অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি মনে করেন সব পেশার মতো রাজনীতিতে ও অবসরের বয়স নির্দিষ্ট থাকা উচিত। সেই বয়স কখনওই ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নয়। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কথিত বয়সবিধি নিয়ে শাসকদলের মধ্যে মন্থনও রয়েছে। কিন্তু আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে অভিষেক শুধু তাঁর বয়সনীতিতে অনড় থাকলেন তা-ই নয়, পাশাপাশি এ-ও জানিয়ে দিলেন যে, তিনি কত বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন।
অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর ৬০ বছর বয়স হওয়ার আগেই তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাবেন। অর্থাৎ, তিনি ৬৫ বছরকে বয়সকে অবসরের ঊর্ধ্বসীমা হিসাবে বললেও তার অনেক আগেই নিজে রাজনীতি থেকে সরে যাবেন। ৬০ বছরের বেশি তিনি রাজনীতি করবেন না। সে সময় এখন থেকে ৫, ১০ বা ১২ বছর পরেও আসতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আনন্দবাজার অনলাইনে অন রেকর্ড জানিয়ে দিলাম, ৬০ বছরের বেশি আমি রাজনীতি করব না।’’ এ ব্যাপারে তাঁর পুরনো যুক্তির সঙ্গেই নতুন উপমা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘বয়স বাড়লে কর্মক্ষমতা কমে। সেটা সিনেমা, খেলার মতো রাজনীতিতেও প্রযোজ্য।’’ সেই প্রসঙ্গেই ব্যতিক্রমের কথাও বলেছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। সেই ব্যতিক্রমের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, বয়সের তুলনায় পরিশ্রমের কথা বলতে গিয়ে মমতার সঙ্গে একই বন্ধনীতে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামও। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’র কথায়, ‘‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমি কিন্তু বয়ঃসীমার কথা বলতে গিয়ে এটা বলতে চাইনি যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে হবে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যতিক্রম। সব জায়গায় ব্যতিক্রম থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও যে কোনও তরুণের মতোই পরিশ্রম করেন। রাজনীতিতে আমার বিপক্ষ হলেও প্রধানমন্ত্রী ৭৩ বছর বয়সেও ১২-১৩ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন। ৮০ বছর বয়সে অমিতাভ বচ্চন এখনও কাজ করছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ৪০ পেরোলেও আইপিএল খেলছেন এবং জিতছেনও।’’
তবে পাল্টা প্রশ্নের জবাবে অভিষেক এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি এখনও নিজেকে সেই ‘ব্যতিক্রমী’দের তালিকায় রাখছেন না। অভিষেকের যুক্তি, তিনি এখন তাঁর ৩৬ বছর বয়সে দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে পারছেন। কিন্তু যখন তাঁর ৪৮ হবে, তখন সেটা কমে ১০ ঘণ্টা হবে। হতে বাধ্য। নিজের ‘নবজোয়ার যাত্রা’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অভিষেক আরও বলেছেন, ‘‘৩৬ বছর বয়স বলে আমি টানা ৬০ দিন রাস্তায় ছিলাম। থাকতে পেরেছি। আমার বয়স যদি এখন ৬৬ হত, তা হলে সেটা আমি পারতাম না।’’ কেন তিনি ‘ব্যতিক্রম’ হতে চান না, তা-ও বলেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে তো নিজেকে উদাহরণ হতে হবে! আমি দলে যে নীতি চালু করার চেষ্টা করছি, নিজে সেই নীতি মানব না, তা কী করে হবে?’’ অভিষেকের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘কেউ যদি ভাবেন দেহত্যাগ না করলে পদত্যাগ করবেন না, তা হলে সেই দলকে বানপ্রস্থে চলে যেতে হবে।’’
বস্তুত, গত কয়েক মাস ধরেই তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। অভিষেক ২০২১ সালের ভোটের পরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হওয়ার পরেই রাজনীতিতে অবসরের বয়ঃসীমার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন। তার পরে মাঝেমধ্যেই বিষয়টি মতদ্বৈততার মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে। দলে নবীন এবং প্রবীণদের মতের বিভাজনও হয়েছে। এক দিকে মমতা স্বয়ং বলেছেন, ‘‘মনের বয়সটা আসল।’’ যা উদ্ধৃত করে কিছুটা ‘আশ্বস্ত’ হয়েছেন সৌগত রায়ের মতো প্রবীণেরা। অন্য দিকে, পাল্টা মত প্রকাশ্যেই পোষণ করেছেন কুণাল ঘোষের মতো নেতারা। যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঠোকাঠুকি লেগেছে। অভিষেকের বক্তব্য, নতুনদের জায়গা করে দিতেই একটা বয়সের পর রাজনীতিতে অবসর নেওয়া উচিত। নচেৎ নতুন জায়গা তৈরি হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘আসন পুনর্বিন্যাস না-হলে তো বিধানসভা বা লোকসভার আসন বাড়বে না! ফলে পুরনোরা জায়গা না-ছাড়লে নতুনেরা জায়গা পাবেন কী করে?’’ কিন্তু পাশাপাশিই তৃণমূলের সেনাপতির কথায় স্পষ্ট যে, মমতার মতো ‘ব্যতিক্রম’-কেও মান্যতা দিতে হবে।