বিধানসভা থেকে বেরিয়ে তাপস রায়। — নিজস্ব চিত্র।
১ তারিখেই দলের সব পদ ছেড়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকেও। বিধানসভায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে এমনটাই জানালেন বরাহনগরের প্রাক্তন বিধায়ক তাপস রায়। সোমবার তিনি বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দেন। স্পিকার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তাপসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বিধানসভা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাপস। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। স্পিকারের সামনে সই করে ইস্তফা দেওয়ার নিয়ম। সে ভাবেই করেছি। ১ তারিখেই আমি দলের সব পদ ছেড়ে দিয়েছি। দলনেত্রী এবং সুব্রত বক্সীকে সে কথা জানিয়েছি।’’
দলের অন্যান্য পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানান তাপস। তাঁর কথায়, ‘‘দলের সমস্ত সরকারি পদ আমি ১ তারিখে ছেড়ে দিয়েছি। উপমুখ্যসচেতক, সাগর দত্ত হাসপাতাল এবং কলেজের সভাপতি পদও ছেড়ে দিয়েছি।’’ উল্লেখ্য, সোমবার বাড়ি থেকে বিধানসভায় তাপস নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি করে গিয়েছেন। উপমুখ্যসচেতকের গাড়ি ব্যবহার করেননি।
তাপসের ইস্তফা নিয়ে বিধানসভার স্পিকার বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে তাপসের পদত্যাগে আমার খারাপ লাগছে। দীর্ঘ দিন ধরে আমি এবং তাপস একসঙ্গে কাজ করেছি। আজ এসে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পদত্যাগপত্র যাচাই করতে নির্দেশ দিয়েছি। মঙ্গলবার ১২টায় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করব। তাপসকেও আসতে বলেছি। তবে উনি পদত্যাগ না করলেই পারতেন।’’
তাপস বলেন, ‘‘রাজনীতি রাজনীতির পথেই হবে। আমি এখন মুক্ত।’’ তাপস তৃণমূলে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করতেই জল্পনা শুরু হয়েছে, তিনি হয়তো বিজেপিতে যোগ দেবেন। আরও সাহসীরা বলছেন, লোকসভা ভোটে কলকাতা উত্তরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাপসকে প্রার্থীও করতে পারে বিজেপি। তাপস নিজে সে সব প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। বলেছেন, ‘‘কোন দলে যোগ দেব, তা জানি না। অন্য দলে যোগদানের বিষয়ে এখন কোনও কথা আমি বলব না।’’
সোমবার সকালে তাপসের ‘মানভঞ্জন’ করতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তার আগে রবিবার তাপসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন আর এক মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তবে দল ছাড়ার সিদ্ধান্তে তাপস অনড় ছিলেন। দলের বিরুদ্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রবীণ নেতা। উঠে এসেছে সন্দেশখালি থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ। তাপস বলেন, ‘‘তৃণমূল আমার জন্য নয়। এখানে কিছু মানুষের জন্য সকলকেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে হচ্ছে। যেখানেই গিয়েছি, দুর্নীতির কথা শুনেছি। সন্দেশখালি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমি বিড়ম্বনায় পড়েছি।’’
তবে সন্দেশখালি বা দলের দুর্নীতি নয়, তাপসের মূল ক্ষোভ অন্য জায়গায়। গত ১২ জানুয়ারি পুর নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্ত করতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল ইডি। সেই থেকে ক্ষুব্ধ তাপস। তাঁর অভিযোগ, তাঁর বাড়িতে ইডির এই অভিযানের নেপথ্যে রয়েছে দলেরই কারও কারও হাত। সর্বোপরি, ইডি অভিযানের পর দল তাঁর পাশে থাকেনি বলে জানান তাপস। যাতে তাঁর হৃদয় ভারাক্রান্ত। দলনেত্রী মমতার নীরবতা নিয়েও অভিমান ঝরে পড়েছে তাপসের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে আমার সততা কারও অজানা নয়। নিজের দলের লোকই যদি আমার বিরুদ্ধে চলে যায়, সেটা দুর্ভাগ্যের। আমার বাড়িতে একটা সাজানো ইডি অভিযান হল, ৫২ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আমি এখনও মমতার ডাক পাইনি। আমার হৃদয়কে এটা ভারাক্রান্ত করেছে।’’ বিধানসভার ভাষণে মমতা সন্দেশখালির শাহজাহান শেখকে নিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাপসের বাড়িতে ইডি অভিযান নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। তাতেও অপমানিত বোধ করেছেন বলে জানান তাপস। এ সবই তৃণমূলে তাঁর ‘মোহভঙ্গ’ করেছে বলে উল্লেখ করেন।