বৃদ্ধা শোভারানি মজুমদারের মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের পালা। নিজস্ব চিত্র।
মাস খানেক আগে নিজের বাড়িতেই ‘আক্রান্ত’ হয়েছিলেন বিজেপি কর্মী গোপাল মজুমদার ও তাঁর ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা শোভারানি মজুমদার। বৃদ্ধার ‘আক্রান্ত’ চেহারার ছবি সংবাদমাধ্যম ও সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে বিস্তর চর্চা হয়। বিজেপি অভিযোগ করেছিল, তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতেই ‘আক্রান্ত’ হয়েছেন বৃদ্ধা। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল। তারা ওই বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যদের ভিডিয়ো দিয়ে নেটমাধ্যমে দাবি করে, এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল যুক্ত নয়। রবিবার ভোর রাতে মৃত্যু হয়েছে শোভারানির। বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে টুইট করে ফের তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। টুইট করেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ও পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যও। পাল্টা টুইটে আবার বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অন্যতম মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়ান। নন্দীগ্রামের জনসভা থেকে শাহের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
শোভারানির মৃত্যুতে শাহ টুইটে লেখেন, ‘টিএমসি-র গুন্ডাদের নির্মম অত্যাচারে আজ বাংলার কন্যা শোভা মজুমদার মহাশয়ার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। এই পরিবারের গভীর ক্ষত আর ব্যথা দীর্ঘদিন মমতা দিদিকে বিদ্ধ করবে। হিংসামুক্ত ভবিষ্যত গড়তে, বাংলার মা-বোনেদের জন্য সুরক্ষিত রাজ্য গড়তে বাংলা লড়াই করবে’।
আরও আক্রমণাত্মক টুইট করেন মালব্য। তিনি বলেন, ‘শোভা মজুমদারের মৃত্যু হয়নি। তৃণমূলের রক্তপিপাসু গুন্ডারা ওঁকে খুন করেছে। বাংলার নিষ্পাপ নাগরিক, মহিলা ও বোনদের রক্ত লেগে আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের হাতে। যদি এই ঘটনা আমাদের বিবেককে আঘাত না করে, তো কবে করবে? তৃণমূল সরকার চালানোর জন্য অনুপযুক্ত’।
নাড্ডা টুইট করে বলেন, ‘নিমতার বৃদ্ধ 'মা' শোভা মজুমদারের আত্মার শান্তি কামনা করি। ছেলে গোপাল মজুমদার বিজেপি করার জন্য আজ তাঁকে প্রাণ দিতে হোলো । বিজেপি এই বলিদান কে সর্বদা মনে রাখবে । ইনি ও বাংলার 'মা' ছিলেন ইনি ও বাংলার 'মেয়ে' ছিলেন । বিজেপি সবসময় বাংলার মা ও মেয়েদের সুরক্ষার জন্য লড়াই করবে’।
বিজেপি অভিযোগ করলেও প্রথম থেকেই এই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের যোগ অস্বীকার করে আসছে তৃণমূল। ঘটনার পরেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘এই ঘটনা পারিবারিক বিবাদের জেরে হয়েছে।’’ বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে তৃণমূল সংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘বয়স জনিত কারণে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কারও কোনও যোগ নেই।’’
রবিবার নন্দীগ্রামে জনসভা ছিল মমতার। সেখানেই কথা প্রসঙ্গে শাহের টুইটের কথা তোলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘আমি জানি না কেন মারা গিয়েছেন, কী ভাবে মারা গিয়েছেন। আমি যে কোনও মৃত্যুকে ধিক্কার জানাই। বাংলায় আমরা মৃত্যুকে ভালোবাসি না। মা-বোনদের উপর অত্যাচার পছন্দ করি না। অমিত শাহ টুইট করে বলছে বাংলার কী হাল। তোমার উত্তরপ্রদেশ, হাথরস, দিল্লি, রাজস্থানের কী হাল? তখন কি মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগানো থাকে? আর এখানে কিছু হলেই টুইট করছে।’’
অন্য দিকে, শাহ ও মালব্যর অভিযোগের পাল্টা জবাবে টুইট করে ডেরেক বলেন, ‘প্রতিটি মৃত্যুই খুব দুঃখের। যদিও এই ঘটনা নিয়ে পরিযায়ী দলের রাজনীতি করার চেষ্টা ও বাংলাকে কলুষিত করার চেষ্টা ঘৃণ্য। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি নেতারা মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছেন। তাঁদের নিজেদের রাজ্যের কী রেকর্ড সেটা একটু দেখে নিন’। নিজের টুইটের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের পরিসংখ্যান দিয়েছেন তিনি।
২৭ ফেব্রুয়ারি আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শোভারানি। চার দিন আগে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। তারপর থেকে বাড়িতেই ছিলেন। রবিবার রাত থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। সোমবার বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়িতে যান উত্তর দমদমের বিজেপি প্রার্থী অর্চনা মজুমদার। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার উত্তর দমদমে মিছিল করে বিজেপি। থানাও ঘেরাও করা হয়।
শোভারানি ও তাঁর ছেলে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার পরে ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করেছিল ব্যারাকপুর পুলিশ। অভিযুক্তরা আদালতে আত্মসমর্পণও করে। যদিও বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের রাজনীতি ফের শুরু হল।