অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁর সংস্থা ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ নিয়ে রাজনীতি থেকে বিচারব্যবস্থার পরিসরে আলোচনা প্রচুর। কিন্তু সেই সংস্থা কী করে? কিসের ব্যবসা তাদের? কোথায় কারখানা? এ সব বিষয়ে এত দিন প্রকাশ্যে কিছু বলেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য তাঁকে সে ভাবে প্রশ্ন করার অবকাশও পাওয়া যায়নি। আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে অভিষেক সেটা খোলসা করেছেন।
তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ জানিয়েছেন ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ তিনি তৈরি করেছিলেন ২০০৯ সালে। গোড়ায় এটি ছিল পার্টনারশিপ ফার্ম। ২০১২ সালে এই সংস্থাটিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি করা হয়েছিল। যার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন অভিষেক। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ জানিয়েছেন, শুরুতে ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ কনসালটেন্সি সার্ভিস, শেয়ার ট্রেডিং, ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করত। এখন কী করে ওই সংস্থা? অভিষেক বলেন, ‘‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস মিনারেল ওয়াটার উৎপাদন করে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাখরাহাটে সেই জল প্যাকেজিংয়ের কারখানা রয়েছে। যে কারখানার জমি কেনা হয়েছিল ২০০১-২০০২ সালে।’’ অভিষেক এ-ও বলেন, ‘‘যে সময়ে বাখরাহাটের ওই জমি কেনা হয়েছিল, সেই সময়ে রাজ্যে ভরা বাম জমানা। আমার তখন বয়স ১৩ বছর।’’ অর্থাৎ, অভিষেক বোঝাতে চেয়েছেন, যে সময়ে জমি কেনা হয়েছিল, সেই সময়ে তিনি রাজনীতিতেও ছিলেন না, তৃণমূলও ক্ষমতায় ছিল না। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’র বক্তব্য, ২০১৪ সালে তিনি লোকসভা ভোটে যখন দাঁড়ান, তখন তিনি ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ডিরেক্টর পদ থেকে ইস্তফা দেন। নইলে ‘স্বার্থের সংঘাত’ হওয়ার সম্ভবনা ছিল। সেই থেকে তাঁর বাবা, মা এবং স্ত্রী ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। তবে অভিষেক এখনও এই সংস্থার সিইও পদে আসীন রয়েছেন।
ঘটনাচক্রে, এই সংস্থার নাম জড়িয়েছে শিক্ষা দুর্নীতি মামলাতেও। এই সংস্থারই কর্মী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। যাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা নিয়ে কার্যত মেগা ধারাবাহিক চলেছে। আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারে অভিষেক বলেন, ‘‘গরু পাচার মামলা, কয়লা পাচার মামলাতেও বলা হয়েছিল লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের মাধ্যমে দুর্নীতি হয়েছে। এখন এসএসসি মামলাতেও বলা হচ্ছে!’’ অভিষেকের বক্তব্য, এর আগে যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এক পয়সারও দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। কয়লা মামলায় অভিষেকের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এসএসসি মামলার তদন্ত সূত্রে অভিষেকের স্ত্রী, মা, বাবা এবং তাঁকে নোটিস পাঠিয়েছিল ইডি।
সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর সংগ্রহ নিয়ে টানটান নাটক দেখেছে বাংলা তথা দেশ। সেই প্রসঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই অভিষেক বলেন, ‘‘সুজয়কৃষ্ণ যাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে বলা হচ্ছে, তিনি কিন্তু বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! তাঁকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কিছু করছে না।’’ তবে তিনি কে, তাঁর নাম অভিষেক উল্লেখ করেননি। প্রকারান্তরে বলেছেন, ‘‘পারলে আমাকে গ্রেফতার করুক না! কোথাও একটা সামান্য কাগজও দেখাতে পারবে যে, আমি কোনও সুপারিশ করেছি? কাউকে চিঠি লিখেছি?’’ সেই সূত্রেই আরও এক বার অভিষেক দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এক পয়সারও দুর্নীতি কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না। যা হচ্ছে, তার সবটাই রাজনৈতিক কারণে করা হচ্ছে।