ তোলে, এটা আমি মানতে পারি না। এটা ছাপবেন দয়া করে।
প্রশ্ন: মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে তদন্তে কি ঢিলেমি আসেনি? চূড়ান্ত চার্জশিটই তো হয়নি!
উত্তর: আদালতে মামলা চলছে। সিবিআই তদন্ত করছে। কাউকে ক্লিনচিট দেয়নি। আদালতই ঠিক করবে, কে দোষী। চূড়ান্ত চার্জশিটও হবে। এখানে তো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। মমতাদিদি তো গোর্খাদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়েছেন। যদিও আমি মনে করি, মামলা করাটাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছিল। কিন্তু মনে রাখবেন, আমরা কোনও মামলা প্রত্যাহার করিনি।
প্রশ্ন: আপনার দলের নেতারা কোর্টে দোষী প্রমাণিত হলে কী হবে? যদি তিনি মন্ত্রী হয়ে গিয়ে থাকেন?
উত্তর: তাঁকে নৈতিক কারণে ইস্তফা দিতে হবে।
প্রশ্ন: বিজেপির সরকার হলে অভিযুক্ত নেতারা কি মন্ত্রিসভায় থাকবেন?
উত্তর: সেটা মুখ্যমন্ত্রী যিনি হবেন, তিনি ঠিক করবেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, সিবিআই যখন কয়লা চুরির অভিযোগে এক জনের বিরুদ্ধে তল্লাশি চালাল, লালা না কী যেন নাম, তখন পিসি-ভাইপো কেন তাঁর পক্ষ নিলেন? আমার প্রশ্ন, লালা ওঁদের কে? রাজীব কুমারের বাড়িতে তল্লাশি হলে, মুখ্যমন্ত্রী কেন ধর্নায় বসেন?
প্রশ্ন: আপনি শুধু ভাইপোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। প্রমাণ থাকলে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন?
উত্তর: আমি তো অভিযোগ তুলছি। উনি অভিযোগ অস্বীকার করুন। জনতা ঠিক করবে, কার কথা তারা সত্যি বলে মনে করবে।
প্রশ্ন: ভোট এলেই তদন্ত শুরু হয়ে যায়। চিটফান্ডের তদন্ত তো বহু দিন ধরে চলছে। প্রতিবার ভোটের আগেই তদন্তকারী সংস্থার সক্রিয়তা বাড়ে কেন?
উত্তর: সিবিআইকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। কোনও নতুন তথ্য-প্রমাণ এলেই তদন্ত হয়, জেরা হয়।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় সমস্যা চাকরির অভাব। আপনাদের ইস্তাহারে তার দিশা কোথায়?
উত্তর: আমরা ২,৫০০ কোটি টাকা পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য রেখেছি। সাতটা শিল্প পার্ক হবে। সরকার তাতে সুবিধা দেবে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হিমঘর তৈরি থেকে কৃষিতে সংস্কার হবে। আমাদের সঙ্কল্প পত্র মেনে অন্তত এক কোটি রোজগার হবে। রোজগার মানে চাকরি নয়। রোজগার। আমার মতে দু’কোটি রোজগার তৈরি হতে পারে। আমি নিজে সঙ্কল্প-পত্রের খুঁটিনাটি দেখেছি। সকলের মতামত নিয়েছি।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গে তো শিল্পের জন্য জমির অভাব মূল সমস্যা। ক্ষমতায় এলে তার কী ভাবে সমাধান হবে?
উত্তর: এ জন্য ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি হবে। তা ওয়েবসাইটে থাকবে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে কৃষক, শিল্পপতি, জেলাশাসক মিলে বসে জমির সমস্যার সমাধান খুঁজবেন। সংঘাত সব কিছুর সমাধান নয়। ১৯৭৭ থেকে বাম সরকার সংঘাতকেই পন্থা করেছে। আলোচনা করেও উপায় হয়। উত্তরপ্রদেশে প্রতিরক্ষা করিডরের জন্যও জমি মিলেছে। সেখানেও ছোট চাষিদের মধ্যে জমি বিলি করা হয়েছে। এখন কৃষকরা জমির উচিত দামও পাচ্ছেন। কিন্তু বাংলায় কমিউনিস্টদের আমল থেকেই কেন্দ্রকে বাংলার মানুষের বিরোধীর তকমা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মানুষকে টাকা দিলে কেন্দ্র কৃপা করে না। পিএম-কিসান, আয়ুষ্মান-ভারতের টাকা আটকে কার ফায়দা? আমি মনে করি, এ ভাবে রাজ্যের সরকার চলতে পারে না।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের ঋণের বোঝার সমাধান কী ভাবে হবে?
