নওশাদ সিদ্দিকি। — ফাইল চিত্র।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলকে হারানোর পর কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘‘আমায় তৃণমূল কিনতে পারবে না। আমি তৃণমূলকে কিনে নেব।’’ সেই বাইরন বিধায়ক হওয়ার তিন মাসের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উন্নয়নে’ শামিল হয়েছিলেন। ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক তথা অধুনা তৃণমূলের তীব্র সমালোচক নওশাদ সিদ্দিকিকেও কি ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে জোড়াফুল শিবিরে দেখা যাবে? আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে নওশাদ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে অন্ধকার ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখবেন। তবু দলবদল করবেন না। বিজেপি তো নয়ই, তৃণমূলও নয়।
সাক্ষাৎকারে নওশাদ স্পষ্ট জানিয়েছেন, দর্শনগত ভাবে তিনি এবং তাঁর দল বিজেপি-বিরোধী। কিন্তু বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে কখনও তিনি তৃণমূলে যাবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপির বিরোধিতা করার জন্য তৃণমূলের হাত ধরতে হবে? কখনওই না। ওরা তো একে-অপরের পরিপূরক!’’ ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘২০১১ সালে রাজ্যে যখন পরিবর্তন হচ্ছে, তখন আমরা সবে মাধ্যমিক দিয়েছি। সেই সময় বাংলায় বিজেপিকে দেখাই যেত না। ওই দলটাকে রাজ্যে ডেকে এনেছে তো তৃণমূলই।’’ নওশাদের ওই বক্তব্যে কি সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সুর শোনা যাচ্ছে না? হাসলেও সে কথা উড়িয়ে দেননি নওশাদ।
আইএসএফ বিধায়কের কথায়, ‘‘আমার লক্ষ্য তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী রাজনীতি করে লক্ষ্যে পৌঁছনো। তা যদি না পারি, তা হলে মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে যাব। কিন্তু যে মানুষ আমায় ভোট দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আমি বেইমানি করতে পারব না। ও কাজ আমার দ্বারা হবে না।’’
গত ১২-১৩ বছরে বাংলার রাজনীতিতে দলবদল কার্যত স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ এখন চমকিতও হন না। ব্রিগেডের মাঠে যে দিন তৃণমূল অর্জুন সিংহকে টিকিট না দিয়ে পার্থ ভৌমিকের নাম ঘোষণা করল ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে, সে দিন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন অর্জুন ফের পদ্মের টিকিট পাবেন। বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। গত লোকসভায় তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে গিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন অর্জুন। সেই তিনি ২০২২ সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এই লোকসভা ভোটে ফের তিনি বিজেপির প্রার্থী। ২০২১ সালে খাতায়-কলমে বিজেপির টিকিটে জেতা বেশ কয়েক জন বিধায়ককেও তৃণমূল এ বার লোকসভায় টিকিট দিয়েছে। যেমন রায়গঞ্জে কৃষ্ণ কল্যাণী, বনগাঁয় বিশ্বজিৎ দাস, রানাঘাটে মুকুটমণি অধিকারী। ফলে দলবদল এখন সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নওশাদ সেই স্রোতে গা ভাসাবেন না বলেই দাবি করেছেন।