উলুবেড়িয়া পুরসভার ৩১ নং ওয়ার্ডে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র।
কারও ‘অভিমান’ দল টিকিট না দেওয়ায়। কারও ক্ষোভ প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায়। এই অবস্থায় প্রার্থী নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মানভঞ্জন হুগলিতে তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই জেলার ১৮টি বিধানসভা আসনেই এমন অনেক নেতা-কর্মী আছেন যাঁরা স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়। দীর্ঘদিন দলের হয়ে কাজ করছেন আন্তরিকভাবে। এই অংশের অনেকেই এ বার টিকিটের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু পাননি। তাতে দলের ঘোষিত প্রার্থীর হয়ে কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্থ। আবার এমন কয়েক জন নেতা আছেন, যাঁরা টিকিট পেলেও তাঁদের বিপত্তি ভিন্ন। অবস্থানগতভাবে অপর গোষ্ঠীর নেতারা নির্বাচনে কী ভূমিকা নেন, সেটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তাঁদের জেতা-হারার ক্ষেত্রে।
হুগলি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় চণ্ডীতলায় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের নেপথ্যে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা দলের বর্ষীয়ান নেতারা অনেকেই স্বীকার করেন। সুবীর এ বার চণ্ডীতলায় দলীয় টিকিটের প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু চণ্ডীতলায় এ বারেও টিকিট পেয়েছেন স্বাতী খন্দকার। তিনি ওই বিধানসভার এক দশকের বিধায়ক। টিকিট না পাওয়ায় সুবীর দলীয় প্রার্থীর হয়ে কতটা মাঠে নামবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
তিনি নিজে কী বলছেন?
তাঁর কথায়, ‘‘দল থেকে বারে বারেই যদি শুধু উপেক্ষা পাই, তা হলে মন ভেঙে যায়। এ বার নানা বেসরকারি এজেন্সি সমীক্ষার কাজ করেছে। তাঁদের আতসকাচে আমরা ব্রাত্যই থেকে গেলাম? আর জেলায় দলীয় সংগঠনে আমাদের মাথার উপর যাঁরা আছেন, তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে চোখের চিকিৎসার প্রয়োজন। তবে প্রার্থী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। দল প্রয়োজন মনে করলে দায়িত্ব দিলে সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’’
এক সময়ের সিপিএমের দুর্গ জাঙ্গিপাড়ায় তৃণমূলের জমি পাওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন সেখ মহিনুদ্দিন ওরফে বুদো। তিনি দলীয় সংগঠনে ব্লকের যুব সভাপতি ছিলেন। জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। এখন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন আগেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রার্থী স্নেহাশিস চক্রবর্তী কোনও যোগাযোগ করেননি আমার সঙ্গে। আমি হয়তো তাঁর অপছন্দের লোক। তিনি দায়িত্ব দিলে বা দল যদি আমাকে ভোটের কাজে ব্যবহার করতে চায় আমি আছি। না হলে আমাকে অন্য পথ দেখতে হবে।’’
তৃণমূলের রাজ্যে ক্ষমতায় আসার অন্যতম ভরকেন্দ্র সিঙ্গুর। সেখানে এ বারের প্রার্থী বেচারাম মান্না। সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষার অন্যতম মুখ মহাদেব দাস। দলীয় অবস্থানগতভাবে তিনি বেচারামের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা। কিছু দিন আগে তাঁকে সিঙ্গুরের ব্লক সভাপতি করা হয়েছিল। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে বেচারাম-ঘনিষ্ঠ নেতাকে ওই পদে বসানো হয়। এখন নির্বাচনে বেচারামের হয়ে মহাদেব কতটা সক্রিয় হবেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। মহাদেব সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি।
বলাগড়ের বাসিন্দা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। দলের জেলা যুব সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি করা হয়। তিনি বলাগড়ে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর গলাতেও অভিমান স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘কুড়ি বছর দল করছি। গতবার বিধানসভা নির্বাচনে চন্দননগরে ইন্দ্রনীল সেনের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম। টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে দল আমাকে যোগ্য মনে করল না। দল জেলার যেখানেই হোক দায়িত্ব দিলে পালন করব। না হলে ঘরে বসে থাকব।’’ শ্রীরামপুরে টিকিট না পেয়ে রিষড়ার বিদায়ী পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্রও ক্ষুব্ধ বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
এই বিষয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সবে টিকিট বন্টন হয়েছে। মান-অভিমান থাকেই। সে সব ভুলে সবাই মিলিত ভাবে বিজেপিকে উৎখাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ব। সকলের সঙ্গেই আমরা কথা বলব।’’