আইনি পদক্ষেপ করার কথা ভাবছেন অভ্র।
ভুয়ো ছবি প্রকাশ করার দায়ে অভিযুক্ত এ বার বিজেপি। ভোট পরবর্তী হিংসায় শীতলখুচিতে মৃত দলীয় কর্মীর ছবি বলে বিজেপি যা প্রকাশ করেছে, সেটা আসলে তাঁর বলে দাবি করেছেন এক সাংবাদিক। বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষমা চাইলেও অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই সাংবাদিক আইনি পদক্ষেপের চিন্তাভাবনা করছেন।
পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। ভুয়ো খবর ছড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এমনকি ভুয়ো খবর সংক্রান্ত কোনও বিষয় জানা থাকলে তাদের জানানোর জন্য ইমেল এবং ফোন নম্বরও প্রকাশ করেছে কলকাতা পুলিশ। নেটাগরিকদের একটা বড় অংশও ভুয়ো খবর নিয়ে সর্বদা সচেতনমূলক পোস্ট করছেন নেটমাধ্যমে। সেই আবহেই ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠল বিজেপি-র বিরুদ্ধে। ভোট পরবর্তী হিংসায় তাদের দলের ৯ জন মারা গিয়েছেন বলে দাবি করে শুক্রবার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই ভিডিয়োয় ওই ৯ জনের ছবি, নাম, ঠিকানাও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরে অভ্র দাবি করেন, ওই ৯ জনের মধ্যে শীতলখুচিতে তাদের যে কর্মী মারা গিয়েছেন বলে দাবি করেছে বিজেপি, সেই ছবি আসলে তাঁর। এর পর যদিও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেন, অভ্রের লেখা প্রকাশ করতে গিয়ে ভুলবশত তাঁর ছবি প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। এ জন্য তাঁরা দুঃখিত। তবে, অভ্র এই ঘটনা নিয়ে বিজেপি এবং ওই দলের আইটি সেলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছেন।
রবিবার ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিক্ষিপ্ত জায়গা থেকে অশান্তি অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল-বিজেপি— দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সে প্রসঙ্গ তোলেন। মমতাও একাধিক বার হিংসা বন্ধ করে শান্তির বাতাবরণ ফিরিয়ে আনার বার্তা দিয়েছেন। এ সবের মধ্যেই মমতার শপথগ্রহণের দিন সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা ভোট পরবর্তী হিংসার ‘ভুয়ো খতিয়ান’ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই দিন কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, স্বপন দাশগুপ্ত এবং শমীক ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে ‘মমতার খুনের খেলা’ নামে ছ’মিনিটের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন বিজেপি নেতৃত্ব।
ভিডিয়োটি প্রকাশের আগে নড্ডা বলেন, ‘‘দলের যে ৯ জন কর্মী খুন হয়েছেন, তাঁদের ছবি তুলে ধরছি। যদিও আমি এখানে আসা পর্যন্ত সংখ্যাটা বেড়ে ১৪ হয়ে গিয়েছে।’’ তার পরই ওই ভিডিয়োয় একাধিক ক্ষত বিক্ষত দেহ, মারামারি, হামলার দৃশ্য দেখানো হয়। তার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে নন্দীগ্রামের সভায় মমতার একটি বক্তৃতা জুড়ে দেওয়া হয়। যেখানে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আগামী দিনে আমরাই থাকব। তখন দেখে নেব।’’ দলের নিহত কর্মীদের নাম-ধামও প্রকাশ করা হয় ওই ভিডিয়োয়। তাতে ভোট পরবর্তী হিংসায় শীতলখুচিতে মানিক মৈত্র নামের এক বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন বলে দেখানো হয়। এ সব ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি। বিজেপি-র ফেসবুক এবং টুইটার অ্যাকাউন্টেও ওই ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। শুক্রবার পর্যন্ত ফেসবুকেই ১৫ লক্ষের বেশি মানুষ সেটি দেখেছেন। প্রচুর নেটাগরিক সেটি শেয়ারও করেছেন।
এ সব নিয়ে রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই বৃহস্পতিবার অভ্র একটি টুইট করেন। সর্বভারতীয় একটি সংবামাধ্যমে কর্মরত অভ্র অভিযোগ করেন, শীতলখুচিতে মৃত কর্মী বলে যাঁর ছবি প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব, সেটি আসলে তাঁর। তিনি দিব্যি বেঁচেবর্তে রয়েছেন। টুইটারে অভ্র লেখেন, ‘আমি অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, বেঁচে আছি, সুস্থ আছি এবং শীতলখুচি থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার দূরে আছি। বিজেপি-র আইটি সেল-এর দাবি, আমি নাকি মানিক মৈত্র, শীতলখুচিতে মারা গিয়েছি। এই ধরনের ভুয়ো পোস্টে বিশ্বাস করবেন না। দুশ্চিন্তা করবেন না। আবারও বলছি। আমি বেঁচে আছি’।
অভ্র মুখ খোলার পর বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। ‘টনক নড়ে’ বিজেপি-রও। দলের দরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি লেখা শেয়ার করতে গিয়ে ভুলবশত ওঁর ছবি বসে গিয়েছে’। অভ্রর লেখা একটি প্রতিবেদনও তুলে ধরে তারা। কিন্তু অভ্রর প্রশ্ন, এই ভুলে তো মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারত তাঁর! বৃহস্পতিবার টুইটারে তিনি লেখেন, ‘ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত না বলে ভুলবশত যদি কাউকে খুনে অভিযুক্ত বা ধর্ষণে অভিযুক্ত বলে দেখানো হত ওই ভিডিয়োয়, তা হলে কী অপূরণীয় ক্ষতি হত ভাবুন’।
বিতর্ক বাধতেই ‘টাইম লাইন’ থেকে ওই ভিডিয়ো সরিয়ে দেওয়া হলেও, ফেসবুক এবং টুইটারে বিজেপি-র আর্কাইভ ভিডিয়োয় এখনও সেটি দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন অভ্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকালে উঠে দেখি ১০০-র বেশি মিস্ড কল। কী হয়েছে জানার আগে বন্ধু অরবিন্দ বলল বিজেপি-র আইটি সেল আমার ছবি দিয়ে ভিডিয়ো ছেড়েছে। তাতে শীতলখুচির মানিক মৈত্র বলে দেখানো হয়েছে আমাকে।’’
এর আগে, ভোটের আবহে ফলাও করে কলকাতা বাসী এক মহিলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সময় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ওই মহিলা পাকা বাড়ি পেয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের কাছে ওই মহিলা দাবি করেন, বিজেপি-র লোকজন এসে এমনিই ছবি তুলে নিয়ে যান। কোনও বাড়ি পাননি তিনি। বরং ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় বৌবাজারে একটি ঘরে পরিবারের বাকি ৬ সদস্যকে নিয়ে মাথা গুঁজে থাকেন।