উত্তর: দশ বছরে মমতাদিদি সেই ঋণের বোঝা কতখানি কমিয়েছেন? পরজন্মেও কি বাম সরকারকে দোষ দেবেন? দশ বছরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি কতখানি হয়েছে? এর জবাব দেন না। ঋণের বোঝার সমাধান রাজস্ব আয় বাড়িয়েই করতে হবে। বড়, ছোট, মাঝারি শিল্প করতে হবে। শিল্পের জন্য জল প্রয়োজন। গুজরাতে ১,২০০ ফুট নীচে জল। বাংলায় ৬০ ফুট নীচেই জল। তা-ও কিছু হয়নি। মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে তিন ফসলের চাষ হয়। এ সব বদল করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। উনি কোনও মন্ত্রীকে ক্ষমতাই দেননি। কী করে হবে?
প্রশ্ন: ডাবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলছেন আপনারা। ডাবল ইঞ্জিনের সরকার সত্ত্বেও তো হরিয়ানায় বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি?
উত্তর: হরিয়ানার জিডিপি, চাকরির সংখ্যার বৃদ্ধি দেখুন। হরিয়ানায় সারা দেশের মানুষ কাজ খুঁজতে আসেন। বাংলা থেকে কাজ করতে আসেন। প্রতি মাসে ছ’লক্ষ নতুন লোক আসেন কাজ খুঁজতে। তার পরে এই বেকারত্বের হার। আপনি আমাকে বলুন, এই সরকারের সাফল্য কী? কোনও নতুন শিল্প, পরিকাঠামো হয়েছে কি? টাকা দিয়ে প্রচার ছাড়া আর কোনও অবদান রয়েছে?
প্রশ্ন: ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের তত্ত্ব আসলে কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপির সরকার তৈরি করে ‘এক দেশ, এক ভোট’, তার পরে ‘এক দেশ, এক নেতা’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বলে অভিযোগ।
উত্তর: সরকার আমরা আনতে পারি না। কোন জমানায় পড়ে রয়েছেন? গণতন্ত্রে একটা সরকার আর একটা সরকার বানাতে পারে কি? আমরা কাজ করলে, জনতা ভরসা রেখে সরকার বানাবে। এতে আপত্তি কী?
প্রশ্ন: এ সব ছাড়াও তো বাইরে থেকে সরকার ফেলে দেওয়া হয়।
উত্তর: কিছু কারণে সরকার পড়ে যায়। কিন্তু কোনও সাফল্য তো বলুন। মমতা সরকার তো মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ে ২০১৭-র পর থেকে তথ্যই দেয়নি। আপনারা মমতা সরকারকে প্রশ্ন করেন না। বাম সরকারকে করেননি। আশা করব, আমাদের সরকার হলেও করবেন না।
প্রশ্ন: আপনারা কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনায় সেই মাপের কোনও নেতা নেই বলেই কি আপনারা কাউকে দাঁড় করাননি?
উত্তর: মনে রাখতে হবে, বহু রাজ্যেই আমরা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করিনি। তা সত্ত্বেও সেই রাজ্যের নির্বাচনে দল দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়েছে। ফলে এতে মমতার কোনও সুবিধা হবে না। কারণ বহু জায়গায় মানুষ বিকল্প খোঁজার অবস্থাতেও নেই। আমি নিরপেক্ষ ভাবে পশ্চিমবঙ্গে ঘুরেছি বলেই বলছি।
প্রশ্ন: বিজেপি সরকারে এলে, কে মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়ে তো অনেকের নাম নিয়ে জল্পনা চলছে?
উত্তর: আমার দল গণতান্ত্রিক। ব্যক্তিগত মালিকানার পার্টি নয়। দিদি কাউকে বানাতে পারেন, কাউকে ফেলেও দিতে পারেন। আমাদের বংশ পরম্পরার পার্টি নয়। সংসদীয় বোর্ড বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
প্রশ্ন: তৃণমূল থেকে সদ্য আসা নেতারা মুখ্যমন্ত্রী হবেন না, এমন কোনও বিধিনিষেধ থাকছে? না কি আরএসএস-এর কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন?
উত্তর: সমস্ত সম্ভাবনাই খোলা রয়েছে।
প্রশ্ন: দিলীপ ঘোষ কি বাইরে থেকে লোক আসায় অখুশি?
উত্তর: আমাকে তো কিছু বলেননি।
প্রশ্ন: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ নিয়মবিধি তৈরি না হওয়ায় মতুয়ারা অখুশি?
উত্তর: কোনও ক্ষোভ নেই। গত ৭৩ বছরে লোক এসেছে। কারও বলার ক্ষমতা নেই দিদি আটকাচ্ছেন। ওঁরাও জানেন করোনার কারণে এখন নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু সংবাদপত্র অ্যাজেন্ডা তৈরি করেছে। মমতাদিদি তো এখনও বলছেন, প্রাণ থাকতে সিএএ করতে দেবেন না।
প্রশ্ন: করোনা সত্ত্বেও তো অনেক কিছু হচ্ছে। সিএএ রূপায়ণ করতে কি অসুবিধা?
