চাঁপদানিতে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রচারের উত্তাপ। আর প্রচারের সময় প্রতিপক্ষকে তির্যক আক্রমণ থেকে পিছপা হচ্ছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। এক দিকে যেখানে বিজেপি দাবি করছে ২০০-র বেশি আসন নিয়ে তারা ক্ষমতায় ফিরবে, তখন তৃণমূল দাবি করছে ২৫০-র বেশি আসন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়বে তারা। এ বার প্রচারে গিয়ে আসন নিয়ে সংখ্যাতত্ত্বে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই-এর সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি।
বৃহস্পতিবার হুগলির চাঁপদানিতে তৃণমূল প্রার্থী অরিন্দম গুঁইকে নিয়ে প্রচারে যান কল্যাণ। সেখানে নিজের বক্তব্যে জোড়াসাঁকোর তৃণমূল প্রার্থী বিবেক গুপ্তকে ইডি-র তলব প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। কল্যাণ বলেন, “নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বুঝে গেছে বাংলায় বিজেপি ৫০টি আসনও পেরবে না। তাই সিবিআই, ইডি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমি বলছি এই সব ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ নেই। ২০২৪ সালে মোদী, শাহকে মানুষ সব বুঝিয়ে দেবে।”
বৃহস্পতিবার সকালেই জানা গিয়েছে, এ বারের বিধানসভায় কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছে তৃণমূলের একদা সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড মুকুল রায়কে। সেই প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেন, “মুকুল রায় এতদিন নিজেকে স্ট্যাটেজিস্ট বলে দাবি করেছেন। দেখি বিজেপি-কে তিনি কীভাবে টেনে তুলতে পারেন। খেলা হবে। মুকুলের চেনা মাটিতে খেলা হবে। বিজেপি যাদের কিনেছে তারা সবাই পচা মাল। বাঘ ভেবে বিড়াল নিয়েছে। ২ মে-র পর সব প্রমাণ হয়ে যাবে।”
২০২১ বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র হার যে শুধুমাত্র নিশ্চিত তা-ই নয়, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে মমতার নেতৃত্বেই দিল্লির ক্ষমতা হারাবেন মোদী, এমনটাই দাবি করেছেন কল্যাণ। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১০ বছরে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেশের মধ্যে এক নম্বরে। মমতার নিজের যা ক্ষমতা আছে সেটা দিয়ে বিজেপি-র কী হাল করে দেখুন। সনিয়া গাঁধী, শরদ পাওয়ার, কেজরীবাল সবাই জানেন ২০২৪ সালে মোদীকে দিল্লি থেকে গুজরাত পাঠিয়ে দেবেন মমতা।”
যদিও কল্যাণের এই মন্তব্যের জবাবে বিজেপি-র শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, “কল্যাণ এ ভাবেই দলটাকে ডুবিয়েছে। গত লোকসভায় হুগলিতে ১৮টি বিধানসভাতেই বিজেপি জিতেছে। তৃণমূল কোথায় জিতবে? ইডি, সিবিআই একটু সক্রিয় হলেই ওরা চেঁচামেচি শুরু করে। এই এজেন্সিগুলি তো তথ্য-প্রমাণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই কাজ করে। দোষীরা শাস্তি পাবে।”
মুকুল রায় প্রসঙ্গে কল্যাণের মন্তব্যের বিরোধিতা করে শ্যামল বলেন, “মুকুল রায় স্ট্র্যাটেজির মাস্টার। তাঁর নখের যোগ্যও কেউ নয়। প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে তো তৃণমূলের মধ্যেই বিক্ষোভ হচ্ছে। কল্যাণ, অনুব্রত, মদনের মতো কিছু নেতা এখন তৃণমূল চালাচ্ছে।”
হুগলিতে বিজেপি-র প্রার্থী ঘোষণার পরেই গত রবিবার থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। প্রার্থী বদলের দাবি উঠেছে। সেই প্রসঙ্গে শ্যামল বলেন, “শুভেন্দু, রাজীবের মতো নেতারা বুঝতে পেরেছেন তৃণমূলে থেকে জিততে পারবেন না। তাই তাঁরা বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। অনেকে টিকিট না পেয়ে একটু বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেটা মিটে গিয়েছে। আর বিক্ষোভ দেখতে পাবেন না।”