(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধী। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দলের কোনও জোট হবে না। ৪২টি আসনে তৃণমূল একাই লড়বে। আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়ে দিলেন, বাংলায় জোট হচ্ছে না। কংগ্রেসকে বিঁধতে বাংলা প্রবাদ আওড়ে অভিষেক বলেছেন, ‘‘অতি চালাকের গলায় দড়ি!’’
অভিষেকের কথায়, ‘‘গত বছর জুলাই মাসে যখন পটনাসাহিবে বিরোধী দলগুলোর বৈঠক হয়েছিল, তখনই তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব আসন সমঝোতা করে ফেলতে হবে। কিন্তু কংগ্রেস তখন এ নিয়ে ভাবেনি। কংগ্রেস তখন পাঁচ রাজ্যের ভোট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ভেবেছিল, তিনটেয় জিতলে আসনরফার দর কষাকষিতে এগিয়ে থাকবে। অতি চালাকের গলায় দড়ি! যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।’’
গত বছর অগস্ট মাসের শেষে এক দিন কাকভোরে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল, লোকসভা ভোটে সার্বিক ‘ইন্ডিয়া’র সূতিরেই বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। পটনাসাহিবে প্রথম বৈঠক হয়েছিল (তখনও বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হয়নি) বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনে। এখন সেই নীতীশ নতুন করে বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। একই ভাবে যে পরিকল্পনা নিয়ে দিল্লিতে কাকপক্ষী ওঠার আগে রাহুল-অভিষেকের বৈঠক হয়েছিল, তা কার্যকর হয়নি। বাংলায় জোট সম্ভাবনায় জল পড়ে গিয়েছে। তবে একই সঙ্গে অভিষেক বলেছেন, তাঁরা কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে গোটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে ‘ইন্ডিয়া’-র শরিক।
কেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট শেষ পর্যন্ত হল না? অভিষেক স্পষ্ট বলেন, ‘‘তৃণমূলের একটাই নীতি— বিজেপিকে হারানো। আর কংগ্রেস দুটো নীতি নিয়ে চলছে। সারা দেশে বিজেপিকে হারানো, বাংলায় তৃণমূলকে হারানো।’’ বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ভেস্তে যাওয়ার নেপথ্যে রাজ্যের শাসকদল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকেই এক এবং একমাত্র ‘কারণ’ বলে উল্লেখ করেছে। অভিষেকও তাঁর সাক্ষাৎকারে অধীরকেই নিশানা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে দিন আমি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছি, সে দিন অধীর চৌধুরী সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন। রাহুল বলছেন, মমতা ‘ইন্ডিয়া’র গুরুত্বপূর্ণ শরিক। আর অধীর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলছেন, ক্ষমতা থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহরমপুরে এসে দাঁড়ান।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘অধীর মমতাকে চ্যালেঞ্জ করছেন! কই তিনি তো বলছেন না বহরমপুরে এসে নরেন্দ্র মোদী, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী বা দিলীপ ঘোষ দাঁড়ান।’’
তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতাকে উদ্ধৃত করে অভিষেকও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বাংলায় ৪২টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থী দেবে। পাশাপাশিই, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃণমূলের কোনও মুখপাত্র কংগ্রেস সম্পর্কে একটিও সমালোচনাসূচক মন্তব্য করেননি। তৃণমূলের মুখপত্রেও কংগ্রেস সম্পর্কে একটিও কটু মন্তব্য করা হয়নি। উল্টো দিকে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা তৃণমূল তথা দলের সর্বময় নেত্রীকে আক্রমণ করে গিয়েছেন ধারাবাহিক ভাবে। গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া’ বৈঠকে তৃণমূল স্পষ্টই বলে এসেছিল, আসন সমঝোতা ২০২৩ সাল থাকতে থাকতেই তা চূড়ান্ত করতে হবে। কংগ্রেসের তরফে কোনও উদ্যোগ না-দেখে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। সেই সময়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা কেসি বেণুগোপাল, জয়রাম রমেশরা অবশ্য বলেছিলেন, ‘সব হয়ে যাবে’। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
সময় যত এগিয়েছে তত তৃণমূলও কংগ্রেস সম্পর্কে তিক্ত মনোভাব প্রকাশ করেছে। রাহুলে ‘ন্যায় যাত্রা’র সময়ে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বিভিন্ন জনপদে মমতার পদযাত্রাকে অনেকেই ‘পাল্টা’ হিসাবে দেখাতে চেয়েছিলেন। শেষমেশ গত ২ ফেব্রুয়ারি রেড রোডের ধর্নামঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘সারা দেশে কংগ্রেস ৪০টা আসন পাবে কিনা তা-ই জানি না!’’ দিদির সে কথা হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে সংসদে বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সেই আবহেই অভিষেক বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, জোটের ব্যাপারে তৃণমূল যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস তাতে সাড়া দেয়নি।