উত্তর: মমতাদিদি তো এখনও সংঘাতের কথা বলছেন। করোনা মমতাদিদির অগ্রাধিকার নয়। আমাদের অগ্রাধিকার। কিন্তু তোষণ ও ভোটব্যাঙ্ক ছাড়া আর কি সমস্যা রয়েছে ওঁর? মমতাদিদি আসলে নিজের ভোটব্যাঙ্ককে অসন্তুষ্ট করতে চান না। কিন্তু ২ তারিখের পরে ওঁর সরকার কোথায় থাকবে?
প্রশ্ন: কিন্তু এনআরসি নিয়ে তো পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা মানুষের মনে আতঙ্ক রয়েছে।
উত্তর: যখন এনআরসি আসবে, তখন বিরোধ করবেন। সিএএ-কে কেন আটকাচ্ছেন? সিএএ-তে নাগরিকত্ব না-নিলে না-নিতে পারেন। অসমে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি হচ্ছে।
প্রশ্ন: এক বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের ছেঁড়া জিনস পরা নিয়ে মন্তব্য করছেন। দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বারমুডা পরা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। আপনাদের কেউ এর নিন্দা করেননি, দূরত্বও তৈরি করেননি।
উত্তর: আপনার প্রশ্ন বুঝে গিয়েছি। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। দিলীপ বলেছেন, উনি এ ভাবে বলতে চাননি। আপনি মহিলাদের সম্মান নিয়ে প্রশ্ন করলেন। আপনি সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন করলেন। আপনি যদি আজ একই ভাবে এক বুড়িমা মারা গিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করতেন, তা হলে আপনাকে নিরপেক্ষ মনে হত। আনন্দবাজারের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তৈরি হত।
প্রশ্ন: যাঁদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই তো বিজেপিতে।
উত্তর: দেশে ১৬ রাজ্যে আমাদের সরকার চলছে। কোথাও রাজনৈতিক হিংসা নেই। আমরাই তো রাজনৈতিক হিংসার ভুক্তভোগী। ১৩০ জন কর্মী মারা গিয়েছেন। হিংসার মতোই ভোটারদের চিন্তা হল অনুপ্রবেশ। অনুপ্রবেশ না-আটকালে বাংলার কী হবে! কলকাতার লোকেদের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অসমে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অনুপ্রবেশ কমেছে।
প্রশ্ন: অনুপ্রবেশ রোখা তো কেন্দ্রের বিষয়!
উত্তর: এটা ইকোসিস্টেম। এসপি, জেলাশাসক সব না-হলে সফল হয় না। পশ্চিমবঙ্গে করতে পারছি না। রাজ্য আমাদের দিকে দায় ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু বিএসএফ সব জায়গায়। গরু পাচারে কে মদত দিচ্ছে? এটা রাজ্যের বিষয়। দু’দিক থেকেই দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিজেপি এলে পাঁচ বছর পরে ভোট চাইতে গেলে বা ২০২৪-এ গেলে বলবেন, কতখানি অনুপ্রবেশ রোখা হয়েছে। বড় মাত্রায় রোখা হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু বিএসএফের এক কম্যান্ডান্টকে তো পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে!
উত্তর: তাকে আমরাই গ্রেফতার করেছি। কাউকে বাঁচাতে যাইনি। আমার তো কোনও ভাইপো নেই।
প্রশ্ন: বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপি এলে বন্ধ হয়ে যাবে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ব্যবস্থা?
উত্তর: বর্তমানে পেনশন সংক্রান্ত যে ব্যবস্থা চালু রয়েছে তা আগামী দিনেও চালু থাকবে এবং সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে বেতন দেওয়া হবে।
প্রশ্ন: রাজ্যপালের অতি-সক্রিয়তা কি সংবিধান বিরোধী? বিরোধী দলের নেতার ধাঁচে রাজ্যপাল টুইট করছেন বলে অভিযোগে সরব শাসক শিবির?
