মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উস্কে দেওয়া জল্পনা নস্যাৎ করে তৃণমূল জানিয়ে দিল আর কোনও কেন্দ্র থেকে লড়বেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, অন্য কোনও কেন্দ্রে মমতার লড়ার প্রশ্ন নেই কারণ নন্দীগ্রামেই তিনি জিতবেন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী উলুবেড়িয়ায় মমতার অন্য কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়ে বলেন, ‘‘দিদি অন্য কেন্দ্র থেকে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে যে গু়ঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তা কি সত্যি? আপনি প্রথমে ওখানে (নন্দীগ্রাম) গেলেন, সেখানকার মানুষ আপনাকে জবাব দিয়েছে। আপনি যদি অন্য কেন্দ্র থেকে লড়তে চান, তা হলেও বাংলা প্রস্তুত।’’
এর পরেই তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, মমতার অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে লড়াই করার কোনও প্রশ্নই নেই । কারণ, নন্দীগ্রাম থেকেই তিনি জিতছেন।
চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে তেখালির মাঠে সভা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন এ বার তিনি প্রার্থী হবেন নন্দীগ্রামে। তখন থেকেই নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে ভোটের পারদ চড়তে শুরু করে। এর পরেই বিজেপি নেতৃত্ব কৌশলে নেটমাধ্যমে মমতার ওপর চাপ বাড়াতে শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম কেন্দ্রেই মুখ্যমন্ত্রীকে প্রার্থী হওয়ার চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকেন। বিজেপি শিবিরের নেতারা নেটমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানান, ক্ষমতা থাকলে একটিমাত্র কেন্দ্রে লড়াই করুন মমতা। গেরুয়া শিবিরের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নন্দীগ্রামেই প্রার্থী হন মমতা। কিন্তু ৫ মার্চ কালীঘাটের বাসভবনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় টালিগঞ্জ কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে অরূপ বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করেও, ওই কেন্দ্রে তিনি প্রার্থী হতে পারেন বলে মন্তব্য করেন।
জল্পনা শুরু হয় বাংলার রাজনীতির কারবারিদের মধ্যে। হয়তো নন্দীগ্রাম আসনকে নিজের জন্য নিরাপদ মনে করছেন না বলেই বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে টালিগঞ্জে প্রার্থী হতে চাইছেন মমতা।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের এমন ঘোষণা প্রসঙ্গেও বেশ কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে রাজনীতির কারবারিদের। তাদের কথায়, যদি নন্দীগ্রামের নির্বাচনের পর মমতা আর কোনও কেন্দ্রে প্রার্থী হন। তা হলে বিরোধী বিজেপি জোর প্রচার চালাবে নন্দীগ্রামে হার নিশ্চিত জেনেই অন্যত্র প্রার্থী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এমন প্রচার হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বাকি ছয় দফার ভোটে। কারণ ২৯৪ আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মাত্র ৬০টি আসনে ভোট হয়েছে। এখনও ৬ দফায় ২৩৪টি আসনে ভোট বাকি। তাই দলের নেতা-কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরুক চাননি দলনেত্রী। তাই নন্দীগ্রামের ভোট শেষের আগেই আর কোথাও প্রার্থী না হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এমনটা করে একদিকে তিনি যেমন দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছেন। তেমনই, আবার বিজেপি-কেও প্রচারের হাতিয়ার তুলে দেননি।
ভোট প্রচারের শেষ পর্যায়ে নন্দীগ্রামের একটি সভায় মমতা বলেছিলেন, ‘‘আড্ডার ছলেই আমি নন্দীগ্রামে দাঁড়াব বলেছিলাম। সবাই এটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিল।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পরেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল, হয়তো এমন মন্তব্য করেই অন্য কোনও কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সব জল্পনায় জল ঢে়লে তৃণমূল জানিয়ে দিয়েছে, নন্দীগ্রামে জয় নিশ্চিত। তাই তাঁর আর অন্য কোনও কেন্দ্রে দাঁড়ানোর প্রশ্ন নেই।