West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ভোটের প্রচারেই কি বাড়ল সংক্রমণ, প্রশ্ন

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২১ ০৮:২০
Share:

সতর্কতার বালাই নেই। সোমবার পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: সুজিত মাহাতো

পুরুলিয়া জেলা জুড়ে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতেই পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু শহর নয়, একাধিক ব্লকের পরিসংখ্যান দেখে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়ে সোমবার একটি বৈঠকও করেছে প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন সেখানে। তবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা জানানো হয়নি।

Advertisement

প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দেড়শোরও কম। পরের পাঁচ দিনে সেই সংখ্যা পাঁচশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘আমরা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েছি বলেই আক্রান্তদের সংখ্যা সামনে আসছে। এখন প্রতিদিন হাজারেরও বেশি পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বাড়িয়ে আক্রান্তদের খুঁজে বার করা হচ্ছে। উপসর্গ না থাকলে কোয়রান্টিন করে আর উপসর্গ থাকলে চিকিৎসার মাধ্যমে এগনো হবে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, ৮ এপ্রিলের পর থেকে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগে সংক্রমণের হার যেখানে ছিল ২.৬৫ শতাংশ, সেটাই এখন ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।

Advertisement

পুরুলিয়ায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার পিছনে ভোটে প্রচার-পর্বের ভিড়ই অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। প্রথম দফায়, ২৭ মার্চ পুরুলিয়ায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রচারের শেষ দিন ছিল ২৫ মার্চ। বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আক্রান্তের সংস্পর্শে এলেই করোনার লক্ষণ দেখা দেয় না। আট-ন’দিন বা কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি সময় পরে লক্ষণ দেখা দেয়। ভোট পরবর্তী সংক্রমণের লেখচিত্র দেখলেই স্পষ্ট হবে, প্রচার পর্বের ভিড় সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ।’’

গত বছর মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণার পরে, দু’মাসেরও বেশি সময় করোনামুক্ত ছিল পুরুলিয়া। পুজো বা কালীপুজোর সময়ে মানুষজন পথে নামলেও সংক্রমণ সেই অর্থে লাফিয়ে বাড়েনি। গত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে সংক্রমণ প্রায় শূন্যে নেমে আসায় তিনটি সেফ হাউস বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। নয়নবাবু বলেন, ‘‘ভোটের প্রচারে সভা, মিছিল, রোড-শোতে থিকথিকে ভিড় দেখেছি। অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক ছিল না। সে ভিড় থেকেই যে সংক্রমণ ছড়ায়নি, কে বলতে পারে!’’

ঝালদার মসিনা গ্রামের বিজেপি কর্মী ভীমপদ মাহাতো বাঘমুণ্ডির কুশলডিতে অমিত শাহের সভায় যোগ দিয়েছিলেন। ওই ব্লকেরই মাঘা গ্রামের সংযুক্ত মোর্চার সমর্থক শক্তিপদ মাহাতোও বাঘমুণ্ডিতে অধীর চৌধুরীর সভায় গিয়েছিলেন। দু’জনই বলেন, ‘‘মাস্ক সঙ্গে ছিল। তবে কেউই পরেনি দেখে পরিনি।’’ বান্দোয়ানের ধবনি গ্রামের তৃণমূল কর্মী আদিত্য মাহাতো বলছেন, ‘‘প্রতিবার ভোটের সময় দলের সভাগুলিতে যাই। এ বার করোনার মধ্যে স্বাস্থ্য-বিধির যা অবস্থা দেখছিলাম, তাতে বাড়ি ছেড়ে বেরোইনি।’’

বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রে নির্বাচন তো হবেই। সাবধানতা মেনেই মিটিং-মিছিল হয়েছে। আবার সাবধান হতে হবে।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি গুরুপদ টুডু বলেন, ‘‘আমরা নেতা-কর্মীদের বার বার মাস্ক পরতে বলেছি। তবে প্রবল ভিড়ের চাপে সত্যিই অনেক জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকেনি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘সভা-সমাবেশের জন্য করোনা ছড়ানোর দাবি অতিসরলীকরণ। বাসে-ট্রেনের ভিড় তো সভায় যায় না। মানুষ নানা দরকারে বাইরে বেরোবেন। তবে প্রচারের সময় জমায়েতের প্রতিযোগিতা চলছে। এ ব্যাপারে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ করা দরকার ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement