গ্রাফিক: নিরুপম পাল
ইঙ্গিত ছিলই। এ বার ঘোষিত হল দিন ক্ষণ। ১২ থেকে ১৪ মার্চ রাজ্য সফরে আসছেন দিল্লিতে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত কৃষকরা। নন্দীগ্রাম যাবেন তাঁরা। যাবেন সিঙ্গুরেও।
বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রতিককালে নন্দীগ্রাম এমনিতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। এবার তার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। কারণ, সেখানে লড়ছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা এবং অধুনা বিজেপি-র আস্থাভাজন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। কৃষক আন্দোলনের সমর্থক মমতার কাছে তাই ভোটের মুখে এই বিজেপি-বিরোধী কৃষক জমায়েত উপরি পাওনা হতে পারত। কিন্তু সে পথে ‘কাঁটা’ বামশক্তির উপস্থিতি। প্রতিবাদী কৃষকরা ঘোষণা করেছেন, বাংলার কর্মসূচিতে পুরোদমে থাকবে ‘সারা ভারত কিসান সভা’-র উপস্থিতি। থাকবেন নেতা সিপিএম নেতা হান্নান মোল্লাও। ফলে তৃণমূল এই আন্দোলনের ধারেকাছে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। যদিও এখনও স্পষ্ট হয়নি তাদের অবস্থান। রাজ্যের মন্ত্রী ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন শীর্ষনেতৃত্ব। এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’’
সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতাদের ১১মার্চ রাতে রাজ্যে আসার কথা। ১২ মার্চ সাংবাদিক বৈঠক করে দু’দিনের কর্মসূচির সূচনা করার কথা তাঁদের। এর পর বাংলার কৃষকদের হাতে দেশের কৃষকদের তরফে চিঠি তুলে দেবেন তাঁরা। সেদিনই প্রথমে ট্রাক্টর নিয়ে মিছিলের পর দুপুর ৩টে থেকে রামলীলা পার্কে কৃষক-মজুর মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁদের। রাতে রওনা হবেন হলদিয়ার উদ্দেশ্যে। ১৩ মার্চ, অর্থাৎ ১৪ মার্চ ‘নন্দীগ্রাম দিবস’-এর ঠিক আগের দিন কৃষক-মজুর মহাপঞ্চায়েত হবে নন্দীগ্রামে। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের মুখ রাকেশ টিকায়েত, যোগেন্দ্র যাদব, বলবীর সিংহ রাজেওয়াল, রাজারাম সিংহ, দর্শন পাল, জুধবীর সিংহদের হাজির থাকার কথা সেই সভায়। অস্বস্তি বাড়তে পারে সিপিএমেরও। কারণ, নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে কৃষক আন্দোলনের কথা বললেই যে ইতিহাসের কথা মনে পড়ে, তা বাম আমলের এক বিতর্কিত অধ্যায়। নন্দীগ্রামে কৃষক-মজুর মহাপঞ্চায়েতের অর্থ সেই আন্দোলনের স্মৃতি উস্কে দেওয়া। কিন্তু বাম কৃষক সংগঠনের নেতৃত্বের সামনে এই ঘটনা ঘটলে তা ভোটের মুখে বাম শিবিরের ‘অস্বস্তি’ই বাড়াবে।
শুধু নন্দীগ্রাম নয়, কৃষক নেতাদের সিঙ্গুর যাওয়ারও কর্মসূচি রয়েছে। ১৪ মার্চ তাঁদের যাওয়ার কথা সিঙ্গুরে। এ ছাড়াও কলকাতা ও আসানসোলে আলাদা করে কৃষক-মজুর মহাপঞ্চায়েত আয়োজনের ঘোষণা করেছে সংযুক্ত কিসান মোর্চা। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক শক্তির সমর্থনে তাঁরা প্রচার করতে আসছেন না। তাঁরা আসছেন কৃষকদের হয়ে কথা বলতে। সারা ভারতেই কৃষকদের অধিকারের দাবিতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তারই একটি পর্যায় হিসাবে বাংলার কৃষকদের কাছে পৌঁছতে আসছেন কৃষক নেতারা।