উত্তর: আপনারা মমতার অভিযোগকে প্রশ্ন হিসেবে তুলে ধরছেন। রাজ্যপাল কোথায় অসাংবিধানিক কাজ করেছেন তা আমায় দেখান। তেমন হলে আমি প্রশ্ন করব। অব্যবস্থা থাকলে টুইট করাই উচিত। রাজ্যপাল কী করবেন, তিনি ঠিক করবেন। অসাংবিধানিক কিছু করলে আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রশ্ন করা উচিত। উনি কোনও রাজনৈতিক কথা বললে, তা বলুন।
প্রশ্ন: পেট্রল-ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম নিয়ে বিজেপি প্রার্থীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।
উত্তর: জনতা সমস্যায় রয়েছেন বুঝি। সমবেদনা রয়েছে। কোভিডের পরে বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তনের ফলেই দাম বেড়েছে। তবে এটা অস্থায়ী। ছয়-সাত মাসে আগের জায়গায় ফিরে আসবে।
প্রশ্ন: রান্নার গ্যাসে সরকারি ভর্তুকি তো কমে গিয়েছে।
উত্তর: ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না এমন নয়। আমার কাছে ভর্তুকির বিশদ তথ্য নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেই, দাম কমবে।
প্রশ্ন: বিজেপি ক্ষমতায় এলে কি বাংলা ভাগ হবে? পৃথক গোর্খাল্যান্ড তৈরি হবে?
উত্তর: কোনও ভাবেই হবে না। এমন কোনও কর্মসূচি নেই। আমরা চাই না বাংলার বিভাজন হোক।
প্রশ্ন: বিজেপি হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এমন ঝাঁপিয়ে পড়ল কেন?
উত্তর: আমরা সব রাজ্যেই যাই। মমতাও গুজরাতে আসুন। ওঁকে স্বাগত।
প্রশ্ন: বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কি অন্য দলের বিধায়কদের আহ্বান জানানো হবে?
উত্তর: (আগেই থামিয়ে দিয়ে) এই প্রশ্নই উঠছে না। ২০০-র বেশি আসন পাব। কাল্পনিক প্রশ্নের কী জবাব দেব? আমি নিরপেক্ষ ভাবে, খোলা মনে ঘুরেছি। যদিও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিরপেক্ষ থাকা মুশকিল।
প্রশ্ন: এত নিশ্চিত হলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিজেপি নেতারা মরিয়া হয়ে ডাকছেন কেন?
উত্তর: আমি তো আপনাকেও বলব যোগ দিন। সব ভোটারদের বলি। আমার কাজ। আপনারা যেমন সবাইকে বলেন আনন্দবাজার পড়ুন।
প্রশ্ন: সৌরভ তো তা-ও এলেন না!
উত্তর: তা বলে তো ওঁর বাড়িতে গুন্ডা পাঠাতে পারি না।
প্রশ্ন: লোকে বলে আপনিই ভাইপোকেই নেতা বানিয়ে দিয়েছেন।
উত্তর: ২ মে-র পরে আমাকে প্রশ্ন করবেন। আমি বানিয়েছি না কে বানিয়েছে!
প্রশ্ন: নন্দীগ্রামে কী হবে?
উত্তর: শুভেন্দু বড় ব্যবধানে জিতবে। আমার হিসেবে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে জিতবে।
প্রশ্ন: তা হলে তো উনি মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন!
উত্তর: সংসদীয় বোর্ড ঠিক করবেন কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। মমতাদিদি যে বাংলার সংস্কৃতির কথা বলছেন, উনি তার জন্য বাংলা ভাষার জন্য কী করেছেন? আমরা দুর্গাপুজোর কথা বলার পরে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তার আগে কী করেছেন? কলকাতাকে হেরিটেজ সিটি করার জন্য কী করেছেন? আমরা সব স্কুলে বাংলা বাধ্যতামূলক করব। দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হবে।
প্রশ্ন: মমতাও তো দুর্গাপুজো কার্নিভাল শুরু করেছেন! পশ্চিমবঙ্গে বরাবরই বড় করে দুর্গাপুজো হয়। এতে নতুনত্বের কী আছে?
উত্তর: উনি তো মহরমের জন্য বিসর্জন বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন অগ্রাধিকার কোথাও দেখিনি। এমন তোষণ কেন হবে? কেন আদালতকে নির্দেশ দিতে হবে? মহরম, দুর্গাপুজো কোনওটাই রোখা উচিত নয়। প্রশাসন দুটোরই ব্যবস্থা করবে। তা না করাটা ব্যর্থতা নয়, তোষণ। আমি তো মহরম রুখতে বলছি না। কেউ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হতে চায় না। না হিন্দু, না মুসলমান।
প্রশ্ন: সিএএ বা এনআরসি হলে বাংলার মুসলিমদের ভয়ের কিছু আছে?
উত্তর: প্রথমেই বলে রাখি, এনআরসি করার প্রশ্নে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সিএএ-এর ক্ষেত্রে স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, এই আইন নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার আইন নয়। তাই আমি মুসলিম ভাইদের বলতে চাই ভয়ের কিছু নেই।
সহযোগী প্রতিবেদক প্রেমাংশু চৌধুরী, অনমিত্র সেনগুপ্ত