শুভেন্দু অধিকারী ও সৌমেন মহাপাত্র। —ফাইল চিত্র
ভোটের ফল বেরোতেই পূর্ব মেদিনীপুরে দলে ঝাড়াইবাছাই শুরু করল তৃণমূল। দলে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠদের চিহ্নিত করে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পথে হাঁটছে চাইছে জোড়াফুল শিবির। জেলার ১৬টি বিধানসভার ৭টিতে হার হয়েছে তৃণমূলের। তার কারণ হিসাবে ‘দাদার অনুগামী’দের ‘অন্তর্ঘাত’ রয়েছে বলেই করছে শাসকদল।
বাম শাসনের অবসানের পর, গত এক দশকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জাঁকিয়ে বসেছিল কাঁথির অধিকারী পরিবার। বুথ কমিটি থেকে শুরু করে জেলা কমিটি— সর্বত্রই নিয়ন্ত্রণের রাশ ছিল ‘শান্তিকুঞ্জ’র হাতে। তবে গত নভেম্বরে অধিকারী পরিবারের মেজ ছেলে শুভেন্দু গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর পর থেকেই ওই পরিবারের প্রভাব মুক্ত জেলা গড়ে তুলতে দাবি জোরালো হয়েছে তৃণমূলেরই অন্দরে।
জোড়াফুল শিবিরের একাংশের বক্তব্য, শুভেন্দুর ‘বশ্যতা’ না মানায় এক সময় যাঁরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন, জেলায় দলের কর্তৃত্ব এখন তাঁদের হাতেই। অনেকেই বলছেন, দলে থাকাকালীন শুভেন্দুর চাপেই পূর্ব মেদিনীপুর ছেড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় চলে যেতে হয়েছিল সৌমেন মহাপাত্রকে। সেই সৌমেনের হাতেই এখন জেলার রাজপাট। তিনি দলের জেলা সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বেই এ বার গত লোকসভায় পিছিয়ে থাকা পূর্ব পাঁশকুড়া এবং তমলুক কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করেছে তৃণমূল। কিন্তু নন্দীগ্রাম-সহ ৭টি কেন্দ্রে হেরেছে দল। সেই হারের পর্যালোচনা করছে জোড়াফুল শিবির। তৃণমূল মনে করছে, যে সমস্ত আসনে হার হয়েছে সেখানকার অনেক নেতাই তৃণমূলে থেকেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ‘দাদার অনুগামী’র ভূমিকা পালন করেছেন।
জোড়াফুল শিবিরের স্পষ্ট ধারণা, ওই সব নেতাদের অন্তর্ঘাতের জেরেই জেলার ৭টি আসনে তাদের হার হয়েছে। ওই সব নেতাদের বেছে বেছে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
শুক্রবার জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকের পর দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে খেজুরির প্রাক্তন বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল এবং জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ আনন্দময় অধিকারীকে। এখানেই থামছে না তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বলছেন, ‘‘হেরে যাওয়া ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রেই পৃথক ভাবে পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট হাতে এলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সৌমেন আরও বলছেন, ‘‘কিছু দিন আগে পর্যন্ত যাঁরা জেলার দায়িত্বে ছিলেন তাঁরাই জেলা জুড়ে অন্তর্দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি তৈরি করে গিয়েছিলেন। পরে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়ে একাধিক নেতাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাজও করিয়েছেন। এই মুহূর্তে দুই নেতাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে এলেই দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’