মাস্ক আছে। তবে তা মুখে নয়, থুতনিতে। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে। রবিবার। ছবি: কিংশুক আইচ ।
জেলায় ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। দেখা যাচ্ছে, ব্লকগুলির তুলনায় শহরগুলিতে মৃত্যুর হার বেশি। বেশিরভাগ ব্লকে মৃত্যুর হার যেখানে ১ শতাংশের আশেপাশে, সেখানে শহরগুলির কোথাও মৃত্যুর হার ২ শতাংশের বেশি, কোথাও আবার ৩ শতাংশের বেশি। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, শহরের করোনা সংক্রমিতদের অনেকে শুরুতে হাসপাতালে আসতে চান না। এমন সময়ে তাঁরা আসেন, যখন শারীরিক পরিস্থিতির অনেকখানি অবনতি হয়ে যায়। তখন চেষ্টা করেও অত্যন্ত সঙ্কটজনক রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্বদের, যাঁরা প্রবল শ্বাসকষ্টে ভোগেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলাস্তরে সম্প্রতি করোনা মোকাবিলায় গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠকে অন্যান্য দিকের পাশাপাশি করোনায় মৃত্যুর হারের বিষয়টিরও পর্যালোচনা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। দেখা গিয়েছে, জেলায় করোনায় মৃত্যুর হার ১.৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রায় ২০০ জন সংক্রমিতের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরে মৃত্যুর হার অনান্য অনেক জেলার তুলনায় অনেকটা কমই। বৈঠকে জেলাশাসক রশ্মি কমলের বার্তা, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনের মাধ্যমেই করোনাকে প্রতিহত করা সম্ভব। সব শহর এবং ব্লকে সকলে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি না দেখতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর জেলার শহরগুলিতেও সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে মৃত্যুর হার ১.১৭ শতাংশ। রেলশহর খড়্গপুরে মৃত্যুর হার ২.২৭ শতাংশ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত খড়্গপুরে সংক্রমিত হয়েছেন ২,৯৯৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬৮ জনের। এর মধ্যে রেল, ইএফআর প্রভৃতি যোগে সংক্রমিত হয়েছেন ১,১৬১ জন। এ ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। ঘাটালে মৃত্যুর হার ৩.৮৩ শতাংশ। তুলনায় বেশিরভাগ ব্লকে মৃত্যুর হার কম। যেমন ডেবরায় মৃত্যুর হার ১.৬১ শতাংশ, বেলদায় ১.৮৬ শতাংশ, দাঁতনে ০.৬২ শতাংশ। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৭,৫৭৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৭১ জনের। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৩৪। আর সুস্থ হয়েছেন ১৭,০৬৯ জন। অর্থাৎ, জেলায় সুস্থতার হার ৯৭.১৩ শতাংশ, মৃত্যুর হার ১.৫৪ শতাংশ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী অবশ্য জেলায় মৃত্যু তিনশো ছাড়িয়েছে। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ২০,৯৯২ জন। সুস্থ হয়েছেন ২০,২৬১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩১৩ জনের। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪১৮।
কেন এই ফারাক? জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, এমন অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন, যাঁরা জেলার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে ভিন্ জেলায় থাকেন। তাঁদের নাম জেলার তালিকায় নথিভুক্ত নেই। রাজ্যের তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। মোট মৃতের মধ্যে বেশিরভাগই প্রবীণ। করোনা সংক্রমণের কিছু দিন পর থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, কোমর্বিডিটি অর্থাৎ অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে করোনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। প্রবীণদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিকের মতো রোগ বেশি থাকে বলেই মৃত্যুর হার এত বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জেলার ছবিটাও এক। কোমর্বিডিটির কথা মাথায় রেখেই প্রবীণদের ঘরের বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছিল কেন্দ্রের এক নির্দেশিকায়। এখনও তা রয়েছে। তবু মানুষের অসচেতনতায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে।